রাজেকুজ্জামান রতন
আইএলও প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপরই ১৯১৯ সালে। সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা বা ফিলাডেলফিয়া ঘোষণা হয় ১৯৪৮ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই। এখন পর্যন্ত শ্রমিকের অধিকার বিষয়ে আন্তর্জাতিক মানদÐ হিসেবে এই দুইটি বিষয়কেই বিবেচনা করা হয়। অধিকারের কথা উঠলেই তা এই মানদÐে বিচার করা হয়ে থাকে। ১৯১৯ সালের আইএলও প্রতিষ্ঠার পর ২৯ অক্টোবর ১৯১৯ ঘোষণা করা হয় কর্মঘণ্টা বিষয়ক কনভেনশন। দিনে ৮ ঘণ্টা এবং সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা ঐড়ঁৎং ড়ভ ড়িৎশ বলে বিবেচিত হবে। এর পর আসে দ্বিতীয় কনভেনশন, যা বেকারত্ব বিষয়ক কনভেনশন বা টহবসঢ়ষড়ুসবহঃ পড়হাবহঃরড়হ ১৯১৯ যেখানে বেকারত্ব প্রতিরোধ করার দায়িত্বের কথা বলা আছে। তৃতীয় কনভেনশন ছিল মাতৃত্ব সুরক্ষা বিষয়ক কনভেনশন গধঃবৎহরঃু চৎড়ঃবপঃরড়হ ঈড়হাবহংড়হ ১৯১৯.
চতুর্থ কনভেনশন ছিলো নারীদের রাত্রিকালীন কাজ বিষয়ক ঘরমযঃ ডড়ৎশ( ড়িসহি) ঈড়হাবহঃরড়হ ১৯১৯. পঞ্চম কনভেনশন ছিলো কাজের সর্বনি¤œ বয়স সংক্রান্ত কনভেনশন গরহরসঁস অমব ( ওহফঁংঃৎু) ঈড়হাবহঃরড়হ ১৯১৯. যেখানে উল্লেখ করা হয়েছিলো ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে কাজে নিয়োগ করা যাবে না। এরকম কনভেনশনগুলো যখন একের পর এক গৃহীত হচ্ছিলো তখন যে নীতিমালা অনুসরণ করা হত তাকে বলা হয় চৎরহপরঢ়ষবং ড়ভ ঝড়পরধষ ঔঁংঃরপব. ডযরপয রহপষঁফবং ৃ চৎড়ঃবপঃরড়হ ড়ভ ঃযব রহঃবৎবংঃ ড়ভ ড়িৎশবৎং যিবহ বসঢ়ষড়ুবফ রহ পড়ঁহঃৎরবং ড়ঃযবৎ ঃযধহ ঃযবরৎ ড়হি.
এরপর ফিলাডেলফিয়া ডিক্লারেসন এ বলা হয়, খধনড়ঁৎ রং হড়ঃ ধ ঈড়সসড়ফরঃু. এসব কথা বলার উদ্দেশ্য হলো এই যে, বিশ্ব কত এগিয়েছে। কিন্তু শ্রমিকের অধিকার বা প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে এখনো কতো পিছিয়ে। আদম ব্যবসা বা ম্যান পাওয়ার বিজনেস কথা তো বহুল প্রচলিত। নিজের দেশের শ্রমিকদের অধিকারই দিতে চায় না, আবার প্রবাসী শ্রমিকের অধিকার? আর একটা কথা লিখলেই হয়তো অনেকেই ঝাঁপিয়ে পড়বেন আমার উপর। যদি বলি শ্রমিকদের স্বার্থে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কনভেনশনগুলো হয়েছিলো সেই সময়ে যখন সমাজতান্ত্রিক দেশগুলো একটা শক্তি হিসেবে আবিভর্‚ত হয়েছিলো।
সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর বিপর্যয়ের পর শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা আর মজুরির ওপর আক্রমণ নেমে আসে ব্যাপকভাবে। কারণ কর্মঘণ্টা বাড়িয়ে, যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে, বেকারত্ব বাড়িয়ে, চাকরির নিশ্চয়তা কমিয়ে, মজুরি কমিয়েই মুনাফা বাড়ানো সম্ভব। তাই গোটা বিশে^ পুঁজি, প্রযুক্তি আর মালিকদের প্রতিপত্তি যত বাড়ছে শ্রমিকদের অধিকার ততো কমছে। কিন্তু অভাব সবচেয়ে বড় আক্রমণ নিয়ে আসে মানুষের জীবনে। এর হাত থেকে বাঁচতে বা একটু উন্নত জীবনের আকাক্সক্ষায় শ্রমজীবীরা ছুটছে এক দেশ থেকে আরেক দেশে। তারা তো কাজের জন্যেই যায়। কিন্তু পায় না ন্যায্য মজুরি, মর্যাদা ও নিরাপত্তা। এর সর্বগ্রাসী আক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে শ্রমিকদের সচেতন ও সংগঠিত হওয়ার কোনো বিকল্প কী আছে?
লেখক: শ্রমিকনেতা ও রাজনীতিবিদ