![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
আজকে দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার একটা বড় কারণ কি টাকা পাচার নয়?
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/uploads/2023/07/Shariful-Hasan-1.jpg)
শরিফুল হাসান
সরকারি চাকরি করে দুর্নীতি, অনিয়ম, লুটপাট, ক্ষমতার অপব্যাবহার সহ যতো ধরনের অন্যায় আছে সব করেও একজন পার পেয়ে যেতে পারেন, কিন্তু কেউ যদি কোনোভাবে দুর্নীতি, লুটপাটের বিরুদ্ধে যাওয়ার চেষ্টা করে রেহাই নেই। দুর্নীতির এই সিস্টেমের বিরুদ্ধে গেলে তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। এর সর্বশেষ উদাহরণ কর্মপরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের সদ্য সাবেক পরিচালক ও উপ সচিব মোহাম্মদ মাহিদুর রহমান। তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
কিন্তু মাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? কেন মাহিদুরকে বরখাস্ত করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলা হয়নি আদেশে। তবে গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বিদ্যুৎখাত নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মাহিদুর রহমান। ওই মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নকে ‘লুটেরা মডেল’ অভিহিত করে খাতটি ভারত ও চীনের ব্যবসায়ীদের জন্য অবাধ ক্ষেত্র উল্লেখ করে খাতের বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বর্ধনকারী উদ্যোগের সমালোচনাও ছিল। এ কারণেই তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে মাহিদুর রহমানের দাবি, বিদ্যুৎ খাত-সংক্রান্ত মূল্যায়ন প্রতিবেদনের অংশবিশেষে একটি পত্রিকার কলাম লেখকের লেখার অংশ ভুলক্রমে রয়ে গেছে। অসাবধানতাবশত সে অংশটি আইএমইডির ওয়েবসাইটে প্রকাশ হয়। পরে সেটি সংশোধন করা হয়েছে।
আচ্ছা, বিদ্যুৎ খাত নিয়ে মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরির কারণে কী একজন সরকারি কর্মকর্তাকে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা যায়? নাকি উচিত? শুধু মাহিদুর নয়, এ কাজে যুক্ত আইএমইডির সেক্টর-১-এর মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব এস এম হামিদুল হককেও ওএসডি করা হয়েছে। এরপরই তাদের আইএমইডি থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত করে আদেশ জারি করা হয়েছে।
আচ্ছা, বিদ্যুৎ খাতে গত ১৫ বছরে কোনো দুর্নীতি লুটপাট কী হয়নি? বিদ্যুৎ খাতের ব্যবসায়ীরা কি বিদেশে বড় বড় হোটেল করেনি? কী করে তারা সেখানে টাকা নিয়ে গেলো? আচ্ছা, বিদ্যুৎ খাতের অনিয়ম লুটপাটের কারণে একজন মানুষেরও কি শাস্তি হয়েছে? যদি তা না হয় তাহলে একটা মডেলকে লুটেরা মডেল বলার কারণে কেন একজনের চাকরি যাবে? রাষ্ট্রের তো উচিত ছিলো এই মডেলটা খতিয়ে দেখা। এজন্যই বলি এই রাষ্ট্রে দুর্নীতি, লুটপাট করলে সমস্যা নেই, কিন্তু দুর্নীতি লুটপাটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলেই সমস্যা।
আজকে দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার একটা বড় কারণ কি টাকা পাচার নয়? আফসোস, দেশ থেকে হাজার কোটি টাকা পাচার হয়, সবাই যেখানে স্রোতে গা ভাসান, সেখানে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেন সাহসের সঙ্গে, বিনিময়ে কখনো জোটে তিরস্কার কখনো বহিষ্কার, আবার কখনো পদোন্নতি বঞ্চিত হতে হয়।
এসবের মধ্য দিয়ে আসলে কী বার্তা যায়? এভাবে চললে ভবিষ্যতে কোন পথে যাবে বাংলাদেশ? রাষ্ট্র ও নীতি নির্ধারকদের কাছে অনুরোধ, অসৎ দুর্নীতিবাজদের পুরষ্কৃত না করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন আর সৎ ও যোগ্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পুরস্কৃত করুন। মূল্যায়ন করুন। তাদের কাজের সুযোগ দিন। কারণ ভালো কাজের মূল্যায়ন না হলে ভবিষ্যতে ভালো কাজ করার আগ্রহ হারাতে পারেন অনেকে। আর তখন প্রশ্নও তখন উঠবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াটাই কি অন্যায়! লেখক : কলামিস্ট
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)