টানা দর পতনের বৃত্তে শেয়ারবাজার
মাসুদ মিয়া: দেশের শেয়ারবাজার টানা দরপতনের বৃত্তে আটকা পড়েছে। গতকাল সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস মঙ্গলবারও দর পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এই নিয়ে টানা চার কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে দর পতন অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শেয়ারবাজারের সব সূচক কমেছে। লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে যে পরিমান কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে তার চেয়ে আড়াই গুণ বেশি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। তবে টাকার পরিমাণে লেনদেন আগের কার্যদিবস থেকে সামান্য বেড়েছে।
এবীষয়ে শেয়ারবাজার বীশ্লেষক বলেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে পাশাপশি ডিএসইর মোবাইল অ্যাপসের মাসিক চার্জ নির্ধারণ কারনে বীনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ডিএসইর উচিত তাদের ব্যবসার বৃদ্ধির জন্য অনলাইনে লেনদেনের উপর গুরুত্ব দেওয়া। তারা যত বেশি অনলাইনের লেনদেনের ওপর গুরুত্ব দিবে তত ব্রোকারেজ হাউজে এসে বসে থেকে বীনিয়োগকারীদের লেনদেনের যে প্রবণতা সেটা কমে আসবে। এতে একদিকে ব্রোকারেজ হাউজের খরচ কমবে, হাউজগুলোতে মুনাফাও বাড়বে। পরিস্থিতি বীবেচনায় নিয়ে এই মন্দা বাজারে মোবাইল অ্যাপসের উপর চার্জ না বাড়িয়ে সমস্যাগুলো দূর করা উচিত।
এবীষয়ে বীনিয়োগকারী বাচ্চু বলেন, টানা দর পতনের কারনে পুঁজি হারানোর ভয়ে আবারও দিশেহারা শেয়ারবাজারের বীনিয়োগকারীরা। মোবাইল অ্যাপসের মাসিক চার্জ নির্ধারণ কারনে বীনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বাচ্চু বলেন, আমরা বীনিয়োগকারীরা মন্দা বাজারে চার্জ না বাড়ানোর দাবী জানাচ্ছি। গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ বীমা কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। প্রথম আধা ঘণ্টার লেনদেনে তালিকাভুক্ত ৫৭টি বীমা কোম্পানির মধ্যে ৪৮টির শেয়ার দাম বাড়ে। এর মধ্যে একটির দাম বেড়ে দিনের সর্বোচ্চ সীমায় চলে যায়। এছাড়া আরও বেশকয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি চলে আসে। লেনদেনের শুরুর দিকে বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এমন দাপট দেখানোর কারণে মূল্যসূচকেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। প্রথম আধা ঘণ্টার লেনদেনে ডিএসইর প্রধান সূচক ১৪ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
তবে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন শেষ হতেই বদলে যেতে থাকে চিত্র। দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক বীমা কোম্পানির শেয়ার দাম কমার তালিকায় নাম লেখায়। বীমা কোম্পানিগুলো দরপতনের প্রভাব গিয়ে পড়ে মূল্যসূচকেও। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের বড় উত্থান দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত পতন হয়। যেন বীমা কোম্পানিগুলো পথ হারালোর ফলে শেয়ারবাজারও পথ হারিয়ে ফেলে। সবমিলে দিনের লেনদেন শেষে বীমা খাতের ১৫টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বীপরীতে দাম কমেছে ৩১টির। আর সব খাত মিলে ডিএসইতে ৪৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বেড়েছে। বীপরীতে দাম কমেছে ১২১টির এবং ১৮৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৬ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩৩১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৭৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৬২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬৬০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬৩৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ২৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে সি পার্ল বীচ রিসোর্টের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩০ কোটি ২৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফু-ওয়াং ফুডের ২৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২১ কোটি ৬৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে আরডি ফুড।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, জেমিনি সি ফুড, লিগাসি ফুটওয়্যার, লুব-রেফ বাংলাদেশ, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ এবং এডিএন টেলিকম।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বীক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪১টির দাম বেড়েছে। বীপরীতে দাম কমেছে ৭৩টির এবং ৭৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।