ডিগনিটি অব লেবার- প্রতিটি কাজের মূল্য আছে
বিপ্লব পাল
যেকোনো সমাজে/রাষ্ট্রের রাজনৈতিক চিন্তায় ডান, বাম, সমাজতান্ত্রিক, ক্যাপিটালিস্টÑ সব ধরনের চিন্তা থাকে। আমেরিকাতেও আছে। কিন্তু এখানেও রিপাবলিকান [যারা
এক্সট্রিম ক্যাপ্টালিস্ট] এবং ডেমোক্রাটরা [সফট লেফট] কয়েকটা ব্যাপারে। কিন্তু একমত, যা বাঙালি এবং ভারতে এখনো এলো না। এগুলো সবার আগে আসার দরকারÑ
[১] ডিগনিটি অব লেবারÑ প্রতিটি কাজের মূল্য আছে। ডাক্তার থেকে মেথর, ইলেক্ট্রিশিয়ান থেকে কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট, বিজ্ঞানী থেকে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক সবাইকেই দরকার সমাজের কাছে। কেউ ছোট। কেউ বড় না। প্রতিটি কাজ, প্রতিটি পেশা সমান সম্মান দাবি করে। [২] ডিগনিটি অব লেবারের জন্যÑ স্কুল থেকেই থেকেই বাচ্চাদের নানান পেশার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। যেমন রাজমিস্ত্রির কাজ, বেচার কাজ [সেলস] রেস্টুরেন্টে ওয়েটারে কাজ। এগুলো বাচ্চারা করেÑযাতে সমস্ত কাজের প্রতি, সমস্ত পেশার প্রতি সম্মান গড়ে ওঠে। ভারতে/বাংলায় এটা সাংঘাতিকভাবে অনুপস্থিত। বাম, ডান, মধ্যম কেউ এইটি বাচ্চাদের মধ্যে এনকারেজ করে না।
[৩] সবাই বোঝেÑ সেলফ লার্নিং হচ্ছেÑএকমাত্র শেখা। সবাই এটাও মানে শিক্ষার সঙ্গে জীবনের যোগ থাকার দরকার। অঙ্কের বিজ্ঞান ইতিহাস যা পড়ানো হয়। তা যেন প্রতিদিনের দৈনন্দিন কাজের/অভিজ্ঞতার সঙ্গে তারা মেলাতে পারে। মানুষ বই থেকে শেখে, শিক্ষকের কাছ থেকে শেখে, ভিডিও থেকে শেখে, কাজ করতে করতে শেখে। সব ধরনের শিক্ষার উপযোগিতা আছে। এগুলো নিয়ে এখানে বিরোধ নেই।
[৪] স্কিল বনাম শিক্ষাÑ এই ক্ষেত্রে এখানে সবাই একমত। স্কিল শিক্ষার জন্য টেকনিক্যাল স্কুল। উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়। ওবামা বা ট্রাম্প-সবাই কিন্তু শিক্ষার বাজেট স্কিল শিক্ষার জন্য বাড়িয়েছিলেন। কারণ ওখানেই লোকজন চাকরি পাবে। পদ্ধতি আলাদা ছিল। ওবামার শিক্ষানীতিতে আমাদের পাড়ার কলেজ প্রচুর টাকা পেয়েছিলোÑ লোকাল স্কিল বাড়াতে। টাকা কিন্তু ইংরেজি ইতিহাস, ভ‚গোল পড়াতে আসেনি। বরং সরকারি টাকা কলেজে এসেছিল আইটি স্কিল, অফিস স্কিল বাড়াতে-সেই খাতে শিক্ষক নিয়োগ করতে। শুধু তাই নাÑ আমাদের মতন যাদের আইটির বিজনেস আছে, তাদের কাছে ইন্টার্ন করার জন্য সরকার ছাত্রছাত্রীদের টাকা দিত। ওবামাদের বাম সমর্থক প্রচুর। তারাই এইসব নীতি বানিয়েছিল। তাদের কেউ বলেনি কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান আর্টস কমার্স বাদ দিয়ে, স্কিল শেখানোর জন্য বাজেট দেওয়া হচ্ছে। কারণ সবাই জানে, স্কিল ছাড়া কেউ চাকরি পাবে না, অর্থনীতি চলবে না।
লোকে করে খেতে পাবে না। আবার রিপাবলিকানরা এই মডেল রেখে দিয়েছে। তাদের স্থানীয় বিজনেস। তাদেরও স্কিল্ড লোক দরকার। এসব ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দল-সবাই একমত। কারণ এতে লাভ সবার। এসব রাজনৈতিক পয়েন্টে কোনো রাজনৈতিক বিরোধ থাকা সম্ভব না। কারণ এগুলোতে সমাজের সব শ্রেণির ভালো। আমি খুব অবাক হই, যখন দেখি ভারতে/বাংলায়-এই ১-৪ ইস্যুতেও বিতর্ক হচ্ছে। এর কারণ আমাদের যে ‘বিদ্যান সমাজ’ তারাও ওই মুখস্থ বিদ্যার প্রোডাক্টা। এখানে যারা বাম-তাদের ও নিজস্ব চিন্তা নেইÑ রাজনীতির জ্ঞান ও নোট মুখস্থ করা। যারা ডান-তারাও মুখস্থ করার দলে। ফলে যেসব ব্যাপারে আমরা অনায়াসে একমত হতে পারি-কমন সেন্সের ওপর ভিত্তি করে- সেই কমন সেন্স, সাধারণ সেন্স ব্যাপারটাই জাতির বিদ্বান সেকশনের মধ্যে থেকে উড়ে গেছে। কমন সেন্স বাংলায় একমাত্র পাবেন, মাঠে ঘাটে কাজ করা লোকেদের মধ্যে। একটা জাতির শিক্ষিত সেকশনটা কীভাবে এতো অন্ধকার মূর্খতায় ডুবে গেলোÑ সেটা বড়ই চিন্তার ব্যাপার। আমার ধারণা মূল কারণ ওই ৩ নম্বর পয়েন্টটা- শিক্ষাটা জীবনের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। ফেসবুক থেকে সম্পাদক।