সুদহার বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ
ড. মো. আইনুল ইসলাম
বিশ্বের কোনো দেশে একটি পরিবারের হাতে সাতটি ব্যাংকের মালিকানা থাকতে দেখা যায় না। কিন্তু বাংলাদেশে তা আছে। এসব ব্যাংকের মালিকানার উৎস মূলত ব্যাংকের ঋণ। ঋণের টাকায় ব্যাংক কিনে, আবার সেই ব্যাংকের ঋণ দিয়ে নয়-ছয় করার রেওয়াজ শুধু বাংলাদেশেই দেখা যায়। আর এ কারণেই বলা হয়, আমাদের দেশে অর্থনীতির তত্ত¡কথা প্রয়োগ করে মূল্যস্ফীতি অথবা অন্য কোনো সংকট সহজে মোকাবিলা করা যাবে না। অর্থনীতির এই দুর্দিনে আমাদের বিজ্ঞ নীতিনির্ধারকরা নিশ্চয়ই বোঝেন যে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার অবশ্যই বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল
বাংলাদেশ ব্যাংক স¤প্রতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। যেখানে বাজারে টাকার সরবরাহ কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সুদের হারের ওপর থেকে বহুলকথিত নয়-ছয়ের সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী সুদহার নির্ধারণে বেশিরভাগ ব্যাংকই যতটা সম্ভব সর্বোচ্চ সীমাকেই বেছে নিয়েছে। এখন গ্রাহকভেদে ঋণের সুদহার বছরে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ইতোমধ্যে নতুন সুদহার আরোপ করে বাড়তি কিস্তিও কাটা শুরু হয়েছে। ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ বাড়ালেও আমানতের ক্ষেত্রে সুদহার সেভাবে বাড়ায়নি। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন সুদের হার বৃদ্ধি দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হতে পারে, যদি আনুষঙ্গিক আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়। তানা হলে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সংকট মূল্যস্ফীতিকে বাগে আনা যাবে না।
তারা বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরকারের ব্যাংক খাত থেকে বেশি বেশি ঋণ গ্রহণের প্রবণতাকে অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন। অন্যদিকে ব্যাংক মালিকেরা মনে করছেন সুদহার বাড়ানোয় ঋণের চাহিদা কমবে, যা মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়ক হবে। তারা বলছেন, ব্যক্তি পর্যায়ের ঋণগ্রহীতারা চাপে পড়লেও বর্তমান বাস্তবতায় কিছু করার নেই। তবে ঋণ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনাকারী ব্যবসায়ী শ্রেণি সদ্যঘোষিত সুদহার বৃদ্ধিকে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা উল্লেখ করে বলেছেন, এতে করে ব্যবসা পরিচালনা কষ্টকর হবে এবং বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমে যাবে।
বিশ্ব অর্থনীতির অস্থিরতাপূর্ণ বর্তমান সময়ে মুদ্রানীতি, সুদহার, ট্রেজারি বিল, রেপো রেট, রিভার্স রেপো রেট প্রভৃতি শব্দের কথা ঘন ঘন শোনা যাচ্ছে। এসবের অর্থ, ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য অর্থনীতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংশ্লিষ্ট মানুষজনই কেবল বোঝেন। সাধারণ দৃষ্টিতে বলা যায়, উল্লিখিত শব্দরাজি এখন সামনে চলে এসেছে মূলত বাজারে টাকার প্রবাহ কমাতে, যাতে ব্যাংকগুলো বেশি সুদের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কম টাকা ধার করে। আরও সহজ করে বলা যায়, ঋণ হিসেবে নেওয়া সস্তা টাকাকে ব্যয়বহুল করে তোলাই সা¤প্রতিক সময়ের বহুল উচ্চারিত সুদহার বৃদ্ধির মূল উদ্দেশ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের আশা, টাকার প্রবাহ কমলে আমদানিসহ অন্যান্য খাতে চাহিদাও কমবে। এতে করে ডলারের দামে অস্থিতিশীলতা ও তীব্র মূল্যস্ফীতির ধারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। অর্থনীতির তত্ত¡ অনুসারে যদি টাকা ধার করা বা ঋণের ব্যালেন্স বহন করা বেশি ব্যয়বহুল হয় তাহলে ভোক্তারা খরচ করবে কম।
অর্থাৎ যখন ভোক্তার খরচ করার শক্তি কমে যাবে, তখন চাহিদাও কমে যাবে যা শেষ পর্যন্ত দৈনন্দিন জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেবে। তবে অর্থনীতির এই তত্ত¡ মেনে সুদহার বাড়ালেই যে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে কিংবা ডলারের দামে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে সেটি বিশ্বাস না করাই ভালো। কারণ, অর্থনীতিশাস্ত্রের প্রথাগত অনেক তত্ত¡ ও সমাধান বাংলাদেশের অর্থব্যবস্থায় কাজ করে না। এখানে ব্যাংক ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা, মূল্যবোধহীন ব্যবসায়ীদের কারসাজি ও ধনিক শ্রেণি তোষণ করা নীতিপরিকল্পনায় সৃষ্টি হওয়া অর্থনৈতিক দুর্দশা ও মূল্যস্ফীতিকে অনেক নীতিপরিকল্পকই এক কথায় করোনাভাইরাস অথবা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে ধরে নেন।
তারা সবার আগে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপান, তারপর নীতি-পরিকল্পনা সাজান। যেমন- বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা এক-দেড় বছর আগে যখন ব্যাংক ব্যবস্থার সুস্থতা ফিরিয়ে আনা, অতিমুনাফাজীবী ব্যবসায়ী শ্রেণির দৌরাত্ম্য দমন এবং সস্তায়-সহজে ঋণ দিয়ে খেলাপি ঋণ না বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন তখন আমাদের অর্থনীতির নীতিনির্ধারকরা অর্থনীতিবিদদের তীব্র সমালোচনা করে সবকিছুর জন্য কোভিড-১৯ মহামারি এবং পরে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধকেই দায়ী করেছিলেন। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত মাসে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় নিজেরাই স্বীকার করেছে, এক দশকের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে বাজার সিন্ডিকেটের পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের অভাব এবং ৩ বছর ধরে ৯ শতাংশ সুদের হারের সীমাই বড় ভ‚মিকা রেখেছে।
বিশ্ব অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ২০২২ সালের মার্চ থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত তার মূল তহবিলের সুদহার ১০ বার বাড়িয়েছে, যা এখন ১৬ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ১৪ মাসে ১০ বার নীতি সুদহার বাড়ানোর মাধ্যমে দেশটি রেকর্ড মূল্যস্ফীতির হারকে অনেকটাই বশে আনতে পেরেছে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার ছিল শূন্যের কাছাকাছি। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রায় ৯.১ শতাংশে পৌঁছায়। সেই মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার বাড়াতে বাড়াতে এখনকার ৫ দশমিক ২৫ শতাংশের সীমায় নিয়ে এসেছে।
এতে করে দেশটির বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার ২০২৩ সালের জুনে এসে ৩ শতাংশে নেমেছে, যা ২০২১ সালের মার্চের পর থেকে সর্বনি¤œ। দেশটির অর্থনীতি বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফেডারেল রিজার্ভের নির্ধারিত ২ শতাংশের মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হতে আরও সময় লাগবে। তাই ফেডারেল রিজার্ভ কিছুদিন পর আবারও নীতি সুদহার বাড়ানোর আভাস দিয়ে রেখেছে।
পক্ষান্তরে, বাংলাদেশে গত মে মাসের ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ২০ বেসিস পয়েন্ট কমে জুনে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৪৯ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ হয়েছে। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৩৬ বেসিস পয়েন্ট কমে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬ শতাংশ। কিন্তু পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির হার জুনে ছিল ৯.৭৪ শতাংশে, যা গত বছরের মে মাসে ছিল ৭.৪২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, সুদের হার বৃদ্ধি করলেও সদ্য শুরু হওয়া অর্থবছরে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর উচ্চমূল্যস্ফীতি অব্যাহত থাকবে এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য তাদের করা ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন খুবই কঠিন হবে। অথচ বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম কমার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের উচ্চমূল্যস্ফীতির হারও অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বরের মুদ্রানীতি ঘোষণা করে মুদ্রার জোগান নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিলেও কিছুদিন আগে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় দফায় দফায় বাজারে মুদ্রা সরবরাহ করেছে। বাড়তি চাহিদা মেটাতে বাজারে ছাড়া হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ ছাপানো টাকা। গত বছরের জুলাই-নভেম্বরে বাজারে নগদ ছাড়া হয়েছে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা।
আগের বছরের একই সময়ে ছাড়া হয়েছিল ১২৯ কোটি টাকা। করোনার সময় সর্বোচ্চ ৩৮ হাজার কোটি টাকা বাজারে ছাড়া হয়েছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত সরবরাহ করা মোট মুদ্রার পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ছাপানো নোট আকারে বাজারে আছে ২ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা, যা ইস্যু করা মোট মুদ্রার ১৫.৮০ শতাংশ। এটি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ২-৩ শতাংশ বেশি। বাকি ১৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা আছে ইলেকট্রনিক বা প্লাস্টিক মানি আকারে বিভিন্ন ধরনের কার্ড, অনলাইন বা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন সেবায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী গত এক বছরে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু একই সময়ে ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, ১ লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা। এখন ব্যাংকগুলো ঋণের বাড়তি সুদ আদায় শুরু করলেও আমানতের ক্ষেত্রে সুদ বৃদ্ধির কথা কিছু বলছে না। এমনটা দীর্ঘদিন ধরে চললে তারল্য সংকট বাড়বে। কারণ, মূল্যস্ফীতির জেরে মানুষের সঞ্চয়ের ক্ষমতা অনেকটাই কমে গেছে। আমানতের বিপরীতে সুদ না বাড়ালে এক সময় গ্রাহকের আসল টাকাই হারিয়ে যাবে।
এমনিতেই সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থা শোষণের হাতিয়ার এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সামাজিক অস্থিরতার অন্যতম উৎস। তার ওপর অর্থনীতি কাঠামোয় নানাবিধ সমস্যা বাংলাদেশের বিকাশমান অর্থনীতিকে বারবার বাধাগ্রস্ত করছে, যা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের মধ্যগগনে থাকা কোনো দেশের জন্য প্রচ- ক্ষতিকর। আমাদের অর্থনীতির কাঠামো উন্নত দেশগুলোর মতো সুসংবদ্ধ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ না হওয়ায় সুদের হার বৃদ্ধির কারণে সমাজের দরিদ্র শ্রেণি আরও দরিদ্র ও ধনী আরও ধনী হয়, যা সামাজিক শ্রেণিগত বৈষম্যকে আরও উসকে দেয়। সমাজে যারা অর্থ-বিত্তে ক্ষুদ্র তারা জীবনমান উন্নয়নে আর কোনো দরজা খোলা না পেয়ে উপায়ান্তরহীন হয়েই ঋণ নেয়।
তারা হয়তো ক্ষুদ্র কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করে নিজে কিছু লাভ রেখে কিংবা ঋণের টাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনে অতিকষ্টে ব্যাংককে সুদ দিয়ে জীবনের মোড় ঘোরাতে চায়। কিন্তু স্বল্প পুুঁজির কারণে পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। সুদহার বেড়ে গেলে কিংবা কোনো দুর্যোগ দেখা দিলে তাদেরই সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়। কিন্তু পুঁজিপতি ধনিক শ্রেণি ও ব্যাংকাররা অধিক সুদ আর মুনাফার লক্ষ্য নিয়েই ঋণ নেয় এবং দেয়। যেখানে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার উৎপাদনী কাজে নেওয়া ঋণ একবার অনুৎপাদনী খাতে চলে গেলে তার ঋণ পরিশোধ ক্ষমতা লোপ পায়। আর বোঝার ওপর শাকের আঁটির মতো তাকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ পরিশোধ করতে হয়। সেখানে সুদহার বৃদ্ধির সুযোগ নিয়েই সুদজীবীগোষ্ঠী ও ধনীরা আরও ধনী হয়। বিপুল অর্থ ঋণ নেওয়া ধনিক শ্রেণি আর ব্যাংক ব্যবসায়ীরা মিলেমিশে ঋণের পুরো টাকা অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার কিংবা বিদেশে পাচার করলেও তাদের কোনো ক্ষতি হয় না।
কারণ, সরকারের আড়ালে অর্থব্যবস্থা আসলে তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। সুদের হার ৩০০ শতাংশ হলেও তাদের কোনো ক্ষতি নেই। ঋণের অর্থ ফেরত না দেওয়ার সব জোগাড়যন্ত্র যে সময় সময় তাদের উদ্দেশ করেই প্রণীত হয়। বিশ্বের কোনো দেশে একটি পরিবারের হাতে সাতটি ব্যাংকের মালিকানা থাকতে দেখা যায় না। কিন্তু বাংলাদেশে তা আছে। এসব ব্যাংকের মালিকানার উৎস মূলত ব্যাংকের ঋণ। ঋণের টাকায় ব্যাংক কিনে, আবার সেই ব্যাংকের ঋণ দিয়ে নয়-ছয় করার রেওয়াজ শুধু বাংলাদেশেই দেখা যায়। আর এ কারণেই বলা হয়, আমাদের দেশে অর্থনীতির তত্ত¡কথা প্রয়োগ করে মূল্যস্ফীতি অথবা অন্য কোনো সংকট সহজে মোকাবিলা করা যাবে না।
অর্থনীতির এই দুর্দিনে আমাদের বিজ্ঞ নীতিনির্ধারকরা নিশ্চয়ই বোঝেন যে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার অবশ্যই বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। আর মূল্যস্ফীতি ও বিনিয়োগ খাতে সুদের হার বাড়ার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবকে ইতিবাচক করতে হলে ব্যাংক ব্যবস্থায় সুস্থতা ফিরিয়ে আনা, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট করে সময় সময় বিপুল মুনাফা কামিয়ে নেওয়ার ধারা বন্ধ করা, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি, সরবরাহ-শৃঙ্খল উন্নতকরণ, বিনিময় হার ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন, যথাসময়ে পণ্য আমদানিতে দক্ষতা, উৎপাদকদের ন্যায্যমূল্য প্রদান, সঠিক সময়ে সার-বীজ ও সেচের ব্যবস্থাসহ বাজার ব্যবস্থাপনায় সময়োপযোগী পারদর্শিতা দেখাতে না পারলে দিনশেষে এই উদ্যোগ কোনো সুফল দেবে না।
লেখক : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়,