
এলপিজি সংকট এবং এলএনজি আমদানিতে বিরূপ প্রভাব

সৈয়দ মনসুর হাশিম
দেশে শক্তি পরিকল্পনাকারীদের জন্য অবশ্যই ভালো যাচ্ছে না। বাংলাদেশে বিদ্যমান গ্যাস ক্ষেত্র থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ হ্রাস এবং মার্কিন ডলার সংকট যা তরলীকৃত শক্তি গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ওপর উৎপাদন ক্ষমতার ওপর ক্রমবর্ধমান বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এখন মনে হচ্ছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সরবরাহ সংকটের দিকে যাচ্ছে। কয়লা এবং এলএনজির মতো এলপিজিও জীবাশ্ম জ্বালানির মতো আমদানির পর্যায়ে রয়েছে। এখানে পার্থক্য হলো যে এলপিজি রান্নার জ্বালানি হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় এবং এর সরবরাহে কোনো ব্যাঘাত ঘটলে সাধারণ জনগণের জন্য মারাত্মক পরিণতি হবে। এলপিজি অপারেশন্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলওএবি) অনুসারে প্রায় ৩০টি কোম্পানি বেসরকারি খাতে এলপিজি আমদানি ও বোতলজাত করছে, যা চাহিদার ৯৯ শতাংশ পূরণ করে। যদিও সব বাংলাদেশিরা রান্নার জন্য এলপিজি ব্যবহার করেন না, তবে বাজারে একটি চাহিদার আইটেম হিসাবে একে ছাড় দেওয়া যায় না। প্রায় ৪৪.৫ মিলিয়ন এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহারকারী এবং প্রায় ৬০,০০০ খুচরা বিক্রেতা রয়েছে। এলপিজির ব্যবহার শুধু বাড়ির ব্যবহারকারীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি)-এর বিকল্প হিসেবে অটোমোবাইলগুলোতেও গ্রহণ করা হচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকট বাড়ছে। সুতরাং এলপিজি সরবরাহে যেকোনও ব্যাঘাত ঘটলে এতে অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে রান্নার জন্য পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার এলপিজি আমদানি, বোতলজাতকরণ এবং বিতরণের জন্য বেসরকারি খাতকে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই লাইসেন্সের অধীনে, বেসরকারি খাত, বেসরকারি খাতের সংগঠন বসুন্ধরা গ্রæপ এলপিজি চালু করেছে। ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশে এ ব্যবসা শুরু হবার পর থেকে এ পর্যন্ত ওমেরা গ্রæপের পরে বিএম, যমুনা স্পেকটেক, বেক্সিমকো ইত্যাদি কোম্পানিগুলো তাদের ব্যবসা ভালোভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। এলপিজির বাজার ধীরে ধীরে বেড়েছে এবং এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়নি। সময়ের সাথে সাথে বাজারের প্রতিযোগিতায় মূল খেলোয়াড়দের অনেককে তাড়িয়ে দিয়েছে এবং এখন প্রায় সাতটি কোম্পানি এলপিজি বাজারে শাসন করছে।
অর্থনৈতিক মন্দার সঙ্গে এলওএবি-এর উপর অনেক চাপ সৃষ্টির জন্য বেশ কিছু কারণ উত্থাপিত হয়েছে। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হচ্ছে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার (বিডিটি) অবমূল্যায়ন। এটি এলপিজি আমদানিকে অনেক বেশি ব্যয়বহুল করেছে। যখন ২০২২ সালের মার্চ মাসে লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) খোলা হয়েছিল (বিনিময় হার ছিল বিডিটি ৮৬থেকে ১ ডলার) এবং তারপরে প্রতি ডলার ১০২-১০৩ টাকায় আমদানি পেমেন্ট নিষ্পত্তি করতে হয়েছিল, তখন আমদানিকারকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। কারণ বিনিময় হারের এই ওঠানামা কাভার করতে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়ানো হয়নি। তারপরে অবশ্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আর্থিক নীতির কঠোরতা এসেছে, যার অর্থ হলো প্রয়োজনীয় এলপিজি আমদানি করার জন্য এলওএবি দ্বারা কম এলসি খোলা যেতে পারে। বাজারের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের মে মাসে এলপিজি আমদানি বাজারের প্রয়োজনের তুলনায় ২০,০০০ টন কম ছিল।
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী এলপিজি আমদানির জন্য মাসিক চাহিদা ১০০,০০০ থেকে ১২০,০০০ টন। কিন্তু অপারেটররা অদূর ভবিষ্যতে ব্যবসা করার জন্য এ সেক্টরে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার লোকসান হয়েছে। এই বিভাগে আমদানি সরবরাহকারীদের সাথে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে বড় আমদানির প্রয়োজন। তাই যখন বিল নিষ্পত্তিতে দেরি হয়, বাংলাদেশে এলপিজি পাঠানোর ক্ষেত্রে সরবরাহকারীদের আগ্রহ কমে যায়। বৈদেশিক মুদ্রার দাম বৃদ্ধির কারণে অর্থনীতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে, এতে এলএনজি আমদানিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এলপিজিও শীঘ্রই বাজারে সরবরাহে স্বল্পতা দেখা দেবে যদি না আমদানির জন্য অর্থ প্রদানের জন্য কোথাও থেকে প্রয়োজনীয় ডলার পাওয়া যায়।
. সূত্র : দি ফিনানসিয়াল এক্সপ্রেস। অনুবাদ : মিরাজুল মারুফ
