নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে আমার গ্রাম-আমার শহর প্রকল্প পাইলট প্রকল্প হিসেবে ১৫টি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা স¤প্রসারণ ও সহজতর করার উদ্যোগ
সোহেল রহমান : সরকার প্রণীত ভিশন অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে ২০৪১ সালের মধ্যে পরিকল্পিত ও জলবায়ুসহিষ্ণু টেকসই-উন্নত দেশ বিনির্মাণে মাঠ পর্যায়ে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। এর অংশ হিসেবে পাইলট ভিত্তিতে গ্রাম উন্নয়নের জন্য আমার গ্রাম-আমার শহর প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রকল্পের আওতায় দেশের ১৫টি জেলার ১৫টি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা স¤প্রসারণ ও সহজতর করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময়সীমা ধরা হয়েছে তিন বছর (জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৬)। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮০০ কোটি টাকা।
স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিলÑ প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা স¤প্রসারণ করা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাইলটিং হিসেবে ১৫টি গ্রামে শহরের আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা স¤প্রসারণ করা হবে এবং পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে দেশের সকল গ্রামকে শহরের আধুনিক নাগরিক সুবিধার আওতায় আনা হবে। এর মাধ্যমে ২০৪১ সালের ভিশন অনুযায়ী উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হবে।
সূত্র মতে, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন কৌশল, গ্রামীণ সড়ক পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ কৌশল, গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্কের জন্য অগ্রাধিকার কৌশল, গ্রামীণ গ্রোথ সেন্টার/ হাটবাজার, গ্রামীণ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, গ্রামীণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, উপজেলা উন্নয়ন/মহাপরিকল্পনা, কমিউনিটি অবকাশ কেন্দ্র ও গ্রামীণ বিনোদন সুবিধা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা উন্নয়ন এই শিরোনামে পৃথক পৃথক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে আমার গ্রাম-আমার শহর বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
আমার গ্রাম-আমার শহর কারিগরি সহায়তা প্রকল্পে উক্ত বিষয়গুলোর ওপর গবেষণা/সমীক্ষা পরিচালনা করে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপায় উদ্ভাবন করা হয়েছে। পাইলট প্রকল্পে গবেষণা/সমীক্ষার ফলাফলসমূহ প্রয়োগ করা হবে। এ প্রকল্পের আউটপুটসমূহ প্রত্যক্ষ/পরোক্ষভাবে এসডিজি’র অভীষ্ট-১ (দারিদ্র বিলোপ, টার্গেট ১.১, ১.৩), অভীষ্ট-৬ (নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন), অভীষ্ট-৯ (টেকসই নগর ও জনপদ), অভীষ্ট-১২ (পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদন), অভীষ্ট-১৩ (জলবায়ু কার্যক্রম) এর লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। উক্ত পাইলট প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যক্রম ছাড়াও পাইলট গ্রামসমূহে অন্যান্য বিভাগের কার্যক্রমকে সমন্বয় করবে। এসডিজি’র অধিকাংশ অভীষ্ট এবং লক্ষ্যসমূহের বাস্তবায়ন দৃষ্টান্ত পাইলট গ্রামসমূহে স্থাপিত হবে। এ প্রেক্ষিতে, প্রকল্পটি বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, ৮ম পঞ্চ বার্ষিক পরিকল্পনা এবং এসডিজি’র লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপুর্ণ।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জনসম্পদ সৃজনে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন; পরীক্ষামূলকভাবে পাইলট গ্রাম অন্তর্ভুক্ত ১০টি উপজেলার মহাপরিকল্পনা (মাস্টারপ্ল্যান) দ্রæততম সময়ে মধ্যে প্রণয়ন/হালনাগাদের মাধ্যমে সারাদেশে সকল উপজেলায় মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের পদ্ধতি চ‚ড়ান্ত করণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে পরিকল্পিত ও জলবায়ু সহিষ্ণু টেকসই-উন্নত দেশ বিনির্মাণে মাঠ পর্যায়ের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।
এছাড়া আমার গ্রাম-আমার শহর অঙ্গীকার বাস্তবায়নের পাইলট গ্রাম অন্তর্ভুক্ত ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদের রাজস্ব আহরণ, গ্রাম সহায়ক নীতি কাঠামো প্রয়োগ, স্বেচ্ছাসেবার অন্তর্ভুক্তি, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নগর পরিষেবা প্রদানের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগের সেবাসমূহ পাইলট গ্রামসমূহের স¤প্রসারণ এবং পাইলট গ্রাম প্রকল্পের অধীনে সম্পাদিত কার্যাবলীর এবং আহরিত জ্ঞান সারাদেশে প্রয়োগের লক্ষ্যে উপযুক্ত জ্ঞান ব্যবস্থাপনা পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও ডকুমেন্টেশন করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছেÑ উপজেলা, ইউনিয়ন এবং গ্রাম সড়ক উন্নয়ন (মাটির কাজ; ব্রিজ, কালভার্ট, ড্রেন নির্মাণ; প্রতিরক্ষা ইত্যাদি); গ্রোথ সেন্টার, গ্রামীণ বাজার উন্নয়ন এবং কৃষিপণ্য কালেকশন সেন্টার নির্মাণ; পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্ল্যান্ট নির্মাণ; উপজেলা বহুমুখী ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ; বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ উন্নয়ন; গ্রামীণ আবাসন উন্নয়ন; খাল ও পুকুর খনন; গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধ উন্নয়ন, সড়ক বাতি স্থাপন, বন্ধুচুলা ও বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট সরবরাহ করা; সামাজিক বনায়ন ও ভিলেজ ব্র্যান্ডিং।