কালো টাকাকে সাদা করা বন্ধ করে বাতিল করতে ডিমনিটাইজেশনের কোনো বিকল্প আপাতত নেই
কাজী এম মুর্শেদ
ভারতে বছর দুয়েক আগে ডিমনিটাইজেশন করা হলো। এখন আবার চলছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। ডিমনিটাইজেশনে মূলত পুরান নোট বদলে নতুন নোট ছাড়ে, প্রতিদিন একটা লিমিট থাকে, যেমন ভারতে ২০ হাজার রুপি। আগেরবার ৫০০ আর ১০০০ রুপির নোট তুলে নতুন ৫০০ আর ২০০০ রুপি ছাড়া হয়। এবার জানি না, তবে সম্ভবত ৫০০ আর নতুন ২০০০ রুপি বদলাবে। এটা খরচের ব্যাপার, এতে নতুন নোট ছাপানো, ব্যাংকে দেওয়া, লাইন ধরে ২০ হাজার পর্যন্ত প্রতিদিন বদলানো। স্বাভাবিক চোখে দেখলে খরচের এবং অপ্রয়োজনীয় মনে হয়।
কিন্তু ডিমনিটাইজেশনে নি¤œআয়ের লোকের কোনো লোকসান নেই, উচিত আয়ের লোকের যারা ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাবসা করে তাঁদেরও ক্ষতি নেই। ক্ষতি হলো বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী ও সেই সব জিকে শামীম বা ক্যাসিনো সম্রাটদের যারা নগদ টাকা বাসায় জমা করে রাখে। ব্যাংকে রাখলে ট্যাক্স দিতে হয় আবার বদলানোর সময় বেশি বদলানো কঠিন। এদের বাসায় কোটি কোটি টাকা নগদ বিছানার তলা, আলমারি, সিন্দুক বা হাঁড়ির মধ্যে রাখা থাকে।
সামনে ভোট, নগদ টাকা বিলানোর মচ্ছব শুরু হবে। অনেকেই টাকা জমা করছে, এখন বাংলাদেশ সরকারের উচিত ডিমনিটাইজেশন করা। যারা নগদ টাকা সরিয়ে রাখছে হয় ব্যাংকিং চ্যানেলে রাখবে অথবা বিলি করে দেবে, কিংবা পুরোটাই অচল হয়ে যাবে। অনেকদিন ধরে এটা দেখতে বসে আছি, কারণ অস্ত লোক চেক দিয়ে কাজ করে না, আড়তে যারা মারিচ ৮০০ টাকায় বেচে তারা নগদ ছাড়া কাজ করে না। বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছেপে সরকারকে ঋণ দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ভাতা না দিয়ে সোজা ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট বদলানোর সুযোগ দিলে অনেক কালো টাকা বুড়িগঙ্গার কালো পানিতে ভাসবে।
বাঙালি অবশ্য কিঞ্চিৎ দুষ্টু প্রকৃতির। আজকাল ঘুষ নেয় ডলারে, তাদের দুবাই একাউন্টে। কেউ উচ্চমূল্যে ফ্লাট কেনে, কেউ জমি কেনে, কেউ সোনা কেনে। তারপরও ডিমনিটাইজেশন দরকার। সিঙ্গাপুরের আইনে আপনি একটার বেশি এপার্টমেন্ট কিনতে পারবেন না। অনেকে ভালো এপার্টমেন্ট কেনে, সেটা ভাড়া দিয়ে সরকারি এপার্টমেন্টে থাকে। এটাও কালো টাকা ঠেকাবার ভালো রাস্তা। আবার কতো টাকার উপরে গেলে ফিক্সড ডিপোজিটে উল্টা মুনাফা দিতে হবে, সরকার সেই চিন্তাও করতে পারে। কালো টাকাকে সাদা করা বন্ধ করে বাতিল করতে ডিমনিটাইজেশনের কোনো বিকল্প আপাতত নেই।
লেখক: অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষক