বাংলাদেশ : কার্যকরী সাক্ষরতার হার উন্নতকরণ করা প্রয়োজন
তানিম আসজাদ
স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরেও এদেশে জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ এখনও নিরক্ষর। যেহেতু বর্তমান স্বাক্ষরতার হার ৭৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, তাই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজিস) একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিকটবর্তী সময়ে, বিশেষ করে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ শতাংশ স্বাক্ষরতা অর্জন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। স্বাক্ষরতাকে কার্যকর ও কার্যকরী করা আরও গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে সর্বশেষ জরিপের ফলাফল একটি হতাশাজনক চিত্র তুলে ধরে। স্বাক্ষরতা মূল্যায়ন সমীক্ষা ২০২৩, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) দ্বারা প্রস্তুত এবং প্রকাশিত যে সামগ্রিক কার্যকরী স্বাক্ষরতার হার প্রায় ৬৩ শতাংশ। গ্রামীণ এলাকার তুলনায় শহরাঞ্চলে এ হার বেশি ৭২ শতাংশ যেখানে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৯ শতাংশ। কার্যকরী স্বাক্ষরতার হার সাত বছরের বেশি বয়সী জনসংখ্যার জন্য প্রযোজ্য।
উল্লেখ্য যে কার্যকরী স্বাক্ষরতা হলো দক্ষতার একটি সেট, যা ব্যক্তিদের এমনভাবে তথ্য পড়তে, লিখতে এবং বোঝার অনুমতি দেয়, যা তাদের নিয়মিত জীবনে কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম করে। এটি মৌলিক পঠন এবং লেখার দক্ষতার চেয়ে বেশি এবং বিভিন্ন প্রসঙ্গে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, সমস্যা সমাধান এবং ভাষা বোঝার জন্য প্রয়োজন। অন্য কথায় এটি সাধারণ স্বাক্ষরতা এবং শিক্ষার শক্তি পরিমাপের জন্য একধরনের হাতিয়ার। সমীক্ষায় আরও দেখানো হয়েছে যে ৭-১৪ বছর বয়সী শিশু বা জনসংখ্যার মধ্যে ভাল কার্যকরী স্বাক্ষরতার হার প্রায় ৭৩ শতাংশ। এটি সম্ভবত ইঙ্গিত করে যে শিশুদের শেখার প্রক্রিয়া উন্নত হয়েছে। কার্যকরী স্বাক্ষরতার সামগ্রিক হার খারাপ না হলেও, অদূর ভবিষ্যতে সামগ্রিক স্বাক্ষরতার উন্নতির জন্য কিছু ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে আরও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। উদাহরণস্বরূপ প্রায় ৫২ শতাংশ উন্নত স্তরে কার্যকরীভাবে স্বাক্ষর যার মানে এই শ্রেণির লোকেরা পড়া এবং লেখায় যথেষ্ট সাবলীল এবং চারটি পাটিগণিত নিয়ম (যোগ, বিয়োগ, গুণ এবং ভাগ) এবং গাণিতিক যুক্তিতেও পারদর্শী।
একই সময়ে ১২ শতাংশ কার্যকরীভাবে নিরক্ষর যার অর্থ তাদের বর্ণমালা নির্ধারণ, শব্দ বা সংখ্যা চিনতে এবং অর্থ বা বস্তু গণনা করার ক্ষমতা নেই। আবার ১৪ শতাংশ কার্যকরীভাবে অর্ধ-স্বাক্ষর কারণ তারা কিছু শব্দ চিনতে এবং লিখতে এবং খুব মৌলিক স্তরে বস্তু এবং সংখ্যা গণনা করতে পারে। যদিও এগুলো মোট ফলাফলের কয়েকটি ফলাফল থেকে কিছু সমালোচনামূলক জিনিস অনুমান করা যেতে পারে। কার্যকরী স্বাক্ষরতার অবস্থা নির্দেশ করে যে দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা ত্রæটিপূর্ণ এবং বিঘিœত। গত ৫০ বছরে প্রায় সব সরকারই শিক্ষা ও শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার চেষ্টা করেছে। বেশির ভাগ পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে শিক্ষার্থীদের খরচ শিক্ষা ব্যবস্থাকে সঠিকভাবে প্রবাহিত করার পরিবর্তে পাঠ্যক্রম ও পরীক্ষা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রচেষ্টা বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। আবার সমন্বিত পদ্ধতির অভাব শিক্ষার মান উন্নয়নের ইতিবাচক প্রচেষ্টাকেও ক্ষুণœ করে। পরীক্ষা এবং গ্রেডের উপর অত্যধিক ফোকাসও শিক্ষার্থীদের বোঝার চেয়ে মুখস্থের উপর নির্ভর করতে বাধ্য করে।
যদিও সরকার শেখার এবং শেখার উন্নতির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, তবুও কিছু সীমাবদ্ধতা এবং ত্রæটি রয়েছে। যে কারণে মাধ্যমিক স্তর শেষ করেও অনেকে বাংলা ও ইংরেজিতে সাবলীলভাবে লিখতে পারেন না। অনেকে আধা-জটিল বক্তৃতা বা পাঠ্যগুলোকে বুঝতে পারে না। মৌলিক গণিতের দুর্বলতা আরেকটি অপূর্ণতা। কার্যকরী স্বাক্ষরতার বর্তমান অবস্থাও শিক্ষা এবং শেখার ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য দেখায়। গ্রামীণ শিক্ষার্থীদের তুলনায় শহুরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালো লজিস্টিক (সরবরাহ) সহায়তা রয়েছে। শহুরে এলাকার মানুষদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং প্রশিক্ষণের জন্য আরও ভাল বিকল্প রয়েছে। এই সবগুলো শহর এলাকায় কার্যকরী স্বাক্ষরতায় ভালো অবদান রেখেছে। সামগ্রিকভাবে বিবিএস সমীক্ষার ফলাফল সকলের জন্য চোখ খুলে দেওয়ার মতো এবং কার্যকরী স্বাক্ষরতার উন্নতির জন্য নীতিনির্ধারকদের ত্রæটিগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
সূত্র : দি ফিনানসিয়াল এক্সপ্রেস। অনুবাদ : মিরাজুল মারুফ