মৎস্য খাতে পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করবে সরকার
আমিনুল ইসলাম : দেশের মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে সরকার গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ উৎসাহিতকরণের জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এছাড়া সরকার মৎস্য খাতের জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করতে প্রস্তুত। তবে এ ধরনের অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাফল্য নির্ভর করে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের স্বতঃস্ফূর্ত বিনিয়োগের উপর। মৎস্য খাত সংশ্লিষ্ট সকলে যদি এ ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে আবেদন করেন, সরকার এই ক্ষেত্রে ভ‚মি অধিগ্রহণসহ প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা প্রদান করবে। মঙ্গলবার রাজধানীর এন ই সি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এসব কথা বলেন। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন এবং ওয়ে ফরওয়ার্ডের প্রেক্ষাপটে মৎখাতে ভুর্তকী শীর্ষক এ আলোচনার আয়োজন করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি)।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিব ড. নাহিদ রশীদ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার মো. সামির সাত্তার এবং বাংলাদেশ ফ্রজেন ফুড এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট কাজী বেলায়েত হোসেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইআরডি সচিব মিজ শরিফা খান। উল্লেখ্য যে গত ২০২২ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের ১২তম সম্মেলনে মৎসখাতের উপর ভুর্তকীর বিষয়ে একটি বহুজাতিক বাণিজ্য চুক্তি করা হয়। সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই সদ্ব্যবহার করতে চুক্তিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রবিধান সন্নিবেশিত করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ অবৈধ, অপ্রতিবেদিত ও অনিয়ন্ত্রিত মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে ভর্তুকি সীমিতকরণ, মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে ধরা হচ্ছে এধরনের প্রজাতির মাছ আহরণের ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, অনিয়ন্ত্রিতভাবে গভীর সমুদ্রে ধরা মাছের ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রদানে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ইত্যাদি।
বাংলাদেশ যদিও সামুদ্রিক মাছের ক্ষেত্রে তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য ভর্তুকি প্রদান করেনা, তা সত্তে¡ও স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পর ওই সকল আংশিক ভর্তুকিসমূহ প্রদানের সুযোগ অনেক সীমিত হয়ে আসবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিব ড. নাহিদ রশীদ তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে সরকারি ও বেসরকারি খাতে আরও প্রচুর পরিমাণ বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-এর প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার মোঃ সামির সাত্তার তাঁর বক্তৃতায় উত্তরণ পরবর্তী সময়ে দেশের মৎস্য খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহারের সম্ভাব্য প্রভাব কি হতে পারে তার উপর একটি সম্যক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার আহবান জানান। সেই গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে তিনি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মন্ত্রী পর্যায়ের পরবর্তী বৈঠকে এই ব্যাপারে ডবিøউ টি ও-এর সাথে প্রয়োজনীয় আলাপ আলোচনা চালানোর আহবান জানান।
বাংলাদেশ ফ্রজেন ফুড এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট কাজী বেলায়েত হোসেন তাঁর বক্তব্যে মৎস্য আহরণের উপকরণসমূহের আমদানি শুল্ক মওকুফের আহবান জানান। একই সাথে তিনি মৎস্য খাতে মুল্য সংযোজন, দক্ষতা উন্নয়ন এবং বন্ডেড ওয়ারহাউস সুবিধা প্রদানের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ইআরডি সচিব মিজ শরিফা খান তার বক্তৃতায় সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগানোর জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
ইআরডি-এর অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ফরিদ আজিজ তার উদ্বোধনী বক্তৃতায় উল্লেখ করেন যে উত্তরণ প্রক্রিয়াকে টেকসইকরণের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আরও অনেক সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে বক্তাগণ এই ক্ষেত্রে দেশের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।