বাংলাদেশে জরুরি চিকিৎসাসেবা অনেককিছু করার আছে
ডা. মীর সাদুদ্দিন আহমেদ
বেশির ভাগ আর্থিক স্বাস্থ্যসেবা জরুরী বিভাগ (ইডিএস), জরুরী কক্ষ (ইআরএস) এবং অন্যান্য জরুরী ইউনিটগুলো স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার জন্য পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করা হয়, প্রধানত দৈনিক ২৪-ঘন্টা পরিষেবা সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য উচ্চ খরচের প্রয়োজন। এই খরচগুলোর মধ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শ্রমশক্তির পারিশ্রমিকের জন্য প্রয়োজন, যেখানে ব্যয়বহুল পরীক্ষাগার ডায়াগনস্টিকস এবং রেডিও-ইমেজিং পরিষেবাগুলোতে ব্যবহৃত হয়। মোট বাজেটের ৬.০ থেকে ৮.০ শতাংশ জরুরী-যতœ পরিষেবা প্রদানের জন্য যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাগুলো সরকারী এবং বেসরকারী উভয় ক্ষেত্রেই ৮.০ শতাংশের গড় মুনাফা দেখার আশা করতে পারে, তবে বাংলাদেশে কি এটি আশা করা যেতে পারে যেখানে জরুরী পরিচর্যা অবকাঠামো বিদ্যমান নেই এবং অর্থনীতির বেশিরভাগই পকেটের বাইরে চলে যাচ্ছে? একটি জরুরি ইউনিট চালানোর খরচ পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রতিষ্ঠিত সিস্টেমগুলো স্বাস্থ্য বীমা এবং জাতীয় ভর্তুকির উপর নির্ভর করে বাংলাদেশে জরুরি সেবার কোনো মানে হয় না। ভারতে প্রতিটি রোগীর জন্য গড় খরচ ২৫ডলার এবং একটি সম্পূর্ণ ইডি চালানোর খরচ প্রতি ঘন্টায় ৩৭৫ডলার। এইভাবে বিভাগটিকে আয় করতে প্রতি ঘন্টায় কমপক্ষে ১৫ জন রোগী দেখতে হবে।
উপরোক্ত পরিসংখ্যানের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে একটি ইডি প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করা যেকোনো হাসপাতাল প্রশাসনের জন্য কঠিন হবে। এটি সেই পটভ‚মিতে যে বাংলাদেশে বর্তমানে ইআরএস গড়ে প্রতি মাসে মাত্র ৫০ থেকে ৭০ রোগী দেখতে পারেন এবং রোগীদের দেখার গড় দৈর্ঘ্য সাধারণত ১৫ মিনিটের কম হয়। ইআর-এ থাকার অসাধারনভাবে সংক্ষিপ্ত দৈর্ঘ্য এই সত্যের উপর নির্ভর করে যে বর্তমানে একটি জরুরী ইউনিটে ন্যূনতম চিকিৎসা কার্যক্রম ঘটে এবং বেশিরভাগ রোগীকে অবিলম্বে যদি কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় বিভিন্ন ইন-পেশেন্টে ভর্তি করা হয়। ছোটখাটো আঘাতে বর্তমানে বাংলাদেশের ইআর-এ চিকিৎসা করা হয়। এই ধরনের পরিসংখ্যানের সাথে, এটা স্পষ্ট যে জরুরী পরিষেবা মানসম্মত করা একটি হাসপাতালের রাজস্বের ক্ষতির কারণ হবে। কক্সবাজারের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের একটি কেস উদাহরণ কিছু চমৎকার তথ্য প্রদান করতে পারে যে কীভাবে ইডির উন্নতি আসলে একটি স্বাস্থ্য সুবিধার জন্য রাজস্ব আনতে পারে। যেহেতু রোগীরা তাদের জরুরী বিভাগ থেকে আরও বেশি আশা করে, এ পরিষেবাতে একটি বিশ্বাস তৈরি করেছিল, যা স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারদেরকে ইনপেশেন্ট ভর্তির প্রয়োজন ছাড়াই সরাসরি বিভাগ থেকে উপযুক্ত রোগীদের দেখতে, চিকিৎসা করতে এবং ছাড়তে সক্ষম। এই আবস্থার পরিবর্তন শুধুমাত্র হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ রোগীদের পরিষেবার উপরই নয়, জরুরি রোগী এবং তাদের অসংখ্য মানুষের ভিড়কেও কমিয়েছে। শুরুতে যেমন বলা হয়েছে, ইডিতে সর্বোচ্চ খরচ হলো ল্যাবরেটরি ডায়াগনস্টিকস এবং রেডিও-ইমেজিং পরিষেবায়। এখানে বেশিরভাগ ইডি রাজস্ব উপার্জন করতে পারে। যাইহোক স্ট্যান্ডার্ডাইজড জরুরী বিভাগে এই ধরনের তদন্ত করা হলে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষার সংখ্যা কমিয়ে রোগীদের উপকার হয়। এখন এটা ভাবা যৌক্তিক হবে যে জরুরী পরিচর্যাকে মানসম্মত করা এবং সারা বাংলাদেশে ইডি স্থাপন করা হলে হাসপাতালের রাজস্ব যথেষ্ট বৃদ্ধি পাবে। একটি জরুরী বিভাগের রোগীর সংখ্যায় একটি অনির্দিষ্ট বৃদ্ধি দুর্ভাগ্যবশত চাপ এবং ত্রæটির দিকে ধাবিত করে। এই ধরনের চাপ রোগীদের (বর্ধিত অপেক্ষার সময়ের কারণে) এবং কর্মীদের (অনুপাতিক কর্মী-থেকে-রোগীর অনুপাতের কারণে) উভয়ের মধ্যেই প্রকাশ পায়। জরুরী বিভাগে ত্রæটিগুলো, যতই তুচ্ছ মনে হোক না কেন,গুরুত্বের অভাবের কারণে পরিণতি খারাপ হতে পারে। খরচ সবচেয়ে বেশি হয় যখন রোগীর ন্যূনতম সংখ্যা দেখা যায়। চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে, রোগীর সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে অতিরিক্ত খরচ একটি লেভেলে হ্রাস পায়। যাইহোক একবার ডিপার্টমেন্টে ভিড় হতে শুরু করলে, ডিপার্টমেন্টে ঝুঁকি এবং প্রতিক‚ল ঘটনা বাড়তে থাকে । এতে কোন সন্দেহ নেই যে রোগীর নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তবে এই উচ্চ স্তরের যতœ চলমান থাকাও গুরুত্বপূর্ণ।
অতএব হাসপাতাল প্রশাসনের জন্য তাদের জরুরি বিভাগে প্রয়োজনীয় উপযুক্ত সংস্থানগুলো মূল্যায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। সবসময় এমন কিছু ক্ষেত্র আছে যার জন্য পারিশ্রমিক ছাড়াই জরুরী যতেœর প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অর্থনীতি আশ্চর্যজনকভাবে এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় বেশ ভালো ভূমিকা নিতে পারে। বাংলাদেশ যখন নি¤œ আয় থেকে মধ্যম আয়ের অর্থনীতিতে চলে যাচ্ছে, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি বাড়ছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) তহবিলের মাধ্যমে তাদের উন্নতিতে সাহায্য করার জন্য তাদের তৈরি করেছে। বাংলাদেশের অনেক হাসপাতাল একটি বৃহত্তর ব্যবসায়িক উদ্যোগের অংশ এবং তাই জরুরি যতœ আপগ্রেড করার জন্য তাদের মূল কোম্পানি থেকে সিএসআর তহবিল সহজেই নিতে পারে। যদি না হয় কর্পোরেট সংস্থাগুলোকে সরাসরি অর্থ প্রদানের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে। মুসলিম-প্রধান বাংলাদেশে আরেকটি উপায় হল দারিদ্র্যের ভারে চাপা পড়াদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য দাতব্য সংস্থা এবং অভ্যন্তরীণ কর্মীদের কাছ থেকে জাকাত তহবিল করা। মূল কথা হল বাংলাদেশের সমস্ত স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলোকে জরুরী-সেবাগুলো যথাযথভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রস্তুত করা উচিত (তাদের আকার এবং অবস্থানের জন্য) কারণ এটি করার ফলে, তারা কেবল তাদের সাংগঠনিক সক্ষমতাই উন্নত করবে না বরং বাংলাদেশের জাতীয় স্বাস্থ্যের যে লক্ষ্যগুলো রয়েছে তার অনেকগুলো উন্নতি করবে।
ডা. মীর সাদুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশে জেডএবিএস ফাউন্ডেশন এবং যুক্তরাজ্যে বিশ্বব্যাপী ডাক্তারদের সঙ্গে কাজ করা আন্তর্জাতিক জরুরি চিকিৎসা পরিচর্যা বিশেষজ্ঞ। তিনি লন্ডনে অবস্থিত এনএইচএস-এর জরুরি ওষুধের পরামর্শদাতাও। সূত্র : দি ফিনানসিয়াল এক্সপ্রেস। অনুবাদ : মিরাজুল মারুফ