বেসিক্যালি ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনো বিরোধ নেই
শোয়েব সর্বনাম
আমাদের দেশে বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে গন্ডগোল লাগাইছেন মূলত বিজ্ঞানমনস্করা। বেসিক্যালি ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনো বিরোধ নেই। বান্দরের থেকে মানুষের উৎপত্তি, এই বাক্যটা নিয়াই যত গন্ডগোল। বিজ্ঞানমনস্করা ডারউইন ইত্যাদি টেক্সট হাজির করে দাবি করেন, গাছের মধ্যে ঝুলতে থাকা ওই বান্দরগুলাই তাদের আব্বা আম্মা। এখন ধার্মিকেরা এই কথা মেনে নিতে কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। ধর্মগ্রন্থগুলোতে মানবজাতির আদি পিতার কথা বলা আছে। সেইখানে বান্দরের কথা বলা নেই। ফ্যাক্ট হচ্ছে, ডারউইন বা বিজ্ঞান নয়, চিড়িয়ানায় গিয়ে বান্দরগুলোরে বাদাম খাওয়ায়ে মানুষের আদি পিতা হইতে রাজি করাইছেন এই বিজ্ঞানমনস্ক লোকগুলোই, এর সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই। আমার সন্দেহ, লোকেদের এই তাওরাশ অবস্থা দেখেই ড. সেঁজুতি সাহা বিজ্ঞানমনস্কদের ভালো মানুষ হওয়ার আহŸান জানাইছেন।
বিজ্ঞানের কাজ গবেষণা করা। ফলে বিজ্ঞানী ধরনের লোকেরা গবেষণার দরকারে মানুষসহ দুনিয়ার সকল উদ্ভিদ প্রাণীর তালিকা বানায়ে থুইছেন। সেই তালিকায় জলের প্রাণী, স্থলের প্রাণী, খেচরমার্কা প্রাণী এদের আলাদা আলাদা সিরিয়ালে রেখে একেকটা নাম দিয়ে দিছেন। এদের ভিত্রে আবার যেগুলো দুইটা পা, যেইগুলো চারটা পা, কিছু আবার সরীসৃপ, কিছু উভচর কতরকম আছে না, এইগুলোরে ভিন্ন ভিন্ন গোত্রভুক্ত করছেন। সেই বিবেচনায় হাত পা ব্যবহার করতে পারে এমন মেরুদন্ডী প্রাণিগুলো একই সিরিয়ালে পরছে, যেইখানে মানুষ আর বান্দররে রাখা রাখা হইছে। বিজ্ঞানমনস্ক ও ধার্মিক উভয়কেই বুঝতে হবে, এইটা একটা তালিকামাত্র, এইটা কোনো সিদ্ধান্ত না। বিজ্ঞানীদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, এককোষি প্রাণী আছে একটা এমিবা, ওইটার কোষ বিভাজিত হয়ে হয়েই জল স্থল বায়ুমন্ডলসহ পৃথিবীর সকল প্রাণের জন্ম। বিজ্ঞানমনস্ক লোকেরা বলতে পারতো, মানুষের পূর্ব-পুরুষ হচ্ছে এমিবা। কিন্তু তারা বলতেছে বান্দর। হোয়াই?
রিজনটা হচ্ছে, তারা মানুষ ভালো না। বিজ্ঞানমনস্কতা নয়, ধর্মগ্রন্থের বিরোধিতাই এই দেশের বিজ্ঞানমনস্কদের প্রধান তৎপরতা, যেইটা খারাপ। বিজ্ঞান কেন, লজিক্যালি দুনিয়ার কোনো বিষয়ে জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনের জন্য ভালোমানুষির দরকার নেই। ভালোমানুষ লাগবে মূলত নৈতিকতার দরকারে। খামাখা মিছা কথা বলে বলে কোনো গোষ্ঠিরে ক্ষেপায়ে দেয়া আর যাই হোক, বিজ্ঞানমস্কতা নয়। ফলে বিজ্ঞানমনস্ক হতে হলে ভালো মানুষ হতে হবে, সেঁজুতির এই আহবান লজিক্যালি রঙ হলেও পলিটিক্যালি কারেক্ট। মানুষ বলতে বোঝানো হয়ে থাকে মূলত ইন্টেলেকচুয়ালিটি।
পৃথিবীতে মানুষ ছাড়া আর কোনো ইন্টেলেকচুয়াল প্রাণী নেই। ফলে নিঃসন্দেহে বলা যাবে, মানুষের কোনো পূর্ব-পুরুষ নেই। মানবজাতির ইতিহাস নিয়া সবচেয়ে আপডেটেড বই স্যাপিয়েন্সে হারিরিও এই কথাই বলতেছেন। আর ফিজিক্যালি ব্যাপারটা আরও ক্রিটিক্যাল। এমিবা মূলত জলজ প্রাণী। হাজার বছর ধরে বিবর্তিত হয়ে কিছু নতুন প্রাণী জল থেকে ডাঙায় উঠে আসে। ওইগুলোরেও মানুষের পূর্ব পুরুষ বলা যেতে পারে, যেহেতু ডাঙার প্রথম প্রাণী। এরপর পর্যায়ক্রমে অনেক বিবর্তন হইছে, কিছু আকাশে উড়ে গেছে, কিছু গাছে উঠে বসে আছে, কিছু মাটির তলায়, বাট সেইগুলা বাদ দিয়ে বান্দরগুলোরে নিয়ে এসে হাজির করাটা মূলত বিজ্ঞানমনস্কদের দুই নাম্বারি।
আমরা আজকে যে ফিজিক্যাল মানুষ দেখি, হুবহু এইরকম শারীরিক কাঠামোর একফুট সাইজের প্রাণী ছিলো পৃথিবীতে, মালদ্বীপে ছিলো ওদের বাসা। জলোচ্ছ¡াসে মরে গেছে, শারীরিকভাবে এরাও ফিজিক্যাল মানুষের আরেক প্রজাতি, বাট পূর্ব পুরুষ বলা যাবে না। এদের ইন্টেলেকচুয়ালিটি ছিলো না। এইরকম অনেক প্রজাতি আছে গুগল করলে জানা যাবে। কিছু প্রজাতি ছিলো শারিরীকভাবে শক্তিশালি, কিছু প্রজাতি ছিলো দুর্বল। এরা একে অন্যরে দেখলেই ধরে মেরে ফেলত। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, ওই শক্তিশালী প্রজাতিটাও ধ্বংস হয়ে গেছে সারভাইভ করতে পারেনি। টিকে আছে শুধু দুর্বল শারীরিক কাঠামো আর অসম্ভব ইন্টেলেকচুয়াল প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্স, বা আজকের মানুষ।
এই প্রজাতির মধ্যে যিনি সর্বপ্রথম ইন্টেলেকচুয়ালিটি অর্জন করেন, তিনিই পৃথিবীর প্রথম মানুষ, মানবজাতির আদি পিতা। ধর্মগ্রন্থের এই দাবিতে তো বিজ্ঞানের কোনো সমস্যা হচ্ছে না, ধার্মিকদেরও সমস্যা হচ্ছে না। এই আদি পিতাটির পরিচয় বিজ্ঞান বের করেনি, ধর্ম খুঁজে বের করছে, বিজ্ঞানের তাতে আপত্তিও নেই। আপত্তি শুধু বিজ্ঞানমনস্কদের। তারা বান্দরগুলোরে আব্বা বলে ডাকবেই। বিজ্ঞানি ড. সেঁজুতির এই বিজ্ঞানমস্কদের নিয়া এর বাইরে আর কি বলার আছে? লেখক: কথাসাহিত্যিক