টিকে থাকার পরীক্ষা
টমাস রবার্ট ম্যালথাস
ডারউইন ‘স্ট্রাগল ফর লাইফ’-এর ধারণা পেয়েছিলেন টমাস রবার্ট ম্যালথাসের কাছ থেকে। ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত অ্যান এসে অন দ্য প্রিন্সিপল অব পপুলেশন গ্রন্থে ম্যালথাস ওই ধারণা ব্যাখ্যা করেন। নিজে বেঁচে থাকার জন্য মনুষ্যজাতি কী না করছে? টিকে থাকার জন্য লড়াই, এই হচ্ছে চার্লস রবার্ট ডারউইন প্রবর্তিত বিবর্তনের মূল কথা। ডারউইন ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মহাগ্রন্থ অন দি অরিজিন অব স্পিসিস বাই মিনস অব ন্যাচারাল সিলেকশন, অর দ্য প্রিজারভেশন অব ফেভারড রেসেস ইন দ্য স্ট্রাগল ফর লাইফ-এ এই বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন। ডারউইন ‘স্ট্রাগল ফর লাইফ’-এর ধারণা পেয়েছিলেন টমাস রবার্ট ম্যালথাসের কাছ থেকে। ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত অ্যান এসে অন দ্য প্রিন্সিপল অব পপুলেশন গ্রন্থে ম্যালথাস ওই ধারণা ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, জনসংখ্যা বাড়ে গুণোত্তর প্রগতিতে। মানে যে সময়ে জনসংখ্যা বাড়ে দ্বিগুণ, তার পরবর্তী ধাপে ঠিক সে সময়ের ব্যবধানে জনসংখ্যা হয় চতুর্গুণ। তার পর সমান সময়ে ওই সংখ্যা হয় আটগুণ। কিন্তু আহার বাড়ে দুই, চার, ছয়, এই পাটিগাণিতিক প্রগতিতে। ডারউইন এবং বিবর্তনবাদের সহ-আবিষ্কর্তা আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস দু’জনেই পড়েছিলেন ম্যালথাসের বইটি। দু’জনেই ভাবেন ন্যাচারাল সিলেকশন বা প্রাকৃতিক নির্বাচনের কথা। যা বিবর্তনের এক নির্ণায়ক উপাদান। আহার্য কম, জনসংখ্যা বেশি, এই পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় প্রকৃতি। প্রকৃতি তখন নির্বাচন করে কাকে বাঁচিয়ে রাখবে, আর কাকে মরে যেতে দেবে। এ ভাবেই যুগে যুগে জীবের বিবর্তন হয়ে এসেছে। এই হল বিবর্তনবাদের মূল কথা। কেমন পরিস্থিতি হলে কোন জীব বেঁচে থাকবে বা না থাকবে, সেটা নির্ধারণ করে প্রকৃতি। এই তত্ত¡ জনপ্রিয় করেন ডারউইনের হিতাকাংখী টমাস হেনরি হাক্সলি।
বেঁচে থাকার লড়াইতে যোগ দিয়ে মানুষকে অনেক কিছু করতে হয়। যেমন বাসস্থানের সংস্থানে অরণ্য নিধন, অন্নসংস্থানের জন্য জীববৈচিত্র নষ্ট করা, প্লাস্টিক, রেফ্রিজারেটর,বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবহার। এই অভ্যাসের ফল মারাত্মক। অরণ্য নিধনের ফলে বৃষ্টিপাত কমেছে, জীববৈচিত্র নষ্ট করার ফলে উপকারী ওষুধ কমেছে, রেফ্রিজারেটরের ব্যবহার বায়ুমÐলে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন তৈরি হয়ে ওজোন হোল বাড়াচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন বাড়ছে। ওজোন স্তরের চাদর পৃথিবীকে মুড়ে রাখে। তাকে অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচায়।
সে চাদর ফুটো হলে পৃথিবীর বিপদ। উষ্ণায়ন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওজোন স্তরের ফুটো দিয়ে আসা অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মানুষের রোগভোগও বাড়ছে। পৃথিবীতে প্রাণীর বসবাসের পক্ষে ক্ষতিকর এই সব প্রভাব বিজ্ঞানীরা বুঝছেন কী করে? হ্রদের মাটি পরীক্ষা করে। এই হচ্ছে বিজ্ঞান। সাধারণ মানুষ কল্পনাও করতে পারবেন না, কী থেকে কোন বিপদের সন্ধান পাওয়া যায়। এই জন্যই রিচার্ড ফাইনম্যান গবেষণাকে বলেছিলেন সূ² গোয়েন্দাগিরি। বিজ্ঞান গবেষণার এ রকম গোয়েন্দা হচ্ছেন ভ‚তাত্তি¡কেরা। মানুষের টিকে থাকার লড়াইয়ের ফলে পৃথিবীর ক্ষতির খবর ভ‚তাত্তি¡কেরা স¤প্রতি সংগ্রহ করেছেন কানাডার ক্রফোর্ড হ্রদের পলিমাটি বিশ্লেষণ করে। ওখানকার পলিমাটি বিশ্লেষণ করে ভ‚তাত্তি¡কেরা যা জানতে পেরেছেন, তাতে ভ‚তত্তে¡র এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে।
অনেক দিন ধরে বেশ কিছু বিজ্ঞানী মানুষের দূষণপ্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করে একটা নতুন যুগের কথা বলে আসছিলেন। ভ‚তাত্তি¡কেরা পৃথিবীকে বিভিন্ন যুগে ভাগ করেন। যেমন হিমবাহ যুগ, প্রস্তর যুগ ইত্যাদি। এখন চলছে হলোসিন যুগ। ‘হলোস’ শব্দের অর্থ গ্রিক ভাষায় পূর্ণাঙ্গ। আর সিন মানে নতুন। শব্দটি যুগ হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। হলোসিন যুগ শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ১১,৭০০ বছর আগে। মানুষের টিকে থাকার লড়াইয়ের ফলে যে পরিমাণ পরিবেশদূষণ ঘটছে, সে হিসাবে ভ‚তাত্তি¡কেরা আর একটা নতুন যুগের কথা বলে আসছিলেন।
যে যুগ হল অ্যানথ্রোপোসিন। গ্রিক ভাষায় ‘অ্যানথ্রোপোস’ মানে মানুষ। অ্যানথ্রোপোসিন হল মনুষ্য যুগ। ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে ভ‚তাত্তি¡ক অ্যান্টোনিয়ো স্টোপ্পানি মনুষ্য যুগের কথা প্রথম বলেন। রসায়নে নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী পল জে ক্রুটজেন ১৯৭২ সালে ওই যুগের কথা সমর্থন করায় অ্যানথ্রোপোসিন শব্দটি বাড়তি মর্যাদা পায়। স্টোপ্পানি এবং ক্রুটজেন এই দু’জনের দাবি ছিল যে, মানুষ পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করছে। এতটাই যে, তা মিটবার নয়। গত বছর জুলাই মাসে ভ‚তাত্তি¡কদের যে আন্তর্জাতিক সম্মেলন বার্লিন শহরে বসেছিল, তাতে ওঁরা অ্যানথ্রোপোসিন নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, তবে কোনও ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেননি। মানুষ পরিবেশের যে ক্ষতি করছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা জরুরি।
টমাস রবার্ট ম্যালথাস এফআরএস, ছিলেন একজন ইংরেজ অর্থনীতিবিদ, ধর্মগুরু এবং রাজনৈতিক অর্থনীতি এবং জনসংখ্যার ক্ষেত্রে প্রভাবশালী পÐিত
সূত্র : আনন্দ বাজার। সংগ্রহ : মিরাজুল মারুফ