
মুদ্রাস্ফীতির ঘোড়ায় লাগাম দিন!

সৈয়দ ফাত্তাহুল আলিম
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ার দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে যে মূল্যস্ফীতি প্রত্যাশিত হারে কমছে না। জুলাই ২০২৩ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) অনুসারে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৯.৬৯ শতাংশ, যেখানে আগের মাসের জুন মাসে এটি ছিল ৯.৭৪ শতাংশ, সামান্য উন্নতি হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলায় সরকারের প্রচেষ্টা যেভাবে করা উচিত সেভাবে হচ্ছে না। মহামারী পরবর্তী পর্যায়ে মুদ্রাস্ফীতি সর্বত্র বেড়েছে এবং এর কারণ বোঝা কঠিন ছিল না বিশ্বব্যাপী সরবরাহ ব্যাহত হয়েছিল। তারপরে ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি ও খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে বিষয়টিকে আরও খারাপ করে তোলে। কিন্তু ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পণ্য ও জ্বালানির দামের অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার উন্নত অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি কমবেশি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় নেপালের মুদ্রাস্ফীতির হার, যা ২০২৩ সালের মে মাসে ৭.৪১ শতাংশ ছিল, ২০২৩ সালের জুনে ০.৫৮ শতাংশ পয়েন্ট কমে ৬.৮৩ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতির হার এই বছরের মে মাসে ৪.২৫ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালের জুনে বেড়ে তিন মাসের সর্বোচ্চ ৪.৮১-এ পৌঁছেছে। ভারতের ভোক্তা মূল্য সূচক ২০২২ সালের এপ্রিলে ৭.৭৯ শতাংশে সর্বোচ্চ ছিল। কিন্তু সা¤প্রতিক বৃদ্ধি সত্তে¡ও নিখুঁত পরিপ্রেক্ষিতে, ভারতে মুদ্রাস্ফীতির হার সেই দেশের সাধারণ ভোক্তাদের সহনীয় সীমার মধ্যে ভাল বলেই মনে হচ্ছে।
পাকিস্তানের বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার ২০২৩ সালের জুনে সর্ব্বোচ্চ ২৯.৪ শতাংশ ছিল, জুলাই ২০২৩-এ দ্বিতীয় মাসে মুদ্রাস্ফীতি ২৮.৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতির হার ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বছরের ভিত্তিতে বেড়ে তার ঐতিহাসিক সর্বোচ্চ ৬৯.৮ শতাংশে পৌঁছেছে। কিন্তু দেশটি ক্রমাগত দশম মাসে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে এটিকে ধীরে ধীরে ৬.৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
সুতরাং বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির এখন পর্যন্ত যা হয়েছে তা দ্রæত হারে নামিয়ে আনা উচিত। মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় কিছু প্রতিবেশী দেশের সাফল্য দেখা গেছে যদিও তারা বিশ্ববাজারে জ্বালানি ও পণ্যের দাম, মার্কিন ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সমানভাবে প্রভাবিত, বিস্ময় জাগে যে কেন বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন! প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার গ্রহনযোগ্য নয়।
অনেকেই দায়ী করতে চান আমদানিকারক বা পাইকারী বিক্রেতাদের ‘সিন্ডিকেট’কে যারা তাদের সুবিধার্থে পণ্য ও পরিষেবার দাম বাড়াতে কৃত্রিমভাবে সাপ্লাই চেইনকে নিয়ন্ত্রণ করে অতি-মুনাফা করার জন্য। তাই তারা সরকারকে বাজারে এদের দমন করার জন্য আহŸান জানায়। সরকারও সময়ে সময়ে বাজারের কারসাজি বন্ধ করার জন্য সন্দেহভাজনদের ব্যবসায়িদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে, কিন্তু এতে খুব কমই সাফল্য পেয়েছে।
মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলার পাশাপাশি টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের ক্রমাগত মূল্যায়নের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স¤প্রতি চলতি আর্থিক বছরের (২০২৩-২৪ অর্থবছর) প্রথমার্ধের জন্য একটি সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির অংশ হিসাবে মূল নীতির হারও ৫০ পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬.৫০ শতাংশ করা হয়েছে।
নতুন মুদ্রানীতি কীভাবে কার্যকর হবে তা খুব তাড়াতাড়ি বলা কঠিন। তবে কিছু অর্থনীতিবিদ মুদ্রাস্ফীতি ও রাজস্ব ঘাটতির কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ক্রমবর্ধমান ঋণকে দায়ি করেছেন। সরকারের বরং রাজস্ব সংগ্রহের প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করা উচিত, বিশেষ করে কর ফাঁকি দেওয়া অতি-ধনীদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করতে হবে। অর্থনীতিবিদরা বিশ্বাস করেন এটি কার্যকরভাবে মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলায় সহায়তা করবে।
সূত্র : দি ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস। অনুবাদ : মিরাজুল মারুফ
