বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে পাঁচ সমস্যা
সোহেল রহমান : পাইপ-লাইনে জমা হওয়া বৈদেশিক সহায়তার অর্থ কাঙ্খিত পরিমাণে ছাড় হয় না। পাশাপাশি প্রকল্প অনুমোদনে বিলম্ব ও বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা এবং অর্থের কার্যকর ব্যবহারে সক্ষমতার ঘাটতির কারণে বৈদেশিক সহায়তার যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে না। এছাড়া অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের অগ্রাধিকার এবং আর্থিক বিধি-বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বৈদেশিক অর্থায়ন সংগ্রহের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। দেশে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এ পাঁচটি বিষয়কেই সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে মনে করছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
ইআরডি’র মতে, এছাড়া কোভিড-১৯-এর অভিঘাত মোকাবেলায় বর্ধিত অর্থায়ন সংগ্রহ; স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ প্রক্রিয়াকালীন চ্যালেঞ্জ; সহজ শর্তের (নমনীয়) বৈদেশিক ঋণ ও উৎসের সঙ্কোচন এবং এর কার্যকর ব্যবহারে সক্ষমতার ঘাটতিও রয়েছে।
ইআরডি সূত্রে জানা যায়, বৈদেশিক সহায়তার সংগ্রহের উৎস বহুমুখীকরণের প্রচেষ্টা জোরদার করার লক্ষ্যে বর্তমানে ‘পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশীপ’ (পিপিপি), ‘সাউথ-সাউথ কর্পোরেশন’ ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে চিহ্নিত সমস্যাগুলো দূরীকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় অর্থায়নের লক্ষ্যে গ্রীণ ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ)-এর সঙ্গে চলমান কার্যক্রম আরও জোরদার করা হচ্ছে।
অন্যদিকে বৈদেশিক সহায়তা ব্যবস্থাপনায় গুণগত পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে উন্নয়ন সহায়তা সংক্রান্ত নীতিমালা-এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রæততর করার লক্ষ্যে প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজের অর্থ বরাদ্দ ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা এবং প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজের চেকলিস্ট প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া এইড ট্রান্সপারেন্সী ও মিউচ্যুয়াল একাউন্টিবিলিটি বাড়াতে উন্নয়ন সহযোগী কর্তৃক অন-লাইনে তথ্য সরবরাহ এবং বৈদেশিক অর্থায়নের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য ২টি ওয়েব-বেজড সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে।
ইআরডি’র হিসাব মতে, গত ২০১৯-২০, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে এর আগের তিনটি অর্থবছরের তুলনায় বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রæতি বেড়েছে। আলোচ্য তিন অর্থবছরে মোট ২ হাজার ৯৪২ কোটি ডলারের সহায়তার প্রতিশ্রæতি পাওয়া গেছে। বছরে প্রতিশ্রæতির গড় হচ্ছে ৯৮১ কোটি ডলার। অন্যদিকে একই সময়ে অর্থছাড়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৩১ কোটি ডলার। বছরে অর্থছাড়ের গড় হচ্ছে ৮৭৭ কোটি ডলার। এটি এর পূর্ববর্তী তিন অর্থবছরের চেয়ে ২০ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি।
চলতি অর্থবছরে ইআরডি’র উল্লেখযোগ্য কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছেÑ ৫৭টি বৈদেশিক চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে ৬০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার প্রতিশ্রæতি আদায়; ৫৫৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার বৈদেশিক সহায়তা ছাড় করা এবং ৩৫৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার বৈদেশিক দায় পরিশোধ করা। সংস্থার মতে, ধারণ ক্ষমতার মধ্যে বৈদেশিক ঋণ সীমিত রাখার নীতি অব্যাহতভাবে অনুসরণ করার কারণে আন্তর্জাতিকভাবে অনুসৃত ডেট সাসটেইনেবিলিটি-এর সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশের ঋণমান সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে।
অন্যান্য কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছেÑ প্রকল্প বাস্তবায়নে চিহ্নিত সমস্যা দূরীকরণে ৩৬টি ত্রি-পক্ষীয় সভার আয়োজন করা এবং সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ গ্রহণ; এলডিসি উত্তরণের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের জন্য গঠিত এসটিএস উপ-কমিটি/যৌথ টাস্ক টিম/ওয়ার্কিং গ্রæপের ৯টি সভার আয়োজন করা ইত্যাদি।