এডিস মশার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নতুন উপায় উদ্ভাবন জরুরি
সৈয়দ ফাত্তাহুল আলিম
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও) জাতীয় পর্যায়ে বাংলাদেশের ডেঙ্গুর ঝুঁকিকে ‘উচ্চ’ হিসেবে মূল্যায়ন করেছে। কিন্তু ডবিøউএইচও-এর উচ্চ ঝুঁকির সতর্কতা জারি করার আগেও, কারও মনে কোনো সন্দেহ ছিলো না যে ২০০০ সালের পর থেকে বাংলাদেশ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সবচেয়ে খারাপ পর্বের সম্মুখীন হচ্ছে যখন এই মশাবাহিত ভাইরাল রোগটি প্রথম আঘাত হানে প্রায় ৫,৫০০ জনকে সংক্রমিত করে এবং মৃতের সংখ্যা ৯৩ জন। তারপর থেকে এই রোগটি কখনোই দেশ ছেড়ে যায়নি, যদিও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা (যারা হাসপাতালে ভর্তি) এবং মৃত্যুর সংখ্যা ভিন্ন। এমনও বছর ছিল উদাহরণস্বরূপ, ২০০৭ থেকে ২০১০ এর মধ্যে, যখন ডেঙ্গু জনসাধারণকে সংক্রমিত করেছিল, কিন্তু কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
২০১৪ সালে আবারও একই ঘটনা ঘটে। কিন্তু ২০১৯ সালে বড় ধাক্কা না আসা পর্যন্ত সেগুলো ব্যতিক্রমী বছর ছিল যখন এই রোগের সংক্রমণ মহামারী আকারে পৌঁছেছিল এবং ১০০,০০০ এরও বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল যাদের মধ্যে ১৬৯ জন রোগী এই রোগে মারা গিয়েছিল। পরের দুই বছরে দেশটিতে ডেঙ্গুতে কম সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে, যদিও ২০২৩ হল আরও একটি বছর যা ২০১৯ এর সাথে তুলনীয়, কিন্তু মৃত্যু সংখ্যা ইতোমধ্যেই ২০১৯-এর তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে ৩৮৭ জনের মধ্যে ৮২,৫০০ জনের বেশি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, ১২ আগস্ট পর্যন্ত, স্বাস্থ্য পরিষেবার মহাপরিচালক (ডিজিএইচএস) অনুসারে।
যাইহোক, গত বছর (২০২২) আরও একটি মারাত্মক ডেঙ্গু-বিধ্বস্ত বছর ছিল, তখন ২৮১ জন মারা গেছে, যেখানে মোট সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ৬২,০০০ এরও বেশি। স্পষ্টতই গত কয়েক বছরের রেকর্ড থেকে দেখা যাচ্ছে যে ডেঙ্গু দিন দিন মারাত্মক হচ্ছে। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অনুপাত বাড়ছে, যা প্রতি হাজারে ৫-এর কাছাকাছি এবং সম্ভবত, এখন পর্যন্ত বিশ্বে সর্বোচ্চ। এই বিষয়ে রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো এডিসেজিপটি মশাকে মেরে ফেলা এবং এর প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করা। কিন্তু সব দেখাদেখি ডেঙ্গুর কারণ এডিস মশা নির্মূলের দায়িত্ব দুই সিটি কর্পোরেশনকেই দিচ্ছে। সা¤প্রতিক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে পাইরেথ্রয়েডস গ্রæপের বোতলজাত কীটনাশক, একটি জৈব যৌগ যা মশা, মৌমাছি এবং বিভিন্ন ধরনের মাছির জন্য বিষাক্ত, কিন্তু মানুষের জন্য নয়, এডিস মশা নিধনে ভালো কাজ করছে না।
আসলে মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ায় করা পরীক্ষায় দেখা গেছে যে সাধারণভাবে ব্যবহৃত তরল কীটনাশক প্রয়োগের পর, ঢাকা থেকে নেওয়া ডিম থেকে জন্মানো উড়ন্ত বা বিশ্রামরত এডিস মশার ৭৪ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে বেঁচে থাকে। তার মানে, কোনো না কোনোভাবে ঢাকা বা বাংলাদেশের এডিস মশা কীটনাশক-প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। দেশের ক্রমবর্ধমান জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির জন্য এটি আরও একটি খারাপ খবর যা বেশির ভাগ ভেক্টর-বাহিত রোগ, ডেঙ্গুর জন্য দায়ী। একই মতপ্রকাশ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত¡বিদ কবিরুল বাশারও। তার মতে, আরডেস মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে বলে আগের ধারণা আর সঠিক নয়।
মশা নতুন অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে শিখেছে কারণ এটি নোংরা এমনকি নোনা পানিতেও ডিম পাড়তে দেখা গেছে। আরও খারাপ এটি রাতে কামড়াতেও শিখেছে (আগে মনে করা হতো যে এটি কেবল দিনের বেলায় কামড়ায়)। এখন ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে দ্রæত ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ায় দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। রোগ-সৃষ্টিকারী মশা দমনে স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোও তাই। মশা তার আচরণ পরিবর্তন করছে এবং বিদ্যমান কিছু টক্সিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে উঠছে দেখে, এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নতুন কৌশল উদ্ভাবন করতে হবে। এটি প্রজনন স্থল থেকে এডিস মশা নির্মূল করার উপায় উদ্ভাবনের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তায় প্রয়োজনে গবেষণা পরিচালনার আহŸান জানাই। সূত্র : দি ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস। অনুবাদ : মিরাজুল মারুফ