ডিজিটাল ব্যাংকিং : ভালো খবর, তবে উদ্বেগও আছে
আফসান চৌধুরী
বাংলাদেশে এ ধরনের প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য বেশকিছু বড় নাম আবেদন করেছে। এই নামগুলোর মধ্যে রয়েছে চারটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক- সোনালী, অগ্রণী, জনতা এবং রূপালী। তারা ছাড়াও দারাজের মতো ই-কমার্স এবং বিকাশ, বাংলালিংক দরজায় কড়া নাড়ছে। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে একটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। কিন্তু কিছু শিল্পপতি ব্যক্তি এই খাতে প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রবেশের পাশাপাশি একটি নতুন খাত নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সহ কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা এবং ক্ষমতা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন তুলেছেন।
ডিজিটাল ব্যাংক প্ল্যান : ডিজিটাল ব্যাংকগুলো শুধুমাত্র ভার্চুয়াল পরিসরে কাজ করবে। এটি তার গ্রাহকদের ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে পরিষেবাগুলোতে ব্যবহারের উৎসাহ দিবে। এর অর্থ হবে কম সংখ্যক লোক, ফ্লোর স্পেসে বিনিয়োগ ইত্যাদি। নতুন পরিষেবাগুলো হবে ভার্চুয়াল ডেবিট কার্ড সুবিধা এবং তাৎক্ষণিক ব্যক্তিগত ঋণ যা প্রায় অবিলম্বে অনুমোদন করা যেতে পারে।
লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা : একটি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপন করা একটি আদর্শ ব্যাংকের চেয়ে কম ব্যয়বহুল হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিকা অনুসারে, ন্যূনতম মূলধনের প্রয়োজন ১.২৫ বিলিয়ন টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে যেখানে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে কাগজপত্র সম্পন্ন করতে ৫.০ বিলিয়ন টাকা আনতে হবে। প্রতিটি স্পনসরের সর্বনি¤œ শেয়ারহোল্ডিং হবে ৫ মিলিয়ন টাকা (সর্বোচ্চ ১০% বা ১২৫ মিলিয়ন টাকা)। এই ডিজিটাল ব্যাংকগুলো ব্যাংকিং কোম্পানি আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছে বিবি। শীঘ্রই নির্দেশিকা চূড়ান্ত করা হবে। এটি বিশেষত অ-মেট্রোপলিটন এলাকায় কম বা মফস্বলের মানুষের পরিষেবাও দিবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের জন্য ব্যাংক এবং অন্যান্য সংস্থার কাছ থেকে ৫২টি আবেদন পেয়েছে বলে জানা গেছে। সময়সীমা শেষ হয়েছে গত সপ্তাহে। যদিও কিছু স্বাধীন আবেদনকারী, বিভিন্ন সংগঠনও রয়েছে। সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ইস্টার্ন, ডাচ-বাংলা, ট্রাস্ট, প্রাইম, পূবালী, এনসিসি এবং মিডল্যান্ড বিনিয়োগের জন্য হাত মিলিয়েছে, ব্যাংক এশিয়া ও ঢাকা ব্যাংকও সক্রিয় রয়েছে। ইতিমধ্যে বিকাশ এবং নগদ পৃথকভাবে ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। বিকাশ ইতিমধ্যেই ব্র্যাক ব্যাংকের সাথে অংশীদারিত্বে নাম ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছে। বাংলালিংক ক্লাস্টারে যোগ দেওয়ার কথা ভেবেছিল কিন্তু পরে একা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিদ্যমান বাণিজ্যিক ব্যাংকে প্রবেশের বিষয়ে উদ্বেগ : ডিজিটাল ব্যাংকিংকে ঘিরে অনেক হাইপ তৈরি করা হয়েছে কিন্তু কিছু ব্যক্তি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যার মধ্যে কিছু আবেদনকারীর মধ্যে থেকেও রয়েছে। তারা যুক্তি দেখান যে বিদ্যমান বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে অনুমতি দেওয়া অন্যায্য এবং সম্ভবত নৈতিক নয়। প্রধান যুক্তি হল প্রথাগত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাদের ক্লায়েন্টদের ডিজিটাল পরিষেবা দেওয়া থেকে কী বাধা দিচ্ছে? যদি তাদের অনুমতি দেওয়া হয় তাহলে “ নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডিজিটাল ব্যাংকগুলোর জন্য এটি অত্যন্ত অন্যায্য প্রতিযোগিতা হবে কারণ বিদ্যমান বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের কাছে প্রয়োজনীয় ‘কেওয়াইসি’ (আপনার ক্লায়েন্টকে জানুন) ডেটা সহ একটি বিশাল ক্লায়েন্ট বেজ নিয়ে বসে আছে। তারা প্রস্তাবিত ব্যাংকিংয়ের জন্য উল্লেখযোগ্য মূল্য সংযোজন করবে না। সমস্যাটিকে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকগুলোর জন্য একটি অন্যায্য সুবিধা হিসাবে দেখা হচ্ছে যেগুলো তাদের সমস্ত সমস্যাও নিয়ে আসে।
নিরাপত্তা, ক্ষমতা এবং দুর্নীতি সম্পর্কিত উদ্বেগ : অন্য উদ্বেগ ডিজিটাল নিরাপত্তা সম্পর্কে, যেখানে বাংলাদেশ ডিজিটাল নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে আলোচনা করে এবং সে অনুযায়ী নিজেকে ব্র্যান্ড করে, সা¤প্রতিক হ্যাকিং পর্ব সহ অনেক ত্রæটি নিরাপত্তা ক্ষমতা নিয়ে গুরুতর সন্দেহ সৃষ্টি করে। ডিজিটাল ব্যাংকের বিষয়ে বিবির পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। ই-কমার্স সেক্টরেও খুব উচ্চ মাত্রার কেলেঙ্কারী দেখা গেছে। যা নিয়মিত মিডিয়ায় রিপোর্ট করা হয়। ই-তত্ত¡াবধানের ক্ষমতার স্তরের পরিপ্রেক্ষিতে, ক্লায়েন্টদের কোন নতুন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ঠেলে দেওয়া হচ্ছে তা বলা হয়নি। সম্ভাব্য উচ্চ সুদের হার অনেক গ্রামীণ ক্লায়েন্টকেও আকর্ষণ করবে। অবশেষে, বাংলাদেশ ব্যাংক সহ কর্তৃপক্ষ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষমতা কম দেখিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক, হিসাববিহীন সংস্থা যারা তাদের গ্রাহকদের প্রতারণা করে এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে হয় অনুমতি দেয় বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। একটি উদাহরণ হল পিপলস লিজিং এবং সর্বোত্তম উদাহরণ হল হালদারের ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। তাই সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও ব্যাপকভাবে প্রয়োজন।এই কারণেই নতুন উদ্যোগ নিয়ে কিছু উদ্বেগ ও সমস্যার কথা উত্থাপিত হচ্ছে।
. সূত্র : ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস।
অনুবাদ : মিরাজুল মারুফ