বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইনের সংস্কার শেষ
আব্দুর রহিম : [১] চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সা¤প্রতিক বন্যায় দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। গত সোমবার শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার সংস্কারকাজ শেষ হয়।
[২] গত শুক্রবার সকালে সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইনে গিয়ে দেখা যায়, পাথর, খোয়া ও বালু সরে যাওয়ায় কয়েক দিন আগেও যে রেললাইন আঁকাবাঁকা দেখাচ্ছিল তা এখন বোঝার সাধ্য নেই। রেললাইনের কোথাও বন্যার ক্ষতচিহ্ন নেই।
[৩] দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের সহকারী প্রকল্প ব্যবস্থাপক (ডিপিএম) মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইনের সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। মাত্র চার দিনের মধ্যে সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। বন্যায় রেললাইনের তেমুহনীতে ২৫০ মিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পানির স্রোতে রেললাইনের পাথর, কংকর মাটি সরে গিয়েছিল।
[৪] ফলে কয়েকটি অংশে রেললাইন কিছুটা দেবে গিয়েছিল। আবার কোথাও কোথাও লাইনের নিচে গর্তের সৃষ্টি হয়েছিল। টেকনিক্যাল টিম যেভাবে পরামর্শ দিয়েছে আমরা সেভাবে সংস্কারকাজ সম্পন্ন করেছি।
[৫] তিনি আরো বলেন, হাইড্রোলিক জগ দিয়ে দেবে যাওয়া লাইন সামান্য ওপরে তুলে নিচে পাথর, কংকর ও বালু দিয়ে দিয়েছি। আর পানির স্রোতে সৃষ্ট গর্তগুলো পাথর, কংকর ও বালু দিয়ে ভরাট করে দিয়েছি।
[৬] প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, তেমুহনীতে বন্যায় রেললাইনের যে ক্ষতি, সেটা আসলে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি নয়। মাত্র ২৫০ মিটার এলাকায় কিছু কিছু অংশে পানির স্রোতে লাইনের নিচ থেকে পাথর, কংকর ও মাটি সরে গিয়েছিল। তা-ও একটানা নয়, কোথাও পাঁচ মিটার, কোথাও সাত মিটার, এভাবে। পাথর সরে যাওয়ায় কয়েকটি স্থানে লাইন দেবে গিয়ে কিছুটা আঁকাবাঁকা দেখাচ্ছিল। এখন আর কোনো সমস্যা নেই।
[৭] এখন প্রকল্পের কত শতাংশ কাজ বাকি আছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো ১০ থেকে ১২ শতাংশ কাজ বাকি আছে। বিশেষ করে দোহাজারী, কালিয়াইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও হারবাং এলাকায় কিছু কাজ রয়ে গেছে। এসব কাজ দ্রæতগতিতে এগিয়ে চলছে। বৃষ্টির কারণে কাজে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টিতে মাটি ভিজে গেলে কাজ করা যায় না। এর পরও বর্ষার বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। এখন একটাই চ্যালেঞ্জ, বৃষ্টির মধ্যে কাজ শেষ করা। যতটুকু কাজ বাকি আছে তা সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে পারব। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০০ কিলোমিটার দীর্ঘ দোহাজারী-কক্সবাজার ডুয়াল গেজ এবং সিঙ্গল ট্র্যাক রেললাইন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।
[৮] প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান আরো বলেন, সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় নতুনভাবে আরো তিনটি কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। কোন কোন জায়গায় এসব কালভার্ট হবে তা নির্ধারণ করে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে বিলের পানি শুকিয়ে গেলে এসব কালভার্টের কাজ শুরু হবে।
[৯] এ মাসের শুরুতে প্রবল বর্ষণ, সাঙ্গু, ডলু নদী ও হাঙ্গর খাল দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সাতকানিয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে ভয়াবহ বন্যা হয়। এ সময় সাতকানিয়ার তেমুহনী এলাকায় দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এতে পানির স্রোতে রেললাইনের নিচ থেকে পাথর, কংকর ও মাটি সরে গিয়ে লাইন দেবে যায়। পাথর ও মাটি সরে যাওয়ায় লাইনের কিছু কিছু অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। সূত্র : কালের কন্ঠ