মো. আখতারুজ্জামান : [১] মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, নির্যাতনের মুখে ৬ বছর আগে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন। বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে বসবাস করছে। কখন তারা স্বদেশে ফিরে যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
[২] তবে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রত্যাবাসন ইস্যুতে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, প্লেস অব অরিজিন অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের নিজ ভ‚মিতে ফেরত নিতে নমনীয়তা প্রকাশ করেছে মিয়ানমার।
অন্তত উত্তর মংডু থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে চায় মিয়ানমার। কিন্তু প্রক্রিয়াটি কিভাবে হবে সেটি এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। এবিষয়ে দুদেশের মধ্যে দফায় দফায় সভা হচ্ছে। এসময় শিগগিরই প্রত্যাবাসন শুরু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। [৩] তবে তার বক্তব্যে কত সংখ্যক রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়া হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা না পাওয়া গেলেও উত্তর মংডু থেকে বাংলাদেশে আসা নতুন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ বলে জানা গেছে।
[৪] ৫৮২.৯২ মাইল আয়তন বিশিষ্ট রাখাইনের মংডু জেলায় এক সময় জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই ছিলো রোহিঙ্গা। এ জেলার ১০৮টি গ্রামের মধ্যে উত্তরাংশেই পড়েছে ৭০টি গ্রাম। বাংলাদেশের ঘুমধুম থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সীমান্ত সংলগ্ন এই গ্রামগুলো ছিলো রোহিঙ্গা অধ্যুষিত, যাদের ৯৯ শতাংশই বাস্তুচ্যুত হয়ে বর্তমানে বাস করছে উখিয়া টেকনাফের আশ্রয় শিবিরগুলোতে।
[৫] উত্তর মংডুর ফকিরাবাজারে ৫ একরের বেশি জায়গা আছে উখিয়ার ১১নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ আইয়ুবের। ৭৮ বছর বয়সী এই রোহিঙ্গা পরিবার নিয়ে নিজ ভিটে মাটিতে ফিরে গিয়ে কাটাতে চান জীবনের শেষ দিনগুলো।
[৬] আইয়ুব বলেন, ফকিরাবাজার ছিলো সবুজে ভরা কৃষি নির্ভর সমৃদ্ধ গ্রাম। আমাদের গোলাভর্তি ধান ছিলো, গোয়ালভর্তি গরু। আগের দিনগুলো আর ফেরত পাবো না, তবে মৃত্যুর আগে সেখানে আবার ফিরতে চাই, নিজ মাটিতে মরতে চাই।
[৭] রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, মিয়ানমার এরকম আশা অনেকবার দেখিয়েছে এবার যদি সত্যিই তারা এরকম পদক্ষেপ নিতে চায় তাহলে রোহিঙ্গারা যেতে প্রস্তুত আছে। তবে অবশ্যই পূর্ণ নাগরিক অধিকার এবং নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
[৮] জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে সাত লাখ ৪১ হাজার ৮৪১ জন রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনসংখ্যা ৯ লাখ ৬২ হাজার ৪১৬ জন। কক্সবাজারের ৩৩টি ক্যাম্পে ৯ লাখ ৩১ হাজার ৯৬০ জন রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। ভাসানচরে অবস্থান করছেন আরও ৩০ হাজার ৪৫৬ জন।