ভোক্তা অধিকারকে ডাব বিক্রেতারা পারলে ডাবের আড়তে অভিযান চালান, দাম এমনিতেই কমবে
আব্দুর রহিম : [১] আমরা গরিব মানুষ। ১০ টাকা লাভ হলেই ডাব বিক্রি করে দিই। আমরা ডাবের দাম বাড়াই না, আড়তদাররা বাড়ায়, আমাদের ওপর অভিযান চালালেই হবে না। পারলে আড়তে অভিযান চালান, দাম এমনিতেই কমে যাবে।
[২] মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অভিযানে আসা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি দলের প্রধান আব্দুল জাব্বার মÐলকে এ কথা বলেন ডাব বিক্রেতা সেলিনা খাতুন (ছদ্মনাম)।
[৩] তিনি বলেন, আড়তদাররা যদি ১০ টাকা কমে ডাব বিক্রি করে, আমরাও সবাইকে কম দামে ডাব দিতে পারি।
[৪] গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে মধ্যবয়সী এই নারী ডাব বিক্রেতা বলেন, আমরা ১৫০ টাকা পিস ডাব কিনলে বিক্রি করি ১৭০ টাকা। আর ১০০ টাকা পিস কিনলে বিক্রি করি ১১০ থেকে ১২০ টাকা। ডাব কেনার ওপর নির্ভর করে কোন দামে বিক্রি করব। তারা কম দামে বিক্রি করলে আমরাও কম দামে ডাব বিক্রি করতে পারি। অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া আব্দুল জব্বারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, অভিযান খালি আমাদের এখানে করলে হবে না। আড়তে গিয়ে অভিযান করেন, এমনিতেই ডাবের দাম কমে যাবে।
[৫] অভিযান করলে আমাদেরই লাভ উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভিযান করলে দাম কমবে, মানুষ ডাব কিনে খেতে পারবে। আগে যেখানে দিনে ১০০ থেকে ১৫০টি ডাব বিক্রি করতাম এখন দাম বাড়ার পর বিক্রি করছি ৪০ থেকে ৫০ পিস। আমাদের লোকসান হচ্ছে। যখন ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করতে পারব, তখন সবাই ডাব খেতে পারবে। এখন রোগী ছাড়া কেউ ডাব খায় না।
[৬] আরেক ডাব বিক্রেতা সুমন জানান, মঙ্গলবার তিনি ৯০ থেকে ১০০ টাকা পিস ডাব বিক্রি করছেন। তার কেনা মূল্য ৭৫ টাকা। তবে গণমাধ্যমকর্মী এবং অভিযানে আসা আব্দুল জাব্বারের উপস্থিতিতে একজন ক্রেতা অভিযোগ করেছেন মঙ্গলবার সকালে সুমনের কাছ থেকে ১২০ টাকা দিয়ে ডাব কিনেছেন তিনি। সুমন সঙ্গে সঙ্গেই তা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমি ১০০ টাকার বেশি দরে ডাব বিক্রি করিনি।
[৭] ব্যবসায়ীরা বলছেন, আড়ত থেকে একশ ডাব আনতে হলে কয়েলি (আড়ত থেকে মাল বের করে দেওয়া) বাবদই দিতে হয় ৪০০ টাকা। আড়তে অভিযান চালালে ডাবের দাম আরও কমবে।
[৮] অভিযান শেষে ভোক্তা অধিকারের প্রতিনিধি দলের প্রধান বলেন, সোমবার সিদ্ধান্তের আলোকে আজ (মঙ্গলবার) অভিযান পরিচালনা করছি। ভোক্তারা অভিযোগ করেছেন অভিযানের আগেও অর্থাৎ মঙ্গলবার সকালে এখানে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা পিস ডাব বিক্রি হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন ৯০ থেকে ১০০ টাকা পিস বিক্রি করছেন। আমরা ভ্যানে করে ডাব বিক্রয়কারী ব্যবসায়ীদের ডাবের কেনা মূল্য জানতে চেয়েছি। তারা আমাদের কেনা মূল্য দেখিয়েছেন। তাতে দেখেছি কেউ কিনেছেন ৭৫ টাকায় আর কেউ কিনেছেন ১১৪ টাকা পিস। পাইকারিতে যারা ১১৪ টাকা পিস বিক্রি করেছেন তারা কীভাবে এত মূল্য নিলো, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
[৯] তিনি বলেন, আজ কাউকে জরিমানা করা হয়নি। সবাইকে সর্তক করা হয়েছে। ডাবের মূল্য টানানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডাবের মূল্য ১০০ টাকা কি যৌক্তিক মূল্য? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১০০ টাকার কম-বেশি হতে পারে। তবে আমরা দেখছি রসিদ আছে কি না।
[১০] এসময় উপস্থিত এক ক্রেতা বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের জিম্মি করে ডাবের দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম বাড়ায় প্রয়োজন থাকা সত্তে¡ও গত তিন মাসে একটি ডাবও খাইনি। সূত্র : ঢাকাপোস্ট