বীমা খাতের দাপটে চাঙ্গা হচ্ছে শেয়ারবাজার ডিএসইর লেনদেন ৬০০ কোটি টাকার বেশি
মাসুদ মিয়া: [১]দেশের শেয়ারবাজার পতন কাটিয়ে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে । গত কয়েক কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে। গতকাল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক বেড়েছে। সেই সঙ্গে ডিএসইতে লেনদেন বেড়ে ৬০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
[২]গত কয়েক কার্যদিবসে শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী রাখতে বীমা খাত তেমন ভূমিকা রাখতে না পারলেও গতকাল সূচক ও লেনদেন বাড়াতে দাপট দেখিয়াছে বীমা খাতের কোম্পানিগুলো। এদিন বীমা খাতের প্রায় সবকটি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ায় একদিকে মূল্যসূচক যেমন বেড়েছে, তেমনি বড় হয়েছে দাম বাড়ার তালিকা। সেই সঙ্গে এক মাস পর ডিএসইতে ৬০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।
গতকাল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী দেখা মেলার মাধ্যমে শেষ সাত কার্যদিবসের মধ্যে ছয় কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকলো শেয়ারবাজার। অবশ্য এর আগে নানা গুজবে শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দেয়। সেই সঙ্গে দেখা দেয় লেনদেন খরা। ডিএসইতে লেনদেন কমে দুইশ কোটি টাকার ঘরে নেমে যায়। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।
[৩]এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, কয়েকদিন ধরে সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকায় এবং ধীরে ধীরে লেনদেনের গতি বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক কিছুটা হলেও কমে এসেছে। সেই সঙ্গে বাজারে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়া কিছু বড় বিনিয়োগকারী আবার নতুন করে সক্রিয় হয়েছে বলে বাজারে গুঞ্জন রয়েছে। কয়েক কার্যদিবস ধরে শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। তার মানে এ নয় বাজার সংকট থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে এসেছে। শেয়ারবাজার বরাবরই চ্যালেঞ্জিং। বর্তমান পরিস্থিতিতেও বুঝে শুনে বিনিয়োগ করা উচিত। ভালো শেয়ার বাছাই করে বিনিয়োগ করতে পারলে লাভ হবে। কিন্তু গুজবে শেয়ার কিনলে লোকসানের সম্ভাবনাও আছে।
[৪]গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। সেই সঙ্গে লেনদেনেও ভালো গতি দেখা যায়। এতে প্রথম আধাঘণ্টাতেই ডিএসইতে প্রায় এক’শ কোটি টাকা লেনদেন হয়ে যায়। সেই সঙ্গে এক’শ এর বেশি প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায়। মূল্যসূচকেরও বড় উত্থান হয়। লেনদেনের শুরু থেকেই দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখাতে থাকা বীমা খাত। যা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তবে শেষদিকে কিছু বীমা কোম্পানির দাম বাড়ার প্রবণতা কিছুটা কমে। এরপরও দিনের লেনদেন শেষে ৪৫টি বীমা কোম্পানি দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নেয়। বিপরীতে দাম কমেছে মাত্র একটির। বীমার এমন দাপটের দিনে লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ১২২ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৫টির। আর ১৭৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
[৫]এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১২ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩১১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৭৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৪৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের গতিও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৪৫৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ১৫৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে চলতি বছরের ২ আগস্টের পর ডিএসইতে আবারও ছয়’শ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো।
[৬]গত কয়েক কার্যদিবসের মতো লেনদেনের শীর্ষ স্থানটি ধরে রেখেছে ফু-ওয়াং ফুডের শেয়ার। কোম্পানিটির ৫৬ কোটি ৪১ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইস্টার্ণ হাউজিংয়ের ৩০ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে-খান ব্রদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, জেমিনি সি ফুড, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এমারেল্ড অয়েল, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স।
[৭]অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩০ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ১৭০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২১টির এবং ৭৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।