
পায়রা বন্দরের জন্য প্রাক্কলিত দরের চেয়ে অধিক ব্যয়ে কেনা হচ্ছে মোবাইল হারবার ক্রেইন
সোহেল রহমান : পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনালের জন্য মোবাইল হারবার ক্রেইন ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। দেশিয় প্রতিষ্ঠান ‘সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড’ এই ক্রেন সরবরাহ করবে। এতে ব্যয় হবে ১০৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র সভায় এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণায় সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পটি ৪ হাজার ৫১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।
প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপি-তে ক্রেন স্থাপনের কাজটি উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করে সম্পাদনের জন্য নির্ধারিত থাকলেও পিপিআর ২০০৮-এর বিধি-৮৪ক(২) অনুযায়ী হোপ-এর অনুমোদনক্রমে এক ধাপ দুই খাম দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এটি ক্রয় পরিকল্পনার জিডি-৫ প্যাকেজের অন্তর্ভূক্ত, এর বিপরীতে ৮০ কোটি টাকার সংস্থান রয়েছে। এ কাজের প্রাক্কলিত মূল্য ৮০ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, কাজটি সম্পাদনের লক্ষ্যে পিপিআর-২০০৮ অনুসরণে ২০২২ সালের ১৪ জুলাই দরপত্র আহŸান করা হয়। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি স্থানীয় কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এবং সিপিটিইউ-এর ওয়েবসাইট ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া ‘ডিজি মার্কেট’-এ প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞাপনে সাড়া দিয়ে ৮টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র ক্রয় করে। দরপত্র দাখিলের নির্ধারিত দিনে ৩টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে।
সূত্র জানায়, দরপত্র উন্মুকরণ ও মূল্যায়নের লক্ষ্যে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় কর্তৃক দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) গঠন করা হয়। দরপত্রে অংশগ্রহনকারী প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছেÑ সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড; চীনা প্রতিষ্ঠান ‘নানাটং রেইনবো হেভি মেশিনারিজ’ এবং হংকং-এর প্রতিষ্ঠান ‘সানি ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড’। এর মধ্যে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি চীনা প্রতিষ্ঠান ‘নানাটং রেইনবো হেভি মেশিনারিজ’ এবং হংকং-এর প্রতিষ্ঠান ‘সানি ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড’-কে কারিগরিভাবে নন- রেসপন্সিভ হিসেবে ঘোষণা করে। অন্যদিকে দরপত্রের সব শর্ত পূরণ করায় ‘সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড’-কে কমিটি টেকনিকালি রেসপন্সিভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা পরবর্তীতে হোপ কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশে ‘সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড’-এর দাখিল করা দর ১০৯ কোটি ৫৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা গ্রহণ করে প্রতিষ্ঠানটির অনুকূলে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড জারি করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত: ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রস্তাবিত দর প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়নের সময় ইউরো’র দর ছিল বাংলাদেশি টাকায় ৯৭ টাকা ৩৫ পয়সা। চলতি বছরের ২ ফেব্রæয়ারি এ বিনিময় হার দাঁড়িয়েছে ১১৭ টাকা ৯৭ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউরো-তে ২০ টাকা ৬২ পয়সা বেড়েছে। এছাড়া শিল্পের কাঁচামাল ও জাহাজের ভাড়া বৃদ্ধির কারণেও ব্যয় বেড়েছে। টিইসি মোবাইল হারবার ক্রেনের জরুরী প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে ডিপিপি প্রণয়নকালের প্রাক্কলন অপেক্ষা ৩৬ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি দরে ক্রয় প্রস্তাব গ্রহণের সুপারিশ করেছে।
সূত্র জানায়,সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী সভায় এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। কমিটি প্রস্তাবটিতে অনুমোদন দিলে দরপত্রে সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হবে এবং ক্রেন সংগ্রহর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
