মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ২৪২ কোটি ৮১ লাখ টাকা স্পট মার্কেট থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাব ওঠছে ক্রয় কমিটিতে
সোহেল রহমান : [১] বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে স্পট মার্কেট থেকে দুই কার্গো লিকুইডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। পেট্রোবাংলা এটি আমদানি করবে। প্রতি কার্গোতে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ হিসাবে দুই কার্গোতে মোট ৬৭ লাখ ২০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি থাকবে। একটি কার্গো সরবরাহ করবে সুইজারল্যান্ডের ‘মেসার্স টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড’ এবং অপরটি সিঙ্গাপুরের ‘ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’ সরবরাহ করবে। দুই কার্গো আমদানিতে মোট ব্যয় হবে প্রায় ১ হাজার ২৪২ কোটি ৮১ লাখ টাকা। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এ-সংক্রান্ত দুটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
[২] জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দেশের বিদ্যমান ও ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা পূরণে ‘রাস লাফ্ফান লিকুইডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি’ (কাতার গ্যাস) এবং ‘ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল’ (বর্তমান নাম ওকিউটি)-এর সঙ্গে দুটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির মাধ্যমে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। এছাড়া অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র অনুমোদনক্রমে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ২১টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ‘মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ’ (এমএসপিএ) চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা কর্তৃক দুই কার্গো এলএনজি আমদানির জন্য ২১টি প্রতিষ্ঠানের কাছে দুটি পৃথক দরপ্রস্তাব আহŸান করা হলে উভয় প্রস্তাবেই ২টি করে প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে এবং রেসপনসিভ হয়। [৩] সূত্র জানায়, দুই দরপত্রের একটিতে সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি’র (পিপিসি) সুপারিশের প্রেক্ষিতে সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মনোনীত হয়েছে সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড’। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩ দশমিক ৭৭ ডলার দরে টোটাল এনার্জি থেকে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ৫৯৫ কোটি ৪৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকা।
[৪] প্রসঙ্গত: ইতোপূর্বে গত জুলাই ও আগস্টে একই কোম্পানি থেকে এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হয়েছে যথাক্রমে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪০৯ কোটি ৯ লাখ টাকা (প্রতি এমএমবিটিইউ ১১ দশমিক ১৭ ডলার) এবং ৪৭৮ কোটি ৬৩ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। সে হিসাবে এবার ব্যয় বাড়ছে।
[৫] অন্যদিকে দ্বিতীয় দরপত্রে সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটি’র (পিপিসি) সুপারিশের প্রেক্ষিতে সর্বনি¤œ দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মনোনীত হয়েছে সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান ‘ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৪ দশমিক ৯৭ মার্কিন ডলার দরে ভিটল এশিয়া থেকে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ৬৪৭ কোটি ৩৫ লাখ ৭ হাজার টাকা।
[৬] জানা যায়, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি’র মূল্য স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে বহুগুনে বেড়ে যাওয়ায় ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ ছিল। চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতির ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহে বিঘœ ঘটে। গ্যাসের ঘাটতির ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্যাস সরবরাহ নির্বিঘœ করতে এবং গ্যাসের উর্ধ্বমূল্য বিবেচনায় প্রয়োজনে বর্ধিত মূল্যে হলেও গ্যাস সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়।
[৭] এ অবস্থায় স্পট মার্কেট থেকে উচ্চ মূল্যে এলএনজি আমদানির বর্ধিত ব্যয় নির্দিষ্ট শ্রেণীর ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে আদায়ের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জারিকৃত এসআরও অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ১৪ টাকা ঘনমিটার, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকা ঘনমিটার এবং বাণিজ্যিক (হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য) ক্ষেত্রে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকা ৫০ পয়সা ঘনমিটার নির্ধারণ করা হয়, যা ২০২৩ সালের ফেব্রæয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে।