জনতা ব্যাংকের তিন মাসে আমানত বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা বেক্সিমকোর ঋণে ঝুঁকি নেই : এমডি আবদুল জব্বার
মাসুদ মিয়া: [১] রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের তিন মাসে আমানত বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। বেক্সিমকোকে ঋণ দিয়ে ঝুঁকিতে নেই জনতা ব্যাংক বরং বেক্সিমকো’র মতো গ্রæপের গ্রাহক পেয়েছে, এটাই জনতা ব্যাংকের বড় প্রাপ্তি।
[২]গতকাল বুধবার এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ব্যাংকের বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ চায়িতায় জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুল জব্বার এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বেক্সিমকো দেশের শিল্পখাতের বিকাশে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ১ লাখ লোক কাজ করছে। দেশের রফতানি খাতে বড় ভূমিকা রয়েছে গ্রæপটির। বেক্সিমকো ঋণের নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করছে। [৩] বেক্সিমকো গ্রæপের কোন খেলাপি নেই।
তিনি বলেন, আমি যোগদান করার পরে তিন মাসের একটি কর্মূসূচি নিয়েছিলাম। সেখানে বেশকিছু সূচকে উন্নতি হয়েছে। তিন মাসে আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্র নিয়েছিলাম ৫ হাজার কোটি টাকা। তিন মাসে আমানত ১০ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। জনতা ব্যাংকের বর্তমানে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি আমানত রয়েছে। এমডি বলেন, আমি যখন দায়িত্ব নেই তখন জনতা ব্যাংকের আমানত ছিল ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। [৪] এছাড়া হিসাব খোলার লক্ষ্যমাত্র নিয়েছিলাম ১ লাখ। কিন্তু হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার। এছাড়া রেমিট্যান্স বাড়ছে। আরো বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ের পাশাপাশি নগদ আদায়ে জোর দেয়া হয়েছে। এছাড়া বড় ঋণের চেয়ে এসএমই ঋণে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। মো. আবদুল জব্বার বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বেক্সিমকো দেশে ব্যবসা করছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত একটি টাকাও সুদ মওকুফ নেয়নি। এছাড়া সুদের হার কমিয়ে ঋণ নেই।[৫] সুনামের সহিত প্রতিটি প্রতিষ্ঠা পরিচালনা করছে । বেক্সিমকো গ্রæপের প্রতিষ্ঠান সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন প্রায় এক লাখ কর্মী। বিশ্বের ৫৫টিরও বেশি দেশে বেক্সিমকো’র পণ্য রপ্তানি হয়। বেক্সিমকো’র বিরুদ্ধে বিশেষ বিবেচনায় জনতা ব্যাংক থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার যে সংবাদ প্রচার হচ্ছে সেই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে একটি নির্দেশনা দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির জন্য ঋণসীমা হিসেবে মোট মূলধনের পরিবর্তে পরিশোধিত মূলধনকে বিবেচনায় নিতে হবে। এই নির্দেশনায় বেক্সিমকোসহ জনতা ব্যাংকের অনেক গ্রাহকই তাদের পুরনো ঋণ নিয়ে সমস্যায় পড়ে। [৭]কারণ হঠাৎ করে আসা এই নির্দেশনা বাস্তবসম্মত না হওয়ায় সময় চেয়ে অব্যাহতির আবেদন করাই ছিল একমাত্র পথ।
বেক্সিমকো এই নির্দেশনা আসার অনেক আগেই জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে। এই জন্য নির্দেশনার পর প্রতিষ্ঠানটির জনতা ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অব্যাহতির প্রয়োজন হয়। তাই বেক্সিমকো গ্রæপ জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অব্যাহতির আবেদন করে। বাংলাদেশ ব্যাংক যথাযথ বিবেচনার পর বেক্সিমকোকে প্রয়োজনীয় অব্যাহতি দেয় এবং ২০২৪ সালের ৩০শে ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ঋণের স্থিতি নতুন নীতিমালায় নির্ধারিত সীমার মধ্যে আনার সময়সীমা বেঁধে দেয়। [৮]কিন্তু কিছু কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই অব্যাহতির বিষয়টিকে বিকৃত করে নতুনভাবে ২২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার ভিত্তিহীন ও মিথ্যা সংবাদ প্রচার চালানো হচ্ছে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুল জব্বার বলেন, ২০২১ সালে বেক্সিমকো গ্রæপ জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ হাজার ৬১০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে। বেক্সিমকো গ্রæপের মাধ্যমে জনতা ব্যাংকের মুনাফা ছিল ৭০৭ কোটি টাকা। ২০২২ সালে জনতার ব্যাংকের মাধ্যমে বেক্সিমকোর আমদানি হয়েছে ৯ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। রফতানি হয়েছে ১৩ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ৪৭৪ কোটি ২ লাখ টাকা।