সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আলু-পেঁয়াজ-ডিম মিলছে না
মাসুদ মিয়া: প্রথম বারের মতো সরকারের পক্ষ থেকে বেঁধে দিয়েছে ডিম, আলু- পেঁয়াজের দাম। কিন্তু সরকার বেঁধে দেওয়া নির্ধারণ দামে বিক্রি করছে না ব্যবসায়ীরা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘরে দেখা যায় আগের মতো বাড়তি দামে অধিকাংশ নিত্যপণ্যে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকে কম দামে কেনার আশায় বাজারে গেছেন তাদের অনেক ক্রেতাই হতাশ হয়ে ফিরেছেন। কারণ বেঁধে দেওয়া দাম মানছেন না ব্যবসায়ীরা। বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। নি¤œ ও মধ্যবিত্ত মানুষের হাতে তেমন টাকা নেই। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার তদারকির দাবি জানিয়ে ক্রেতারা বলেন, প্রতিনিয়তই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।
এবিষয়ে শান্তিনগর বাজারের ক্রেতা জাকির বলেন, সরকার কোনো কিছুর দাম বাড়ালে দোকানিরা সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়িয়ে দেয়। তখন তারা চিন্তা করে না, পণ্যটি আগে কম দামে কেনা। আর সরকার কোনো পণ্যের দাম কমালে দোকানিরা সঙ্গে সঙ্গে দাম কমায় না। তখন তারা নানা ধরনের অজুহাত দেখায়। আসলে বেশি লাভের আশায় বিক্রেতারা বাজারে একধরনের অস্থিরতা তৈরি করে। আর বিড়ম্বনায় পড়ে ভোক্তারা। দাম কমলেও ভোক্তাকে বেশি টাকা দিয়েই পণ্য কিনতে হয়। অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে জানান এই ক্রেতা।
আলু, পেঁয়াজ, ডিম এখনো বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা, আলুর দাম প্রতিকেজি ৩৫-৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। ঘোষণার পর থেকেই বাজারে এ দাম কার্যকর হওয়ার কথা। তবে পরের দিন শুক্রবারও সেটা হচ্ছে না। প্রতি ডজন ১৫০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা প্রতি হালি ডিম আগের মতো ৫২-৫৪ টাকা অর্থাৎ প্রতিটি ডিম ১৩ থেকে ১৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি সাদা আলু ৫০ টাকা এবং লাল আলু ৫৫ টাকায় রয়ে গেছে। কমেনি পেঁয়াজের দামও। ভারতের আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে পণ্য বিক্রি করছেন না কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যবসায়ীদের অজুহাতের শেষ নেই। কয়েকজন বিক্রেতা আবার বলছেন তারা নাকি বেঁধে দেওয়া দামের বিষয়টি জানেন-ই না। তবে অধিকাংশরা বলছেন বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর হতে কিছুটা সময় লাগবে।
মতিঝিল মসজিদ মার্কেটের মুদি পণ্য বিক্রেতারা বলেন, সরকারের হিসাব আমাদের জানা নাই। আমরা বেশি দামে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করি, কমে কিনলে কমে বেচি।
এদিকে, বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বেঁধে দেওয়া দাম বাস্তবায়নে ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসকরা (ডিসি) বাজার মনিটরিং করবেন। জেলা-উপজেলাসহ বড় বড় শহরে মনিটরিং চলবে। সর্বাত্মক শক্তি নিয়ে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে। তবে শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর এই তিনটি বাজারে কোনো ধরনের মনিটরিং কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এসব বিষয়ে মিরপুর বাজারে ফিরোজ নামের একজন বেসরকারী চাকরিজীবি বলেন, তেল চিনির দামও নিয়মিত বেঁধে দেওয়া হয়, কিন্তু বাজারে এসব বিক্রেতারা মানেন না।
তিনি বলেন, এখনো বাজারে চিনির দাম ১২০ টাকা নির্ধারিত রয়েছে, কিন্তু আপনি বাজারে কোথাও চিনি ১৩৫-১৪০ টাকার নিচে কিনতে পারবেন না। তাহলে এসব কার্যক্রম সরকারের লোক দেখানো নয় কি?
তিনি বলেন, তারপরও আমরা ক্রেতারা আশায় থাকি, সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে সফল হবে। ক্রেতারা সামান্য হলেও স্বস্তি পাবে। কারণ বর্তমান বাজারে নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম নি¤œ ও নি¤œমধ্যবিত্ত মানুষদের ভালোভাবে বাঁচতে দিচ্ছে না।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একই বৈঠকে সয়াবিন তেলের দাম কমানোর ঘোষণাও দেয়। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন দাম ৫ টাকা কমে এখন ১৬৯ টাকা হওয়ার কথা। তবে বাজারে এখনো কম দামের তেল সরবরাহ হয়নি। ফলে ভোক্তাকে সেই আগের ৫ টাকা বেশি দাম গুনতে হচ্ছে। প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৭৪ টাকা দরে।
আলুর দাম প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীরা বলেন,, আলু বর্তমানে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা পাইকারি দরেই কিনে আনতে হয়েছে। ৪৪-৪৫ টাকার নিচে কিনতে পারাই কঠিন, তাহলে সরকার নির্ধারিত ৩৫ টাকা করে বিক্রি করবো কী করে? আমরা কি লস দিয়ে বিক্রি করবো? আমরা যদি কমে কিনতে পারি তাহলে অবশ্যই কমে বিক্রি করবো।
বেগুন এক কেজি ৭০ টাকা থেকে ৯০ টাকা, করলার কেজি ৬০, পটল ৪০, ঢেঁড়স ৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও শসা কেজি ৫০ টাকা, ফুলকপি পিস ৩০ টাকা, বাঁধাকপি পিস ৩০ টাকা। বাজারের দামটা মোটামুটি স্বাভাবিকই বলা যায়। তবে শুধুমাত্র বেগুনের দামটা বেড়েছে। ৬০ টাকা ৭০ টাকা ছিল সেটি এখন ৯০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চাষের পাঙাস-তেলাপিয়া থেকে শুরু করে দেশি প্রজাতির সব ধরনের মাছের দাম কমেছে। ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা আগের সপ্তাহ বাজারে প্রতি কেজি পাঙাস বিক্রি হতো ২০০ থেকে ২২০ টাকা, যা এখন ১৯০ থেকে ২১০ টাকায় ঠেকেছে। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, যা আগের সপ্তাহ ছিল ২২০-২৫০ টাকায়। প্রতি কেজি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-১০০০ টাকায়। যা আগে ৭০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতেন। অন্য মাছের মধ্যে মাঝারি ও বড় আকারের রুইয়ের দাম প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৪০০ টাকা গত সপ্তাহ ছিল ৩০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা।এদিকে ইলিশ মাছের দামও বাড়তি এক কেজি আকারে মাছ কেজি বিক্র হচ্ছে ১৫০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকা মাঝারি ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা ছোট আকাওে কেজি ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা।