
চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি না হলে আরও আমদানির অনুমতি দেয়া হতে পারে : বাণিজ্য সচিব

সোহেল রহমান : [১] বাজারের স্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণে আনতে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে বাজার মনিটরিং করে যদি দেখা যায়, এতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না, তাহলে আরও আমদানির অনুমতি দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
[২] সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা জানান তিনি।
[৩] প্রসঙ্গত: ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে চার প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আমদানি করা ডিম খুচরাপর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি পিস ১২ টাকায় বিক্রি করতে হবে। অনুমতি প্রাপ্ত চারটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছেÑ মেসার্স মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইম্পোর্টার্স এনবড সাপ্লাইয়ার্স, টাইগার ট্রেডিং ও অর্ণব ট্রেডিং লিমিটেড।
[৪] বাণিজ্য সচিব বলেন, গত মাসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী একটি দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সাড়ে ১০ টাকা উৎপাদন খরচ। খুচরা পর্যায়ে বিক্রির জন্য ১২ টাকা। খুচরা পর্যায়ে এ দামে বিক্রি হচ্ছে না বলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দেখতে পেয়েছে। সেজন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে আমরা কিছু ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি। আমরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ করেছি। সেই ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কারণ আমরা বাজার স্থিতিশীল করতে চাচ্ছি।
[৫] কোথা থেকে আমদানি করা হবেÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, চার কোম্পানিকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। প্রতিটি কোম্পানি এক কোটি ডিম আমদানি করতে পারবে। এর মধ্যে একটি কোম্পানি বলেছে যে, ভারত থেকে তারা ডিম আনবে। বাকি তিনটি যে কোনো উৎস থেকে ডিম আনতে পারবে, যেখানে দাম কম পাবে কিংবা যেখান থেকে দ্রæত আনতে পারবে।
[৬] প্রসঙ্গক্রমে বাণিজ্য সচিব বলেন, তবে যেসব দেশে অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা কিংবা অন্য সমস্যা আছে, সেসব দেশ থেকে ডিম আমদানি করা যাবে না।
[৭] আমদানিতে কোনো শর্ত আছে কি নাÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কোনো শর্ত নেই। সুবিধামতো আনবে, যাতে ভোক্তারা কম দামে পান। তবে বিক্রির ক্ষেত্রে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যে দাম বেঁধে দিয়েছে, সেই দামেই বিক্রি করতে হবে। অর্থাৎ ১২ টাকায় ডিম বিক্রি করতে হবে।
[৮] বাণিজ্য সচিব জানান, দেশে প্রতিদিন চার কোটি ডিম লাগে। সেক্ষেত্রে আমরা একদিনের ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি। এটা মার্কেটে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে কিংবা আমাদের খামারিরা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছি না। আমদানির অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে অবস্থা বুঝে আমরা সিদ্ধান্ত নিই। অন্যদিকে যখন কোনো পণ্যের আমদানি বন্ধ থাকে তখন সেটা একটা সমস্যা হয়ে যায়।
[৮] প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা দেশের যুবসমাজের কর্মসংস্থান দেখবো। দেশের মানুষের আর্থিক উন্নয়নে এ শিল্প দেশে গড়ে উঠুক, তা সবাই চায়। সরকারেরও মূল লক্ষ্য এটা। কিন্তু যখন এ সুযোগে বাজার থেকে কেউ বেশি মূল্য নিতে চায়, ভোক্তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে যায়, তখন আমদানির কথা ভাবতে হয়। আর আমরা আরও আমদানির অনুমতি দেবো কি না, তা বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। আমরা প্রতিনিয়তই বাজার মনিটরিং করছি। দরকার হলে আরও আমদানি অনুমতি দেব, দরকার না হলে না-ও দিতে পারি। দেশের উৎপাদিত ডিমকে প্রাধান্য দিতে চাই।
[৯] যারা আমদানি করবে, তারা কি সর্বোচ্চ দামটি ধরে বিক্রি করবেন, নাকি ভোক্তারা আরও সাশ্রয়ী মূল্যে কেনার সুযোগ পাবেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব বলেন, দাম আসলে অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে, এখন যদি অনেক বেশি আমদানি করতে দেয়া হয়, তাহলে দাম কমতেও পারে। আর দাম কম না হলে যিনি আমদানি করবেন, তিনি তা করবেন না। কারণ তাকে তো ডিম বাজারে বিক্রি করতে হবে। আমরা যদি মনে করি, ডিম নির্ধারিত দামের নিচে বিক্রি করা যাচ্ছে না, তাহলে আরও আমদানির অনুমতি দেয়া হতে পারে।
