পূরবী দাস
ফেসবুকে এখন আর সেভাবে ঢুঁ মারতে ইচ্ছে হয় না। পুরো নিউজফিড জুড়ে, কোথাও মৃত্যুর খবর তো কোথাও উন্নয়নের খবর, কোথাও প্রেমিক প্রেমিকার উন্মত্ত প্রেম তো কারো সাধারন ও অসাধারণ বিয়ের খবর। এত এত খবরের মধ্যে আমার নিজেকে বড়ই অসহায় লাগে।
কারণ আমি মধ্যবিত্ত থেকে নিজের অজান্তেই কখন যেন নি¤œ মধ্যবিত্তেরও অনেক নিচে নেমে গেছি। নিয়ম করে প্রতিবছর বাসা ভাড়া বাড়ছে, বাড়ীওয়ালার এক কথা চালাতে না পারলে ছেড়ে দাও,, আগে বড় বড় বাজার গুলোতে বাজার করা আমি কখন সেদিক মাড়িয়েছি ভুলে গেছি। ভ্যানওয়ালাই ভরসা। দরদাম করে দুটাকা কমে নেওয়া যায়। পেঁয়াজের ঝাঁজে আগে চোখে জল আনালেও এখন দাম শুনে আসে। বাড়িতে কেউ আসবে শুনলে আতিথেয়তার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে।
ভেজালে ভরা খাবারের জন্য শরীর হয়ে গেছে ফাঁপা ব্রয়লার মুরগীর মতন। উপরে দেখতে সুন্দর কিন্তু ভেতরটা খোকলা।মাছ ডিম পুষ্টিকর খাবারের পরিমাণ এতটাই কমেছে যে মাস শেষে ডাক্তারের দরজায় ফাইল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। আয় সীমিত হতে হতে হাতের তালুতে এসে ঠেকেছে। তাই মাসে মাসে ডিজাইন চেন্জ হওয়া ১২ হাতের শাড়ী বøাউজ সালোয়ার কামিজ ছেড়ে ৫০০ টাকার টিশার্ট আর ৭০০ টাকার জিন্সপ্যান্টই ভরসা। কয়েক সেটেই কাটিয়ে দেওয়া যায় ২/৩ বছর এটা অনেক সাশ্রয়ী। রিক্সা, সিএন জির চাইতে কখনোই না চড়ে বসা টেম্পুটা এখন অনেক ভালো।পয়সা বাচে। কবেই বাদ পড়ে গেছে জীবন থেকে সাধ আহ্লাদ নামক সব ধরনের বিলাসিতা। পথে ঘাটে দেখা হলো পরিচিতদের কুশলাদি জিজ্ঞেস করতে ভয় হয়। চারিদিকে স্বজন হারানোদের আহাজারি। সব ছাপিয়ে আমার চোখে ভাসে ডেঙ্গু মহামারীতে একের পর এক সন্তান হারানো মায়েদের মুখ। মধ্যরাতে কন্যা হারানো পিতার আহাজারি। হাসপাতাল গুলোতে রোগীর ভীড়ে সেবার মান এতটাই কমেছে যে মানুষএখন গয়না বেচে চিকিৎসা নিতে প্রাইভেট হাসপাতালে ছুটে দিন শেষে নিঃস্ব হয়ে লাশ নিয়ে ঘরে ফিরছে।
ধর্ষণ হত্যা কনভার্সন নিউজকে ছাপিয়ে যায় ঋণ খেলাপীর খবর। উন্নয়নের খবর বিজয়ের খবর কোন কিছুই এখন আর আমাকে টানে না কারণ সব ছাপিয়ে মাথায় একটা চিন্তাই ঘুরে আমাকে জীবন জীবিকার মানোন্নয়ন তো দূর কোনভাবে বেঁচে থাকার সঙ্কুলান করতে হবে। দুটাকা বাড়তি খরচও এখন আমার চরম বিলাসিতা। জানিনা এভাবে আর কতদিন বাঁচতে পারবো, চলতে চালাতে পারবো। ক্লান্ত লাগে অনেক। এখন শুধু অপেক্ষায় থাকা কখন বেঁচে থাকার লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে থেমে যাবে আমারই মতন অসহায় সাধারণ নি¤œ মধ্যবিত্ত
তবুও শান্তি এক শ্রেনীর মানুষ তো অন্তত ভালো আছে তারা দেশবিদেশে বাড়ী করছে। দামী গাড়ী হাঁকাচ্ছে।দেশের ব্যাংক ফুল করে সুইসে সুইচ করেছে। এদেরই রয়েছে দাপটের সাথে বেঁচে থাকার অধিকার। পৃথিবীর বুকে আমাদের মতন অসহায় নগন্য কোন কাজের না ফকির টাইপস নি¤œ মধ্যবিত্তদের কোথাও যেন কেউই নেই,,,