প্রাইম ইসলামী লাইফকে ৭৭০ কোটি টাকার দাবি পরিশোধ করতে হবে
মো. আখতারুজ্জামান : [১] পাঁচ বছর আগে বীমার মেয়াদ শেষ হয়েছে সিরাজগঞ্জের সাইফুল ইসলামের। টাকার পরিমাণ মাত্র ২৩ হাজার ৭৯৩ টাকা। সেই টাকাও দিতে পারেনি প্রাইম ইসলামী লাইফ। সাইফুল ইসলামের মতো সারাদেশে কোম্পানিটির হাজারো গ্রাহক বীমার মেয়াদ শেষে পাওনা টাকা আদায়ে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
[২] এসব গ্রাহক প্রতি নিয়তই নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ’র কাছে অভিযোগ করাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মামলাও করছেন। তাতেও কোন সুরাহা হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের এই হয়রানি গোটা বীমা খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থা বাড়াচ্ছে। মূলত আর্থিক সংকটের কারণেই এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে বীমা কোম্পানিটিতে।
[৩] সর্বশেষ ২০২০ সালের একচ্যুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন অনুসারে, প্রাইম ইসলামী লাইফের গ্রাহকের দায় ছিল ১৩৮৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। সে সময় কোম্পানিটির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৯২৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৪৬১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ঘাটতি।
[৪] অপরদিকে কোম্পানিটির সর্বশেষ তথ্য অনুসারে পূর্বের অনিষ্পন্ন বীমার দাবির পাশাপাশি ২০২৩ সাল এবং পরবর্তী ৫ বছরে মেয়াদ উত্তীর্ণ দাবি দাবি পরিশোধ করতে হবে ৭৫৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে ২০২৩ সালে পরিশোধ করতে হবে ১০১ কোটি টাকা।
[৫] আর গ্রাহকের এই টাকা পরিশোধের জন্য সর্বশেষ জুন ২০২৩ সালের হিসাব (অনিরীক্ষিত) অনুসারে কোম্পানিটির লাইফ ফান্ড ৬৯০ কোটি টাকা। যার মধ্যে বিনিয়োগ ৬৭১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এই বিনিয়োগ থেকে প্রতি বছর সম্ভাব্য আয় রয়েছে ৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা।
[৬] প্রাইম ইসলামী লাইফের প্রিমিয়াম আয়, বিনিয়োগ ও বিনিয়োগ থেকে আয় কমে যাচ্ছে। ফলে লাইফ ফান্ডে নতুন তহবিল যোগ না হয়ে প্রতি বছরই তা কমছে। অপরদিকে প্রতিনিয়তই বাড়ছে গ্রাহকের পাওনা। এমন পরিস্থিতিতে গ্রাহকের বীমা দাবি পরিশোধে কোম্পানিটির আর্থিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। [৭] কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে ২০২২ সালে লাইফ ফান্ড কমেছে ৩০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আর চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৬ মাসে কমেছে ৮৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত দেড় বছরে লাইফ ফান্ড কমেছে ১১৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
[৮] পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২১ সালে মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহ ৪২৯ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং বিনিয়োগে থেকে আয় করেছে ৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট আয় ৪৩৫ কোটি ৬ লাখ টাকা। যার মধ্যে ব্যবস্থাপনা খাতে ব্যয় ১৫৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা এবং বীমা দাবি পরিশোধ করেছে ২৯৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট ব্যয় করেছে ৪৪৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ আয় থেকে ব্যয় বাদ দিলে ঘাটতি ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। একইভাবে কোম্পানিটির ২০২২ সালে তহবিল ঘাটতি ১৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
[৯] প্রতিবছরই সম্পদ কমছে প্রাইম ইসলামী লাইফের। ২০২১ সালে কোম্পানিটির মোট সম্পদ ছিল ৯৫৭ কোটি ৪৪ লাখ। ২০২২ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে ৯০৮ কোটি ৮১ লাখ। এক বছরের ব্যবধানে সম্পদ কমেছে ৪৮ কোটি টাকার। [১০] আর সর্বশেষ জুন ২০২৩ সালে এসে মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ৮৪৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ চলতি বছরের ৬ মাসে সম্পদ কমেছে ৬১ কোটি ২২ লাখ টাকা। প্রাইম ইসলামী লাইফের এই আর্থিক সংকেটর মূল কারণ, কোম্পানির তহবিল তছরুপ, অতিরিক্ত ব্যয় এবং মন্দ বিনিয়োগ।