
শেয়ারবাজারে সূচক সঙ্গে লেনদেন সামান্য কমলেও বীমা খাতের দাপট চলছেই

মাসুদ মিয়া: [১]দেশের শেয়ারবাজার আগের কার্যদিবস উত্থান হলেও গতকাল সোমবার সামান্য পতন হয়েছে। এদিন শেয়ারবাজারে সব সূচকই কমেছে। আর লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যে পরিমাণের দর বেড়েছে তার চেয়ে বেশি সংখ্যকের শেয়ার দর কমেছে। সূচকের সাথে টাকার পরিমাণে লেনদেনও কমেছে। তবে বীমা খাতের কোম্পানিগুলোর সক্রিয়তায় বড় পতন থেকে রক্ষা পেয়েছে শেয়ারবাজার। এদিন শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অধিকংশ বীমা কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। চার বীমার শেয়ার দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করার পাশাপাশি আরও চার বীমা কোম্পানির শেয়ার দাম দিনের সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাটি চলে যায়।
[২]অবশ্য বীমা কোম্পানিগুলো শেয়ার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখালেও তার সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি অন্য খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে দিনের লেনদেন শেষে দাম বাড়ার থেকে দাম কমার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক কমেছে। একই সঙ্গে ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
[৩]এদিন ডিএসইতে সর্বোচ্চ দাম বাড়া ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯টিই বীমা কোম্পানি। অপর শেয়ারবাজার সিএসইতেও দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানি দাপট দেখিয়েছে। বাজারটিতে সর্বোচ্চ দাম বাড়া ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বীমা কোম্পানি রয়েছে ৮টি।
শুধু সোমবার নয়, গত কয়েক কার্যদিবস ধরেই শেয়ারবাজারে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানিগুলো দাপট দেখা যাচ্ছে। এতে একাধিক বীমা কোম্পানির শেয়ার দাম ৫০ শতাংশের ওপরে বেড়ে গেছে। দাম বাড়ার পাশাপাশি লেনদেনেও বড় ভ‚মিকা রাখছে বীমা কোম্পানি। ডিএসইতে যে লেনদেন হয়েছে তার অর্ধেকের বেশি বীমা খাতের। [৪]গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই প্রায় সবকটি বীমা কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়ে যায়। বীমা কোম্পানির পাশাপাশি লেনদেনের শুরুর দিকে অন্য খাতের বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ে। এতে মূল্যসূচকেও ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে।
তবে লেনদেনের শেষদিকে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। যার প্রভাব পড়ে বীমা খাতের ওপরও। এতে দাম বাড়ার তালিকা থেকে কয়েকটি বীমা কোম্পানি দাম কমার তালিকায় চলে আসে। অবশ্য এরমধ্যেও বেশিরভাগ বীমা কোম্পানি দাম বাড়ার ধারা ধরে রাখে। ফলে সার্বীক শেয়ারবাজারে দরপতন হলেও, বেশিরভাগ বীমা কোম্পানির শেয়ার দাম বেড়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বীপরীতে দাম কমেছে ৮৪টির এবং ১৬৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বীমা কোম্পানি রয়েছে ৩৮টি। আর দাম কমার তালিকায় বীমা কোম্পানি আছে ১৩টি।
[৫]ডিএসইতে দাম বাড়ার শীর্ষ ১০টি স্থান দখল করেছে- ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, ওরিয়ন ইনফিউশন, ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স এবং নিটল ইন্স্যুরেন্স।
বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এমন দাপট দেখানোর দিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স দশমিক ৩১ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৩১০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৬১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৩৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
[৬]গতকাল সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭৩৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৮৬৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১৩৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। ডিএসইতে যে লেনদেন হয়েছে তার মধ্যে বীমা কোম্পানিগুলোর অবদান ৩৮৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট লেনদেনের ৫৩ শতাংশ বীমা খাতের।
দাম বাড়ার তালিকায় যেমন বীমা খাতের আধিপত্য রয়েছে, তেমনই লেনদেনেও এ খাতের আধিপত্য দেখা গেছে। ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হওয়া ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬টিই বীমা কোম্পানি। তবে লেনদেনের শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে ফু-ওয়াং ফুড। এ কোম্পানিটির ২৬ কোটি ৫৮ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ।
পরের স্থানটি দখল করেছে বীমা খাতের কোম্পানি। ২৬ কোটি ২৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে লেনদেনের দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স। লেনদেনর তৃতীয় স্থানে থাকা রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
[৭]এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন হাউজিং, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, মেট্রো স্পিনিং, সোনালী পেপার এবং প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বীক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন অংশ নেওয়া ১৬৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৪টির দাম বেড়েছে। বীপরীতে দাম কমেছে ৪৮টির এবং ৬৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৮ কোটি ১১ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
