
আমদানির অনুমতি চেয়ে আরও ১০ প্রতিষ্ঠানের আবেদন ভারত থেকে ডিম আসার খবরে দাম কিছুটা কমেছে

মাসুদ মিয়া: [১]ভারত থেকে ডিম আমদানির খবরে পাইকারি বাজারে কিছুটা ডিমের দাম কমতে শুরু করেছে। এদিকে ভারত থেকে ডিম আমদানির জন্য চার প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আর নতুন করে আরও ১০ প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি ১০০টি ডিমের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। খুচরা বাজারে এখনো সেভাবে প্রভাব পড়েনি। অধিকাংশ দোকানে এখনো খুচরায় ১৫০ টাকা এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে।
[২]ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা পাইকারিতে ১০০টি বাদামি রঙের ডিম কিনেছেন ১ হাজার ১২৫ থেকে ১ হাজার ১৩০ টাকায়, যা গত সোমবার ছিল ১ হাজার ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। সাদা রঙের প্রতি ১০০টি ডিমের দাম ১ হাজার ১০৫ টাকার আশপাশে। সাদা রঙের ডিমও তাই খুচরা বিক্রেতারা একটু কম দামে ডজনে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। রাজধানীর মালিবাগ বাজারের ডিম ব্যবসায়ীরা বলেন, পাইকারিতে ডিমের দাম ১৫ টাকার মতো কমেছে। আমরাও সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রির চেষ্টা করছি। তবে ১২ টাকায় ডিম বিক্রি করলে লাভ তেমন হয় না। পাঁচভাই ঘাটলেন ডিম বিক্রেতা নাজমুল বলেন, ফার্মের মুরগির ডিম হালিতে বিক্রি করছি ৫০ টাকা ডজন ১৫০ টাকা। ডিমের দাম দুই বছর ধরে বাড়ছে। তবে গত বছর হালিপ্রতি ডিমের দর ৬০ টাকায়ও উঠেছিল। এবিষয়ে শান্তিনগর বাজারের ক্রেতা খালেদা বলেন, সরকার কোনো কিছুর দাম বাড়ালে দোকানিরা সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়িয়ে দেয়। তখন তারা চিন্তা করে না, পণ্যটি আগে কম দামে কেনা। আর সরকার কোনো পণ্যের দাম কমালে দোকানিরা সঙ্গে সঙ্গে দাম কমায় না। তখন তারা নানা ধরনের অজুহাত দেখায়। আসলে বেশি লাভের আশায় বিক্রেতারা বাজারে একধরনের অস্থিরতা তৈরি করে। দাম কমলেও ভোক্তাকে বেশি টাকা দিয়েই পণ্য কিনতে হয়। তাই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে জানান এই ক্রেতা।
[৩] এদিকে সরকার যেসব প্রতিষ্ঠানকে ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে তারা মূলত ভারত থেকে ডিম আমদানি করবে। পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া ও আজারবাইজান থেকেও আমদানির চেষ্টা চলছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তারা দেশের বাজারে প্রতিটি ডিম ১০ টাকার কমে বিক্রি করতে পারবে। ভারত থেকে ডিম আসতে সময় লাগতে পারে এক সপ্তাহের মতো।
[৪]ডিমের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে আপাতত চার কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চার প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে এক কোটি করে ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমদানি করা ডিম খুচরাপর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দাম প্রতি পিস ১২ টাকায় বিক্রি হবে।
মেসার্স মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইম্পোর্টার্স এনবড সাপ্লাইয়ার্স, টাইগার ট্রেডিং, অর্ণব ট্রেডিং লিমিটেডকে ডিম আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর খুচরাপর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১২ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তারপরও বাজারে কমেনি দাম। শেষপর্যন্ত ডিম আমদানির অনুমতি দিলো সরকার।
ডিম আমদানির জন্য পাঁচটি শর্ত নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। এগুলো হলো এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু মুক্ত ডিম আমদানি করতে হবে। আমদানি করা ডিমের প্রতিটি চালানের জন্য রপ্তানিকারক দেশের সরকারের মাধ্যমে নির্ধারিত কিংবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লুর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত সনদ দাখিল করতে হবে। সরকার নির্ধারিত শুল্ক বা কর পরিশোধ করতে হবে। নিষিদ্ধ পণ্য আমদানি করা যাবে না। সরকারের অন্য বিধিবিধান মেনে চলতে হবে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন চার কোটি ডিমের প্রয়োজন হয়। সেই হিসাবে আমদানি করা ডিম দিয়ে একদিনের চাহিদা পূরণ করা যাবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, গত মাসে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী একটি দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সাড়ে ১০ টাকা উৎপাদন খরচ। খুচরাপর্যায়ে বিক্রির জন্য ১২ টাকা। খুচরাপর্যায়ে এ দামে বিক্রি হচ্ছে না বলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর দেখতে পেয়েছে। এজন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে আমরা কিছু ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি। সচিব আরও বলেন, আপনারা জানেন, বাংলাদেশে প্রতিদিন চার কোটি ডিম লাগে। সেক্ষেত্রে আমরা একদিনের ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি। এটা মার্কেটে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে কিংবা আমাদের খামারিরা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছি না।
