চট্টগ্রাম সাইলো আধুনিকায়ন করবে বেলজিয়ামের কোম্পানি
সোহেল রহমান : [১] চট্টগ্রাম সাইলো বিএমআরই করণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এটি বিএমআরই-করণ করবে বেলজিয়ামের প্রতিষ্ঠান ভিগান ইঞ্জিনিয়ারিং এসএ। একই সঙ্গে সাইলোটি বিএমআরই করণ করতে যে পরিমাণ ব্যয় হবে তা নির্ধারিত মূল্যসীমার ঊর্ধ্বে। এমতাবস্থায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে বেলজিয়ামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নির্ধারিত মূল্যসীমার ঊর্ধ্বে চট্টগ্রাম সাইলো বিএমআরই করণের একটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদনের জন্য বুধবার অনুষ্ঠেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
[২] খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিদেশ থেকে আমদানিকৃত সরকারি গমের সিংহভাগ চট্টগ্রাম সাইলোতে খালাস করা হয়। এক লাখ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৫৩ বছরেরও অধিককালের পুরাতন সাইলোটি ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছিল। বর্তমানে সাইলোর যন্ত্রপাতি পুরাতন হওয়ায় কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। সাইলোটির ব্যাগিং হাউজ, ডেলিভারি সিস্টেম, ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম, কনভেয়র ব্রিজ, জেটি, সাব-স্টেশন, কন্ট্রোল রুম সিস্টেম, পুরাতন স্কেল, বেল্টের কাউন্টার ওয়েট/টেনশন বুথ ইত্যাদি পুরাতন হওয়ার অপারেশনাল কার্যক্রমে প্রায়ই বিঘ্ন ঘটছে। এতে করে যথাসময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে গম সরবরাহের জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সাইলোর কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে চট্টগ্রাম সাইলোর বিএমআরইকরণ প্রয়োজন।
[৩] জানা যায়, ইতোপূর্বে ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সালে সাইলোটি একবার আংশিকভাবে বিএমআরই-করণ করা হয়েছিল। এরপর প্রায় ২৩ বছরে সকল যন্ত্রপাতি ও কনভেয়রসমূহের পারফরমেন্স হ্রাস পেয়েছে। চট্টগ্রাম সাইলো আধুনিকীকরণে স্কোপ অব ওয়ার্ক প্রণয়নের লক্ষ্যে চলতি বছরের গত ২৭ এপ্রিল খাদ্য অধিদপ্তর-এর অতিরিক্ত মহাপরিালক-এর নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সাইলো সরেজমিন পরিদর্শন করে বিএমআরইকরণের সুপারিশ করেছে। পরবর্তীতে চট্ট্রগাম সাইলো বিএমআরইকরণে জরুরী ভিত্তিতে কোন কাজ বা প্যাকেজের কাজ সম্পাদন করা দরকার তা নির্ধারণে গত ১৭ আগস্ট ৫ সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিও প্রতিবেদন একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
[৪] সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সাইলোর পূর্ত কাজ সম্পাদন করেছিল সুইডিশ কোম্পানি স্কানস্কা। ওই সময়ে জার্মানীর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি মিয়াগ (এমআইএজি) এবং সুইজারল্যান্ডের কোম্পানি বাহলের যৌথভাবে সাইলোটির সকল যন্ত্রাংশ সংযোজন করে। পরবর্তীতে ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সালে সাইলোটি আংশিকভাবে বিএমআরই-করণ করার সময়ে সুইজারল্যান্ডের বাহলের, ফ্রান্সের প্রিসিয়া মলেন, বেলজিয়াম-এর ভিগান ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অন্যান্য মূল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করে প্রতিস্থাপন করা হয়।
[৫] সূত্র জানায়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে একাধিক প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতি আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করা এবং সকল যন্ত্রপাতির মধ্যে সমন্বয় করা প্রায় অসসম্ভব। এক্ষেত্রে একক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাইলোটি বিএমআরই-করণ করা উত্তম ও যৌক্তিক হবে বলে মনে করছে মন্ত্রণালয়।
[৬] সূত্র জানায়, সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে মনোনীত বেলজিয়ামের প্রতিষ্ঠান ভিগান ইঞ্জিনিয়ারিং এসএ’র তৈরি যন্ত্রপাতির পরিমাণ বেশি। প্রতিষ্ঠানটি খাদ্য অধিদপ্তর-এর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে আশুগঞ্জ সাইলো বিএমআরইকরণ; বিভিন্ন সাইলোতে ৯টি আন-লোডার সরবরাহ; স্থাপন ও ইন্টারলিঙ্কসহ সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদান করে আসছে। আশুগঞ্জ, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও সান্তাহার সাইলো ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ সালে একই প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা হয়। আশুগঞ্জ সাইলো বিএমআরইকরণে বেলজিয়ামের প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ড্রইং-ডিজাইন সম্পন্ন করে মূল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মালামাল ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে সেগুলো সাইলোতে স্থাপন করছে।