ডিএসইর লেনদেন ৮০০ কোটি টাকা ছড়িয়েছে
মাসুদ মিয়া: [১]দেশের শেয়ারবাজার গতকাল সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস সামান্য উত্থানের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দর কমলেও বীমা খাতের কোম্পানিগুলোর দাপট অব্যাহত রয়েছে শেয়ারবাজারে। গতকাল যে পরিমাণ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে এর মধ্যে বীমা খাতের ৫৭ শতাংশ কোম্পানির অবদান রয়েছে। আর বীমা খাতের দাপটের কারণেই পতন থেকে রক্ষা পেয়েছে শেয়ারবাজার। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসইতে) লেনদেন ৮০০ কোটি টাকার উপরে হয়েছে।
[২]গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান মূল্যসূচক নামমাত্র বেড়েছে।
গত কয়েক কার্যদিবসের মতো গতকাল শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই প্রায় সবকটি বীমা কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়ে যায়। বীমা কোম্পানির পাশাপাশি লেনদেনের শুরুর দিকে অন্য খাতের বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ে। এতে মূল্যসূচকেও ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মিলে। লেনদেনের একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১২ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
তবে দুপুর ১২টার পর বীমা বাদে একের পর এক কোম্পানির শেয়ারের দাম কমে যায়। যার প্রভাব পড়ে বীমা খাতের ওপর। এতে লেনদেনের শেষদিকে বেশ কিছু বীমা কোম্পানির শেয়ারের দাম কমার প্রবণতা কমে যায় এবং কিছু বীমা কোম্পানি দাম বাড়ার তালিকা থেকে দাম কমার তালিকায় চলে আসে। [৩]অবশ্য এরমধ্যেও জনতা ইন্স্যুরেন্স এবং এশিয়া ইন্স্যুরেন্স এ দুটি বীমা কোম্পানি দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে এবং দিনের প্রায় পুরো সময় ধরে দিনের সর্বোচ্চ দামে লেনদেন হয়। লেনদেনের শেষদিকে কোম্পানি দুটির শেয়ারের বীপুল ক্রয় আদেশ এলেও বীক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। এ দুই বীমা কোম্পানির পাশাপাশি দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ বীমা কোম্পানি।
[৪]দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ৬৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বীপরীতে দাম কমেছে ৮৫টির এবং ১৬০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বীমা কোম্পানি রয়েছে ৩৯টি। আর দাম কমার তালিকায় বীমা কোম্পানি আছে ১৩টি। অর্থাৎ দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫৬ দশমিক ৫২ শতাংশই বীমা কোম্পানি।
বীমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে এমন দাপট দেখানোর দিনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স দশমিক ১০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৩১১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৫৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৩৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
[৫]দাম বাড়ার তালিকায় যেমন বীমা খাতের আধিপত্য রয়েছে, তেমনি লেনদেনেও এ খাতের আধিপত্য দেখা গেছে। ফলে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮১১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৭৩৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৭৭ কোটি ৫ লাখ টাকা। ডিএসইতে যে লেনদেন হয়েছে তার মধ্যে বীমা কোম্পানিগুলোর অবদান ৪৫৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট লেনদেনের ৫৬ দশমিক ১৪ শতাংশ বীমা খাতের।
এই লেনদেন বাড়াতে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটির ৩২ কোটি ৩৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউনিক হোটেলের ৩০ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। ২৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফু-ওয়াং ফুড।
[৬]লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স, ইউনিক হোটেল, ফু-ওয়াং ফুড, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, জেমিনী সী ফুড, মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইস্টার্ন হাউজিং, সী পার্ল বীচ ও মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- জনতা ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, ট্রাস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স, সী পার্ল বীচ, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, অগ্রনী ইন্স্যুরেন্স ও ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স।
দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো:- মেট্রো স্পিনিং, লীগ্যাসী ফুটওয়্যার, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা পেট, সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ফু-ওয়াং ফুড, ইয়াকিন পলিমার, জিকিউ বলপেন, আরডি ফুড ও ইউনিক হোটেল।
[৭]অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৬.৪০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬৬৩.৩৯ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসসিএক্স ৯.৯০ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১৭.৪৭ পয়েন্ট ও সিএসই-৫০ সূচক ১.৫১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১ হাজার ১৫৯.০০ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩৮২.১৩ পয়েন্টে ও একহাজার ৩০৬.৬৬ পয়েন্টে। তবে সিএসআই ০.৪৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে একহাজার ১৬৮.৪০ পয়েন্টে।
সিএসইতে ১৫৯টি প্রতিষ্ঠানে লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪৩টির, কমেছে ৫৫টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৬১টি প্রতিষ্ঠানের। সিএসইতে ১১ কোটি ২০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।