ভৌতকাজ সম্পাদনে বছরে মাত্র ৬ মাস সময় পায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়
সোহেল রহমান : [১] নদী মাতৃক দেশ হওয়া সত্তে¡ও বর্ষা মৌসুমে পানির আধিক্য এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির দুষ্প্রাপ্যতা বাংলাদেশের প্রকৃত বাস্তবতা। শুষ্ক মৌসুমে নদী অববাহিকাসমূহের উজানে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবনণাক্ততা বেড়ে যায়। অন্যদিকে প্রকৃতিগতভাবে বাংলাদেশের নদীতে পলি জমার কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে নদীর পানির ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে অতিরিক্ত পানি প্রবাহের কারণে নদী তীরে ভাঙ্গন এবং বন্যা দেখা দেয়। অন্যান্য খাতে সারাবছর উন্নয়ন কাজ করার সুযোগ থাকলেও পানি সম্পদ খাতে ভৌত ও অবকাঠামোগত কাজ সম্পাদনে প্রতিটি অর্থবছরে মাত্র ৬ মাস (নভেম্বর থেকে এপ্রিল) সময় পাওয়া যায়। এই অতি সীমিত সময়ের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পাহাড়ী ঢল বা স্থানীয় অনাকাঙ্খিত সামাজিক সমস্যা মোকাবেলা করে গুনগতমান সম্পন্œ টেকসই ভৌতকাজ বাস্তবায়ন পানি সম্পদ খাতের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
[২] চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ-এর সঙ্গে বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি (এপিএ)-তে পানি সম্পদ খাতের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
[৩] মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ভরাট হয়ে যাওয়া নদ-নদী, খরা প্রবণতা, পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া Ñএসব জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলা এবং দেশের পানি সম্পদ খাতের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’-এর বিনিয়োগ কর্ম-পরিকল্পনার আওতায় ২৯টি কার্যক্রম চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পূর্ণ/আংশিকভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে করে আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ ডিএনডি এলাকা, চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকা ও নোয়াখালী এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় উপকূলীয় পোল্ডারগুলো পর্যায়ক্রমে পুনর্বাসন ও শক্তিশালী করা হচ্ছে। [৪] সূত্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, পদ্মা, মেঘনা, কর্ণফুলী, সাঙ্গু-মাতামুহুরীÑ এই ৫টি নদী সিস্টেমের বেসিনভিত্তিক সমীক্ষা সম্পাদনের কাজ আগামী ২০২৫ নাগাদ শেষ হবে। এছাড়া বড় নদীগুলো চ্যানেলাইজেশন ও সমূদ্র উপকূলে ভূমি পুনরুদ্ধারে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ প্রকল্প গ্রহণ করে বাস্তবায়ন কাজ শুরু করা হবে।
[৫] চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্ম-পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছেÑ ২২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ; ১০৫ কিলোমিটার বাঁধ পুনঃনির্মাণ; ১২৩ কিলোমিটার নদীতীর সংরক্ষণ; ২৩০ কিলোমিটার ছোট নদী-খাল পুনঃখনন; ৯৩ কিলোমিটার গাছ রোপন; ২৬৫ কিলোমিটার নিষ্কাশন খান খনন/পুনঃখনন; ৩২টি পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণ ও ১৫টি পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো পুনঃনির্মাণ/মেরামত; ১৩৬ কিলোমিটার সেচ খাল খনন/পুনঃখনন ও ১৭৩টি সেচ অবকাঠামো নির্মাণ/পুনঃনির্মাণ; ২৫ কিলোমিটার উপকূলীয় বাঁধ মেরামত/উঁচুকরণ; ৬৫০ কিলোমিটার ডুবন্ত বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ; ৮টি সমীক্ষা সম্পাদন; পুনঃখননকৃত নদী ২৪২ কিলোমিটার; বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে ৩টির মধ্যবর্তী মূল্যায়ন; ২টি ভৌত/গাণিতিক মডেলের মাধ্যমে সমীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা এবং বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রাপ্ত প্রস্তাবের শতভাগ প্রকল্পের ওয়ারপো কর্র্তৃক ক্লিয়ারেন্স প্রদান ইত্যাদি।