সেতু নির্মাণের এক বছর পর ক্রয় কমিটিতে ওঠছে ভেরিয়েশন প্রস্তাব পদ্মা সেতুর নদী শাসনে ৮৭৭ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ছে
সোহেল রহমান : [১] ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (৩য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের নদী শাসন কাজের ভেরিয়েশন বাবদ পূর্ত কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন (এসএইচসিএল)-কে আরো ৮৭৭ কোটি ৫৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। সেতু নির্মাণের এক বছর পরে নির্মাতা সংস্থাকে ভেরিয়েশন বাবদ এই অর্থ পরিশোধ করার একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য বুধবার অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হতে পারে।
[২] সূত্র জানায়, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নদী শাসন কাজ একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। বেশ কিছু কারণে নদীশাসন কাজের চুক্তি মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত এবং ঠিকাদারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় কিছু আইটেমের ব্যয় কাজ চলাকালে বৃদ্ধি পেয়েছে, কিছু আইটেমের কাজের পরিমাণ কমেছে এবং কিছু আইটেমের কাজের পরিমাণ অপরিবর্তিত রয়েছে। এ ধরনের প্রায় ১৩টি কাজের পরিমাণ পরিবর্তন হয়েছে। পদ্মা নদীর খর¯্রােতা বিধায় সম্ভাব্য ভাঙ্গনের হাত থেকে অ্যাপ্রোচ সড়কসহ ‘পদ্মা সেতু’ রক্ষার জন্য সেতু নির্মাণের পাশাপাশি মাওয়া প্রান্তে ১.৮৩৫ কিলোমিটার এবং জাজিরা প্রান্তে ১১.০৮ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী শাসনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
[৩] সূত্র জানায়, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নদী শাসন সম্পন্ন করতে মূল চুক্তিপত্রের সময়সীমার অতিরিক্ত ৫৫ মাস সময় বেশি লাগে। পদ্মা নদী বর্ষাকালে খর¯্রােতা হলেও শুষ্ক মৌসুমে নদীতে অনেক চর জেগে উঠে। নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় নদীতে ড্রেজার চলাচল বাঁধাগ্রস্থ হয়। বর্ষাকালে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে ড্রেজার চলাচল সহজ হয়। প্রাকৃতিক কারণে বছরের বেশ কয়েক মাস ড্রেজার চলাচল করতে না পারায় নদীশাসণের কাজ ব্যাহত হয়। এসব কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া, কোভিড-১৯ চলাকালে বিদেশ থেকে ঠিকাদারের জনবলসহ পাথর ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি আমদানি সীমিত হয়ে পড়ে। কোভিড-১৯ এর সময় ঠিকাদারের লোকবল কমে যাওয়াটাও অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয়েছে।
[৪] সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাউনসেল এইসিওএম কর্তৃক মূল সেতু, নদী শাসন ও অ্যাপ্রোচ সড়ক কাজের ডিটেইল ডিজাইন করা হয়েছে। এফআইডিআইসি কন্ট্রাক্ট ডকুমেন্ট অনুযায়ী, পদ্মা সেতু সংলগ্ন নদীশাসন কাজ সম্পাদনের উদ্দেশ্যে দরপত্র আহŸান করা হয় এবং ২০১৪ সালে ১৯ জুন চূড়ান্ত দরপত্র গ্রহণ করা হয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের নদী শাসন কাজের জন্য চীনা ঠিকাদার এসএইচসিএল-কে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি অনুমোদিত হয়। ওই প্রস্তাব অনুমোদনের পর এসএইচসিএল-এর সঙ্গে ২০১৪ সালের ১০ নভেম্বর ৪৮ মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্নের লক্ষ্যে চুক্তিপত্র সই করা হয়। এর চুক্তিমূল্য ছিল ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ ৪১ হাজার টাকা। ওই কাজ তদারকির জন্য কোরিয়ান এক্সপ্রেস কর্পোরেশন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস নিয়োজিত আছে।
[৫] সূত্র জানায়, চুক্তির আওতায় মাওয়া প্রান্তে ১.৮৩৫ কিলোমিটার এবং জাজিরা প্রান্তে ১১.০৮ কিলোমিটার নদী শাসন করা হয়েছে। এর উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে (-) ২৫ মিটার গভীরতা পর্যন্ত ড্রেজিং, বালি ভর্তি ৮০০ কেজি জিওব্যাগ দিয়ে লাউঞ্চিং অ্যাপ্রন নির্মাণ, ¯েøাপ-এ লাউঞ্চিং অ্যপ্রোন পর্যন্ত ১২৫ কেজি জিওব্যাগের ওপরে রক রিপর্যাপ এবং সিসি বøক ডাম্পিং, বাঁধ নির্মাণ এবং ¯েøাপ-এর উভয় দিকে সিসি বøক বসানো, বাঁধের ঢালে ভেটিবার লাগানো ও নদী শাসন কাজের সীমানায় পানি প্রবাহের জন্য ৫টি অফটেক নির্মাণ।