রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা ও অটোমেশনের ধীর গতিতে আইএমএফ’র অসন্তোষ
সোহেল রহমান : [১] চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) কাঙ্খিত রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা, অটোমেশনে ধীরগতি ও গতানুগতিক রাজস্ব আদায়ের রূপরেখায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ঢাকা সফররত প্রতিনিধিদল।
[২] তবে সংস্থাটি অসন্তোষ প্রকাশ করলেও ঋণের শর্ত পূরণ করা সম্ভব বলে এনবিআরের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
[৩] প্রসঙ্গত- বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এনবিআর-এর ভ্যাট, কাস্টমস ও ট্যাক্স বিভাগের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠক করেছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল। বাংলাদেশকে প্রদেয় ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে ঋণের শর্ত পূরণের অগ্রগতি পর্যালোচনায় বর্তমানে তারা ঢাকায় অবস্থান করছেন। সংস্থার এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ ছাড়াও সংস্থাটির একাধিক সদস্য এসব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস নীতির সদস্য ছাড়াও এনবিআরের উইংগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন।
[৪] বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আয়কর আহরণ পরিকল্পনা, নতুন আয়কর আইন ও আয়কর আদায়ে এ আইনের প্রভাব, আয়কর বিভাগ পুনর্গঠনের অবস্থা, কমপ্লায়েন্স রিস্ক ম্যানেজমেন্ট তৈরি করা, রাজস্ব প্রশাসন এবং কর ব্যয় মূল্যায়ন ফলোআপ ইত্যাদি বিষয়ে আয়কর বিভাগের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের আলোচনা হয়।
[৫] পৃথক বৈঠকসমূহে রাজস্ব কর্মকর্তাদের ক্যাপাসিটি বিল্ডিং, এনবিআরে অটোমেশন ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে আইএমএফ।
[৬] জানা যায়, চলতি বাজেটে কর অব্যাহতি কমানো, আমদানি পর্যায়ের শুল্কহার ধীরে ধীরে হ্রাস ও করের আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিল আইএমএফ। সংস্থাটি আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের অটোমেশনে ধীরগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আগামী ৯ অক্টোবর এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম-এর সঙ্গে প্রতিনিধিদলের বৈঠকের কথা রয়েছে। এ বৈঠকের পর পুনরায় তিন বিভাগের (আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস) প্রশাসনের সঙ্গে বসতে চায় আইএমএফ প্রতিনিধিদল।
[৭] জানা যায়, আইএমএফ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে। পরের দুই অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যথাক্রমে দশমিক ৫ শতাংশ ও দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এ তিনটি অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাত ১ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়াতে হলে এনবিআর-কে অতিরিক্ত ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে, যা এনবিআরের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
[৮] বৈঠকে আয়কর বিভাগের পক্ষ থেকে আইএমএফ-কে বলা হয়েছে, গত পাঁচ অর্থবছরে তাদের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ। এ হার বজায় থাকলে স্বাভাবিকভাবে আদায় হবে ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া ভ‚মি রেজিস্ট্রেশন, ভ্রমণকর, টোব্যাকো কর, পরিবেশ সারচার্জ ও করের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ার মাধ্যমে বাকি পাঁচ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে। তবে ভ‚মি রেজিস্ট্রেশন ফি ও কার্বোনেটেড বেভারেজের করহার কমানোর পরও এ খাতে কীভাবে একই পরিমাণ কর আদায় হবেÑ এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। জবাবে এনবিআর কর্মকর্তারা আইএমএফ প্রতিনিধিদলকে সন্তোষজনক জবাব দিতে পেরেছেন বলে সূত্র জানায়।
[৯] পৃথক বৈঠকে এনবিআর-এর ভ্যাট বিভাগ-এর পক্ষ থেকে আইএমএফ-কে জানানো হয়, চার উপায়ে অতিরিক্ত ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে। বাজেট ও নিয়মিত ব্যবস্থার মাধ্যমে ১২ হাজার ৪০০ কোটি থেকে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, সিগারেট খাত থেকে ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা, অব্যাহতি তুলে দিয়ে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ও ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইসের (ইএফডি) মাধ্যমে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে।
[১০] এছাড়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভ্যাট আদায়ের পরিকল্পনা, ইএফডি স্থাপনের অগ্রগতি, ভ্যাট প্রশাসনে সংস্কার, সম্ভাব্য কর্মসূচি, বেঞ্চমার্ক, প্রযুক্তিগত সহায়তা, সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি আইএমএফকে জানিয়েছে ভ্যাট বিভাগ।
[১১] অপর বৈঠকে শুল্ক বিভাগ তাদের পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছে, গত পাঁচ অর্থবছরে তাদের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। এ হার বজায় থাকলে স্বাভাবিকভাবে আদায় হবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া আমদানি পর্যায়ে শুল্কহার পরিবর্তনের মাধ্যমে ১ হাজার ২০০ কোটি ও পেট্রোবাংলার কাছ থেকে বকেয়ার ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায়ের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হবে।