দেশে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না
সোহেল রহমান : [১] দেশে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত তিন ক্যাটাগরির (আউশ, আমন, বোরো) চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। চাল উৎপাদনের মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ কোটি ১৫ লাখ ৬৯ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার টন। এর আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৮১ লাখ ৪৫ হাজার টন। এদিকে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও চলতি অর্থবছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৩৩ লাখ ১৩ হাজার টন।
[২] সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে (গত ৪ অক্টোবর পর্যন্ত) সরকারি পর্যায়ে চালের মজুতের পরিমাণ হচ্ছে ১৬ লাখ ২০ হাজার টন। চালের চাহিদা মেটাতে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কোন চাল আমদানি করা হয়নি এবং চলতি অর্থবছরসহ গত তিন অর্থবছরে চালের কোন আন্তর্জাতিক সাহায্য পাওয়া যায়নি।
[৩] রোববার অনুষ্ঠেয় খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় উপস্থাপিতব্য কার্যপত্রে এসব তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে।
[৪] কার্যপত্রে দেখা যায়, চালের চাহিদা পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসন্ন আমন মৌসুমে ৩ লাখ টন ধান, ৫ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ১ লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। আগামী ১৯ নভেম্বর থেকে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত এগুলো সংগ্রহ করা হবে। অনুষ্ঠেয় বৈঠকে প্রতি কেজি ধান-চালের সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এর আগে গত বোরো মৌসুমে ধান-চাল মিলিয়ে মোট ১৫ লাখ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন বোরো চাল সংগ্রহ করা হয়েছে।
[৫] অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে দেশে গম উৎপাদনের সরকারি লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১২ লাখ ১৪ হাজার টন। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে গম উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৭০ হাজার টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টন।
[৬] বর্তমানে (গত ৪ অক্টোবর পর্যন্ত) সরকারি পর্যায়ে গমের মজুতের পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৫৩ হাজার টন। দেশে গমের চাহিদা পূরণে ইতোমধ্যেই সরকারি উদ্যোগে ৪৬ হাজার টন গম আমদানি করা হয়েছে এবং আরও ৫০ হাজার টন গম আমদানির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া ৪ লাখ টন গম আমদানির চুক্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি খাতে ইতোমধ্যে ১২ লাখ ৩৯ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়েছে।
[৭] কার্যপত্রে দেখা যায়, সরকারি হিসাবে চার বছরের ব্যবধানে দেশে খুচরা পর্যায়ে মোটা চালের দাম প্রতি কেজিতে ১৮ টাকা ২৪ পয়সা বেড়েছে, গম প্রতি কেজিতে ১৭ টাকা ৫৮ পয়সা এবং প্রতি কেজি খোলা আটার দাম ২০ টাকা ৭৪ পয়সা বেড়েছে। তবে প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এসব পণ্যের দাম সামান্য কমেছে।
[৮] কার্যপত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে চাল ও গমের দামও তুলে ধরা হয়েছে। দেখা যায়, চার বছরের ব্যবধানে চালের দাম অনেক বেড়েছে। তুলনামূলকভাবে গমের দাম কিছুটা কম বেড়েছে। এদিকে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে চালের দাম আরও বেড়েছে, অন্যদিকে গমের দাম কমেছে।
[৯] কার্যপত্রে অভ্যন্তরীণ চালের বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে দেশ থেকে সুগন্ধী চালসহ সকল প্রকার চাল রপ্তানি বন্ধের সুপারিশ করা করা হয়েছে। এ বিষয়ে বৈঠকে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। এ বিষয়ে কার্যপত্রে জানানো হয়েছে, গত বছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড-কে ৩ হাজার মেট্রিক টন সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দেয়া হলে অভ্যন্তরীণ চালের বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে দেশ থেকে সুগন্ধী চালসহ সকল প্রকার চাল রপ্তানি বন্ধ রাখার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়-কে চিঠি দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়।
[১০] কার্যপত্রে দেখা যায়, দেশে উৎপাদিত সুগন্ধী চালের প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশই রপ্তানি করা হয়ে থাকে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে সুগন্ধী চাল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৭৯ হাজার মোট্রিক টন। তবে আলোচ্য অর্থবছরে কোন সুগন্ধী চাল রপ্তানি করা হয়নি। এর আগের অর্থবছরে সুগন্ধী চাল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন। এর বিপরীতে রপ্তানি করা হয়েছে ৬ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন।