আফগানিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে শুভ সূচনা বাংলাদেশের
মাসুদ মিয়া:[১] বিশ্বকাপের নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দাপুটে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে শুভ সূচনা করলো বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের দেওয়া ১৫৭ রানের লক্ষে ব্যাট করতে নেমে ৯২ বল বাকি থাকেতেই চার উইকেট হারিয়ে লক্ষে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। যার ফলে আফগানদের বিপক্ষে ৬ উইকেটের বিশাল জয় পেল বাংলাদেশ। [২]আফগানিস্তানের দেওয়া ১৫৭ রানের সহজ লক্ষে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশে ওপেনিংয়ে নামেন লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভারো করলেও দলীয় ১৯ রানে রান আউটের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তানজিদ হাসান তামিম।
ফজল হক ফারুকির করা বল কাভারে ঠেলে রান নেওয়ার জন্য সামনের পায়ে একটু ঝুঁকেছিলেন লিটন। রান নেওয়ার চেষ্টা করেননি তিনি। তবে অন্য প্রান্ত থেকে তামিম ততক্ষণে দৌড়ে উইকেটের মাঝে চলে এসেছিলেন, লিটনের কল না শুনেই। নজিবুল্লাহ জাদরানের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হন তানজিদ। [৩]তামিমের বিদায়ের পর বেশি সময় ক্রিজে থাকতে পারেননি আরেক ওপেনার লিটন কুমার দাস। ফারুকিকে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে আফ স্টাম্পের অনেক বাইরে থেকে বল ডেকে এনে বোল্ড হয়েছেন। সাজঘরে ফেরার আগে লিটনের ব্যাট থেকে এসেছে ১৮ বলে ১৩ রান।
এই দুই ওপেনারের বিদায়ের পর জুটি বাঁধেন দুই বন্ধু মিরাজ ও শান্ত। তাদের জুটিতে ভর করে বাংলাদেশ তাদের দলীয় সংগ্রহ ১০০ পার করে। আর মিরাজ তুলে নেন তার ব্যক্তিগত হাফ সেঞ্চুরি। ৫০ বলে ৫০ করেন মিরাজ। যাতে রয়েছে ৪ টি চারের মার।
দুই দফা জীবন পেয়ে ফিফটি হাঁকানো মিরাজ থামেন ৫৭ রানে। [৪]নাভিন উল হককে মিড অফের ওপর দিয়ে তুলে মারতে গিয়েছিলেন মিরাজ। কিন্তু সেখানে দারুণভাবে ক্যাচ তালুবন্দী করেছেন রহমত শাহ। সাজঘরে ফেরার আগে করেছেন ৭৩ বলে ৫৭ রান।
মিরাজের বিদায়ের পর ক্রিজে নামেন অধিনায়খ সাকিব আল হাসান। তিনি দারুণভাবে সঙ্গ দিতে থাকেন নাজমুল হোসেন শান্তকে। মিরাজের পর শান্তও তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। ৮০ বলে ৫০ রান করেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে একটি চার ও একটি ছয়ের মার।
[৫]এরপর সাবিককে সঙ্গে নিয়ে সহজেই পৌঁছে যার জয়ের বন্দরে। ৩৪ ওভার চার বলেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। এই জয়ের ফলে বিশ্বকাপের শুভ সূচনা করলো বাংলাদেশ।
এর আগে টস জিতে আফগানদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। আফগানদের বিপক্ষে বোলিং করতে নেমে কিছুটা বিপাকেই পড়ে বাংলাদেশ। কিছুতেই তাদের ওপেনিং জুটি ভাঙতে পারছিলেন না টাইগার বোলাররা। অবশেষে দলের হাল ধরেন সাকিব। নিজের ঘূর্ণিতে কুপোকাত করেন নাজিবউল্লাহ জাদরানকে। নাজিবউল্লাহ জাদরানের বিদায়ের পর ভাঙে আফগানদের ওপেনিং জুটি।
[৬]এরপর রহমত শাহকে নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছিলেন গুরবাজ। বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠছিল এই জুটি। তখনই আবারও ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভাব ঘটে সাকিবের। ২৫ বলে ১৮ রান করা রহমত শাহকে ফেরান সাকিব।
এরপর হাশমতউল্লাহ শহীদিকে নিয়ে বড় স্কোরের দিকে যাচ্ছিলেন গুরবাজ। কোনোভাবেই ভাঙা যাচ্ছিল না তাদের জুটি। এরপরেই বোলিংয়ে আসেন মিরাজ। ২৫তম ওভারে ফেরালেন হাশমতউল্লাহ শহীদিকে। [৭]তাওহীদ হৃদয়ের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। আউট হওয়ার আগে করেন ৩৮ বলে ১৮। এর পরের ওভারেই মোস্তাফিজের শিকার হয়ে ফিরে যান হাফ সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে থাকা রহমানউল্লাহ গুরবাজ। ৬২ বলে ৪৭ রান করে সাকিবের শিকার হন তিনি।
[৮]এরপর আফগান শিবিরে আবারও আঘাত হানেন সাকিব আল হামান। তুলে নেন নিজের তৃতীয় উইকেট। নাজিবউল্লাহ জাদরানকে থিতু হতে দেননি তিনি। ১৩ বলে ৫ রান করে ফেরত যান জাদরান।
জাদরানের বিদায়ের পর তাসকিনের শিকার হয়ে ফিরে যান অভিজ্ঞ ব্যাটার মোহম্মদ নবি। ১২ বলে ৬ রান করেন তিনি। এরপর কার্যকরী ইনিংস খেলেন আজমতউল্লাহ। ২০ বলে ২২ রান করেন তিনি, এরপর শরিফুল ইসলামের বলে ইনসাইড এজ হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। তখন আফগানদের দলীয় রান ১৫৬। [৯] স্কোর বোর্ডে রানসংখ্যা স্থির থাকতেই মুজিবকে ফেরান মিরাজ। তিনি নেন রশিদের উইকেটও। নাভিন উল হক ও ফজল হক ফারুকী রানের খাতাই খুলতে পারেননি। বিশ্বকাপের দল ঘোষণার পর সাকিব-তামিম ইস্যুতে উত্তপ্ত ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গন। [১০] এদিকে দেশের ক্রিকেটে এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে পেছনে ফেলে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের ১৩তম আসরে অংশ নিতে ভারতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সব বিতর্ককে পেছনে ফেলে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দাপুটে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে শুভ করেছে বাংলাদেশ।