সংকটকে সম্ভাবনায় রূপান্তরের অসাধারণ এক নেত্রী
ড. আতিউর রহমান
বাংলাদেশের মতো সমস্যায় ভরা একটি দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়। কোথায় সমস্যা নেই। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, ভ‚-রাজনৈতিক এবং পরিবেশগত সমস্যার অন্ত নেই এদেশে। কখনো কখনো এইসব সমস্যা সংকটেও রূপ নেয়। এসব সংকট মোকাবেলায় দরকার হয় সুদূরপ্রসারি নেতৃত্বের। রাষ্ট্রনায়কোচিত এই নেতৃত্বের পক্ষেই সম্ভব সমাজের ভেতর থেকে ঐক্যের শক্তি বিকশিত করে স্বদেশের ইতিবাচক রুপান্তরের পথকে সুদৃঢ় করা। সবাইকে আশাবাদী করে সকল চ্যালেঞ্জকে পায়ে দলে স্বদেশকে সামনের দিকে জোর কদমে এগিয়ে নেবার মতো নেতৃত্বের পরম্পরা আমরা বঙ্গবন্ধু থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যার দেশ পরিচালনার ধরনের মাঝে খুঁজে পাই। একটি আধুনিক কল্যাণময় রাষ্ট্র-বিনির্মাণে নেতৃত্বের এই আখ্যান লিখতে গেলে অবশ্যি বর্তমানের এই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ের পরীক্ষিত নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপর উজ্জ্বল আলো পড়বেই।
এই প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশের অসামান্য উন্নয়নে নেতৃত্বের ভ‚মিকার কথা এসে যায়। তিনিই সত্যিকারের নেতা যিনি মৃত্যুকে তুচ্ছজ্ঞান করে জীবনকে বাজি রেখে স্বদেশবাসীর কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করতে পারেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শত্রæর হাজারো পাথর বিছানো পথে নির্ভয়ে হেঁটে চলেছেন সেই সাহসী মন নিয়ে। লড়াই করে এগিয়ে চলার সেই মন তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে তাঁর পিতার কাছ থেকেই পেয়েছেন। সীমিত সম্পদ সত্তে¡ও দারিদ্র্যপিড়িত একটি দেশকে কী করে সমৃদ্ধির অভিযাত্রায় সামিল করা যায় সে কথা তিনি আমাদের ইতিহাসলগ্ন উন্নয়নের পথরেখা থেকেই শিখেছেন। তাই তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের গতিময় স্বউন্নয়নের গল্পটি বুঝতে হলে আমাদের ইতিহাসের শুরুর দিনগুলোতে ফিরে যেতেই হবে।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে নানা প্রতিক‚লতা, নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে বাংলাদেশ অর্থনীতির যে অসাধারণ রূপান্তর ঘটেছে সে গল্পটি আসলেই চমকপ্রদ। শুরুটা ছিলো খুবই চ্যালেঞ্জিং। মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ ছিলো এক ধ্বংস্ত‚প। বলা চলে একেবারে শূন্য হাতেই বাংলাদেশ তার উন্নয়ন অভিযাত্রা শুরু করেছিলো। ঘরে খাবার নেই। রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত। বিদেশ থেকে খাবার কেনার জন্য সামান্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেই। তরণদের কাজ নেই। কিন্তু তাদের প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া। বৈরী পাকিস্তানি ক‚টনীতির ফলে অনেক দেশ সাহায্য করতে দ্বিধান্বিত। তবে বড় সম্পদ ছিলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্দীপনামূলক নান্দনিক নেতৃত্ব। জাতিকে দেওয়া এই নেতৃত্বের লড়াকু মনই বাংলাদেশকে টেনে তুলে দেয় উন্নয়নের মহাসড়কে। অর্থনীতির প্রতিটি খাতে তিনি অপার সম্ভাবনার বীজ বপন করেন। মনে রাখা চাই ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সময় কালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় (বিশ্ব ব্যাংকের হিসেব মতে) ৯৯ ডলার থেকে ২৬০ ডলারে উন্নীত হয়। তা বেড়েছিলো ১৬৩ শতাংশ। অথচ ১৯৭৫-এর পর তা কমতে থাকে। দীর্ঘ ১৩ বছর লেগেছিলো তা পঁচাত্তরের সমান হতে। এতেই প্রমাণিত হয় যে আশা জাগানিয়া নেতৃত্ব কতোটা গুরুত্বপূর্ণ। এই কথা পরবর্তী সময়ের জন্যও সমান প্রযোজ্য।
২০০৯ থেকে ২০০২২ সাল নাগাদ মাথাপিছু আয় ৬৯৯ ডলার থেকে প্রায় চারগুণ বেড়েছিলো। এই পর্বেও নেতৃত্বের গুরুত্বও দৃশ্যমান। ১৯৯১-১৯৯৫ পর্বে পাঁচ বছরের প্রবৃদ্ধির গড় অর্জন ছিলো ৪.১৫ শতাংশ। আর ২০১৬-২০২০ পর্বে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭.১৪ শতাংশ। শিল্পায়নের অগ্রগতিই একটি অর্থনীতির রূপান্তরের বড়ো নির্দেশক। গত এক দশকে জিডিপিতে শিল্প খাতের অনুপাত বেড়েছে ২২ থেকে ৩৭ শতাংশ। এর ফলে কর্মসংস্থানে ব্যাপক সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে। তবে কৃষিও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রেখেছে এই রূপান্তরকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার জন্য।
উল্লেখ্য দানা দানা শস্যের উৎপাদন বাহাত্তরে ছিলো পনেরো মিলিয়ন টন। ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ মিলিয়ন টনে। আর ২০২১ সালে তার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৩ মিলিয়ন টন। এসবের প্রভাব দেশের সার্বিক দারিদ্র্যের হারের ওপর পড়েছে। ২০১০ সালে এর হার ছিলো ৩১.৫ শতাংশ। এটি ২০২২ সালে কমে দাঁড়ায় ১৮.৭ শতাংশ। এর পাশাপাশি মানবিক উন্নয়নের সূচকসমূহের উন্নতিও ছিলো চোখে পড়ার মতো। ২০০৫ সালে জীবনের গড় আয়ু ছিলো ৬৫.২ বছর।তা আজ ৭৩ বছর। ২০০৫-২০২৩ পর্বে শিশু মৃত্যুর হার হাজারে ৫১ থেকে কমে ২২ হয়েছে। একইভাবে মাতৃমৃত্যুর হার ওই সময়ে কমেছে লাখে ৩৭৬ থেকে ১২৩। সাক্ষরতার হার, ক্ষুধাসূচক এবং নারীর ক্ষমতায়নেও ঘটেছে বিপুল পরিবর্তন। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক সূচকগুলোর এই অভাবনীয় উন্নয়নের পেছনে যেসব কারণ কাজ করেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, তৈরি পোশাকসহ ম্যানুফেকচারিং খাতের দ্রæত বিকাশ, প্রবাস আয়ের ব্যাপক বৃদ্ধি, বহুমুখী কৃষির অসামান্য রূপান্তর ও প্রবৃদ্ধি, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার নির্ভর সুবিস্তৃত আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, আনুষ্ঠানিক খাতে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণ (২০০৯-২০২৩ পর্বে ৩০ থেকে ৩৮ শতাংশ) এবং শতভাগ পরিবারে বিদ্যুৎপ্রাপ্তি। এর পেছনে অবশ্য সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেছে।
এই সময়টায় অর্থনীতি ও রাজনীতিতে বড় কোনো ভুল কৌশল গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ। বরং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অশান্তি এড়িয়ে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। তাই এই চোখ জোড়ানো সাফল্য। তবে হালে ম্যাক্রো অর্থনীতিতে বেশকিছু অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে। চমৎকারভাবে কোভিড সংকট মোকাবেলা সত্তে¡ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের বহিঃঅর্থনীতি বেশ খানিকটা চাপের মুখে পড়েছে। ব্যাপক আমদানি মূল্য বেড়ে যাওয়া এবং রফতানি ও প্রবাস আয় সেভাবে না বাড়ায় লেনদেনের ভারসাম্যে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। রিজার্ভকে ক্ষয় হতে দিয়ে এই পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলা যাবে না। বরং এর ফলে টাকার দাম প্রায় তিরিশ শতাংশ কমে গেছে। এর প্রভাবে আমদানি করা জিনিসপত্রের দাম বেশ বেড়েছে। আর সে কারণেই মূল্যস্ফীতি বাগে আনা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতিকে আরও সংকোচনমূলক করা ও দুইয়ের মাঝে আরও সমন্বয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে হয়। নীতি সুদের হার আরও বাড়ানো এবং সরকারি খরচের দক্ষতা বাড়ানোও এই সময়ের বড়ো দাবি। পাশাপাশি টাকা-ডলারের বিনিময় হারকে আরও নমনীয় ও বাজার-ভিত্তিক করে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে স্পেকুলেশন ও অনিশ্চয়তা দূর করা জরুরি হয়ে পড়েছে। সবার জন্য একটাই বিনিময় হারের প্রস্তাবটিও দ্রæত বাস্তবায়নের দাবি রাখে। আগামী ছয় মাস আর কোনো গাড়ি আমদানি নয় এমন নীতির পাশাপাশি বিলাস পণ্যের আমদানি অনুৎসাহিত করা এবং প্রয়োজনীয় পণ্য, সেবা, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি আমদানির সুযোগ বৃদ্ধি করা গেলে মনে হয় পরিস্থিতির উন্নতি হবে। প্রবাস আয় বাড়ানোর জন্য ডলারের দাম আরেকটু বাড়তে দেয়া, সেবা খাতসহ প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য ছোট খাটো আমদানকারকদের ছায়া বাজারে ডলারের চাহিদা থাকায় তা মেটানোর ব্যবস্থা করার মতো দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি মনে হয়ে। একইসঙ্গে সামাজিক সুরক্ষা আরও বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির ধকল সামলানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর পশ্চিমের বাজারে আরএমজিসহ পণ্যের প্রবেশ সীমিত হতে পারে, মেধা সত্ত¡ আইনের প্রয়োগের ফলে ওষুধ ও সফটওয়্যার শিল্পের ওপর যে প্রভাব পড়বে সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক আর্থিক ও উন্নয়ন সংস্থা থেকে ঋণের সুদ হারও বেশ খানিকটা বাড়বে সে কথাটিও মনে রাখতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বাজেট ও অর্থায়নের দিকটি অগ্রাধিকার দিতে হবে। ডিজেল দিয়ে সেচ পরিচালনার বদলে সৌর শক্তির ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত রাজস্ব প্রণোদনা ও আর্থিক সংস্থান করার প্রয়োজন রয়েছে। একথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও কিছুদিন আগে একনেক সভায় বলেছেন।
তবে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রাকে টেকসই করতে হলে আঞ্চলিক পর্যায়ে মাল্টিমোডাল সংযোগমূলক অবকাঠামো গড়ে তোলার গতিকে আরও তরান্বিত করা, অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যক্তিখাতের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা এবং বিশেষ শিল্পাঞ্চলগুলোর ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিংকেজ নিশ্চিত করাসহ এসবের বাস্তবায়ন দ্রæত সম্পন্ন করার মতো নীতি উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই। একথা মানতেই হবে যে আগামী দিনের অর্থনীতি, সমাজ ও রাজনীতি হবে পুরোপুরি ডিজিটাল। বাণিজ্য হবে ই-কমার্স ভিত্তিক।
এসএমই সম্পর্কিত ইনোভেশন ও উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতির ভিত্তি আরও মজবুত করবে, ব্যক্তিখাত অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির দৌঁড়ে এগিয়ে থাকবে, শিল্পের উন্নতির জন্য শিক্ষাকে আরও দক্ষ ও প্রযুক্তিমুখী করা প্রয়োজন, কৃষির আধুনিকায়ন ও যন্ত্রায়ন, আঞ্চলিক বাণিজ্যের হাব হবে বাংলাদেশ এবং উপযুক্ত সংস্কারের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়ানোর মতো দরকারি নীতি উদ্যোগগুলোর দিকে বিশেষ নজর দিতে পারলে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনাকে আরও জোরদার করা সম্ভব। রফতানি শিল্প পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ভোগের চাহিদা মেটানোর জন্য দেশের ভেতরে আমদানি-বিকল্প যেসব শিল্প গড়ে উঠেছে সেসবের দিকেও প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখা চাই।
তবে আমরা এখন গেøাবালাইজড পৃথিবীতে বাস করি। বর্তমান ভ‚-রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশÑ ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারো সাথে শত্রæতা নয়’ আদলের যে নীতি গ্রহণ করে অগিয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুফল সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেবার এবং শান্তির অন্বেষার আহবান তাঁর ঐতিহাসিক জাতিসংঘের ভাষণে রেখছিলেন তার রেশ কিন্তু এখনও রয়ে গেছে। নেতৃত্বের সেই পরম্পরার অংশ হিসেবেই মাত্র কিছুদিন আগেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের এক সভায় পাঁচ দফা উপস্থাপন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর মতোই তিনি বিশ্ব অর্থনীতির স্থাপত্য সংস্কার করে কী করে দক্ষিণের দেশগুলোর সাধারণ মানুষের কল্যাণের উদ্দেশে আইএমএফের এসডিআর ও অন্যান্য অর্থায়ন প্রক্রিয়াকে আরও জনবান্ধব, দুর্যোগ মোকাবেলা ও জলবায়ু-বান্ধব করার ওপর জোর দিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি সমকালীন অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো স্বীকার করেছেন। দক্ষিণের দেশগুলোর চ্যালেঞ্জসমূহ একযোগে মোকাবেলার ওপর ওপর জোর দিয়েছেন। তাছাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন অর্জনকে এক নয়া উচ্চতায় নেবার অঙ্গিকারও করেছেন। কিন্তু এতোসব সম্ভাবনাকে সত্যি সত্যি কাজে লাগাতে হলে আমাদের সমাজ ও রাজনীতিতে অশান্তি ও অস্থিরতা পরিহারের প্রয়োজন তা নিশ্চয় অস্বীকার করা যাবে না। এমনিতেই বৈষম্য, দুর্নীতি এবং দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কারণে সমাজের ভেতরে বেশ চাপ ও তাপ দেখা দিয়েছে। তার ওপর রাজনৈতিক সহিংসতা ও অস্থিরতার নয়া চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের সম্ভাবনার ক্ষেত্রকে বেশ খানিকটা প্রশ্নের মুখে ফেলে দিতে চাইছে। এতে করে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাজ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। তারা তাদের মতো করে বাঁচতে চান। কারো দয়া দাক্ষিণ্য নয়, শুধু কাজের পরিবেশটি বজায় থাকুক সেটিই চান। একইভাবে বাংলাদেশের সাহসী উদ্যোক্তারাও অবিরাম তাদের উদ্যোগগুলো সচল ও সক্ষম রাখতে চান। কিন্তু উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত নন এমন স্বার্থান্বেষী মহলের অপতৎপরতায় তাদের পণ্যের বিদেশি বাজার যদি সংকোচনের মুখে পড়ে তাহলে দেশের সব মানুষেরই বিপদ। অনেক কষ্ট করে এবং লেগে থেকে আমাদের শিল্পায়নে যে সাফল্য আমরা অর্জন করেছি তা যেকোনো মূল্যে টেকসই রাখার কোনে বিকল্প নেই বাংলাদেশের জন্য। তাই শত চ্যালেঞ্জ সত্তে¡ও স্বদেশে ও বিদেশে উন্নত বাংলাদেশ নির্মানের স্বপ্নগুলো নিরন্তর ছড়িয়ে দেওয়ার আশার বতিগুলো আমাদের অবশ্যি জ্বালিয়ে রাখতেই হবে। আমাদের পরিশ্রমী মানুষ ও উদ্যোক্তাদের ইতিবাচক উদ্যোগগলো অব্যাহত থাক সেই প্রত্যাশাই করছি। কেননা রবীন্দ্রনাথের ভাষায় আশা করবার অধিকারই আমাদের চলার পথে বড় পাথেয় হতে পারে। স্বপ্নের ক্ষেত্র তাই আরও প্রসারিত হোক। সাধারণ মানুষের জীবনচলা প্রতিবন্ধকতামুক্ত থাক। উদারনৈতিক ও সৃজনশীল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা সচল থাক। লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর