ভুবন জুড়ে শেখ হাসিনার আসনখানি
জাফর ওয়াজেদ
ভ‚গোলের গÐি ছাড়িয়ে তিনি নিজেকে প্রসারিত করেছেন বিশ^ভাবনায়। দেশজ ভাবনার সীমারেখা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমÐলে বিশ^ভাবনাকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত জানাতেও পিছপা নন। বিশ্বজুড়ে দ্ব›দ্ব, হানাহানি, সংঘাত, সংঘর্ষ, অস্ত্র ও বারুদের ঝনাৎকারের বিপরীতে শান্তিবার্তা তিনি ছড়িয়ে দিতে চান। তাই দেখা যায়, স্বদেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি সম্পাদন করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ক্ষেত্রটি সম্প্রসারণ করেছেন। তেমনি ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যও থেকেছেন সচেষ্ট। বিভিন্ন সময়ে মতামত তুলে ধরে তিনি দিক-নির্দেশনাও দিয়েছেন। এমনকি দেশে দেশে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলেরও তিনি ঘোরবিরোধী। বিশ্ব দরবারে এর বিরুদ্ধে নিজস্ব অবস্থানও তুলে ধরেছেন। এমনকি নিজ দেশের সংবিধানে তা অন্তর্ভুক্তও করেছেন। দেখতে পাই, বিশ শতকের শেষে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে বিশে^র বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সামরিক জান্তাদের ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে বিশ^বাসীর সংহতির কথা তুলে ধরেছিলেন। যা এখনো অব্যাহত রেখেছেন।
বিশে^র সামরিক জান্তা শাসকরা যেমন পাকিস্তানে তখন ক্ষমতা দখলকারী সামরিক জান্তা শাসক পারভেজ মোশাররফ এ বক্তব্যকে ভালোভাবে নেয়নি। বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখালেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসবে মোটেও ভ্রƒক্ষেপ করেন নি। নিজ দেশের সামরিক জান্তাদের দুঃশাসনে জনজীবন কীভাবে পদপিষ্ট হয়েছে তা শেখ হাসিনার জানা। তাই নিজ দেশের সংবিধানেও সামরিক অভ্যুত্থানকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বলবৎ করেছেন। মূলত শান্তির সম্প্রীতিকামী শেখ হাসিনা সব সময় হিংসাকে পরিহার করে এসেছেন। প্রতিশোধের মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে নিজেকে নির্মমতার প্রতীক করে তোলেন নি কোনোভাবেই। হিং¯্রতার বিপরীতে শান্তির বার্তাই তিনি প্রচার করে আসছেন। হিংসাকে জয় করতে সবসময় তিনি সচেষ্ট।
মানুষকে ভালোবাসার মধ্যেই রয়েছে হিংসার মুক্তি। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়, ‘বাংলা অভিধান ছাড়া আর কোনো ভাষার অভিধানে পরশ্রীকাতর শব্দটি নেই।’ আর শেখ হাসিনা চাইছেন বাংলা অভিধান থেকেও যেন মুছে যায় এই শব্দটি। কিন্তু যে সমাজ বিদ্যমান, সেখান থেকে এসব ঝেঁটিয়ে বিদায় করা সহজ নয় যদিও। রবীন্দ্রানুরাগী শেখ হাসিনা কবিগুরুর মতো বিশ্বাস করেন, ‘পৃথিবীজুড়ে একটি দেশ, পৃথিবীর সব মানুষ মিলে একটি জাতি-এটি মেনে নিলে পৃথিবীর সব মানুষই এক দেশের, এক জাতির মানুষ হবে। দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে বৈরিতা থাকবে না।’ অবশ্য শেখ হাসিনা এটাও জানেন, এ কথা শুনতে যতো সহজ, কাজে ততো নয়। খুব উঁচুদরের শিক্ষা-সংস্কৃতি থাকলেই তবে লোকে এ কথার মর্ম বুঝবে।
দুই দশক আগে পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি ‘দেশীকোত্তম গ্রহণকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে দেশে কালে কালে মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির ভাব গড়ে তোলার জন্য নিবেদিত হওয়ার কথা বলেছিলেন। রাষ্ট্রনায়কোচিত আচরণের বহির্প্রকাশ ঘটিয়ে তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে নিজেকে সমাসীন করার জন্য পর্ব সমাপন করে সম্মুখে শান্তি পারাবার নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। গত দেড়দশক ধরে বিশ্বের গণমাধ্যমে তিনি একটি প্রশংসিত নাম। বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর জোটেও তিনি সমাসীন হয়ে আসছেন। আর গণমাধ্যমজুড়ে তিনি একটি উন্নয়নশীল দেশে উন্নত হবার পথ পরিক্রমাকে সামনে তুলে ধরছেন।
শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান এবং তা বাস্তবায়নও করেন। তাই বিশ্ব গণমাধ্যম অনায়াসে তুলে আনে সেই দৃশ্যপটÑ বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখে। শুধু দেখা নয়, সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পথ নির্দেশিকা এবং সঠিক কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। যাত্রাপথ মসৃণ না হলেও, স্বপ্নপূরণের পালায় চড়াই-উৎরাই ভেঙ্গে বেরিয়ে আসছে উন্নতির অগ্রযাত্রায়। বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার চৌহদ্দি স্বদেশ ছাড়িয়ে এখন বিশ্বসভায় পৌঁছে গেছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি এবং আর্থ-সামাজিক সূচকে ‘উন্নয়ন বিশ্বময়’ হিসেবে সত্যিকারার্থেই উত্থান ঘটেছে দেশটির। তাই দেখা যায়, উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে আন্তর্জাতিক বিশ্বে পরিচিত পেয়েছে বাংলাদেশ। আর দেশটির এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতিশীল নেতৃত্বের কারণে বিশ্ব নেতৃত্বের কাছেই শুধু নয়, দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে একজন আদর্শ রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে নিজস্ব ইমেজ সৃষ্টি করতে পেরেছেন। হতদরিদ্র অবস্থান থেকে উন্নয়নশীল দেশের পথে আজ বাংলাদেশ। বিশ্ব উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ তার অবস্থানকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যা অভাবনীয় মনে হয়েছে অনেক দেশি-বিদেশি গণমাধমের কাছে। অবিশ্বাসও একটি পশ্চাদপদ দেশকে উন্নয়নের কাতের শামিল করার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা যে অবস্থানে পৌঁছেছেন, বিশ্বের সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদগুলো গত এক দশক ধরে তা অবলোকন করে আসছে। এমনকি নানা প্রতিবেদনও ছেপেছেন।
দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমের কাছে শেখ হাসিনা গুরুত্ববহ হয়ে উঠেছেন তার ‘ক্যারিশমাটিক’ ভূমিকার কারণে। মিলেছে একের পর এক সম্মানজনক আন্তর্জাতিক পুরস্কার। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব দায়িত্বশীল পররাষ্ট্রনীতি ও কূটনৈতিক সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক ডিগ্রি পুরস্কার সরকার প্রধান ও রাষ্ট্র পেয়েছে।
টাইম সাময়িকীর বিবেচনার শেখ হাসিনা বিশ্বের প্রভাবশালী দশনারী নেত্রীর একজন মনোনীত হয়েছিলেন। বিশ্ব সততার জরিপে তিনি ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সততার শীর্ষের তিন নেতার একজন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ‘পিপলস এন্ড পলিটিক্সের গবেষণা প্রতিবেদনে। যা গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে, সেখানও দেখা গেছে বেতন ছাড়া শেখ হাসিনার সম্পদের স্থিতিতে কোনো সংযুক্তি নেই। গোপন সম্পদও নেই। দেশের ৭৮ ভাগ মানুষ মনে করেন তিনি সৎ এবং ব্যক্তিগত লোভ-লালসার উর্ধে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল লিখেছিল ২০১৭ সালে অংসান সুচি পশ্চিমা বিশ্বে অধিক পরিচিত একজন ব্যক্তি। তিনি শান্তিতে নোবেলও পেয়েছেন। কিন্তু আজ তিনি সারাবিশ্বে নিন্দিত এবং তারই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাবিশ্বে প্রশংসিত।
রোহিঙ্গা ইস্যুর ধকল পোহাচ্ছে বাংলাদেশ। গার্ডিয়ান পত্রিকা লিখেছিল ২০১৭ সালের আগস্টে, ‘রোহিঙ্গ ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বিশাল মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন তা বিরল। তিনি যে একজন হৃদয়বান রাষ্ট্রনায়ক তা তিনি আগেও প্রমাণ করেছেন, এবারও প্রমাণ করলেন।’ নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়-খাদ্য দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্বনন্দিত হয়েছেন। বিশ্বের সব গণমাধ্যম শেখ হাসিনার মানবিক ভূমিকার উচ্ছ¡সিত প্রশংসা করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতার জননী বা মাদার অব হিউম্যানিটি আখ্যায়িত করেছে কয়েকটি ব্রিটিশ গণমাধ্যম। ইন্ডিয়া টুডের অনলাইন প্রতিবেদনে বলা হয় ‘শেখ হাসিনার হৃদয় বঙ্গোপসাগরের চাইতেও বিশাল। যেখানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে কার্পণ্য নেই।’
লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও মহাপরিচালক প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)।