শেখ হাসিনার পাশে বাংলাদেশ আছে
অধ্যাপক ড. অনুপম সেন
১৯৮৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে ১৯ বার হত্যাচেষ্টা হয়েছিলো। তিনি বারবার খুনিদের টার্গেট হয়েছেন। কেন এমনটা হচ্ছে? কারণ শেখ হাসিনা হচ্ছেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক। গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক বলেই শেখ হাসিনা বারবার খুনিদের টার্গেট হচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু তো বাংলাদেশেরই প্রতীক। বাবার পর কন্যা শেখ হাসিনাও প্রতীক হয়ে উঠেছেন নানাভাবে। জনগণ তাঁকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের পক্ষশক্তি হিসেবে নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই আমাদের নিয়ে বিভিন্ন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখছি পাকিস্তানি বা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের কাছ থেকে, সাম্রাজ্যবাদীদের কাছ থেকে। সাম্রাজ্যবাদীদেরও বিভিন্ন রকম রূপ থাকে। তারা সেই প্রতিক্রিয়া লালন-পালন করে থাকে। হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলার মধ্যদিয়েই সাম্রাজ্যবাদীদের ভিন্ন রূপেরই প্রতিফলন।
১৫ আগস্টের ঘটনাটি বিশ^ ইতিহাসে একটি বিরল ঘটনা ও ভয়াবহ হত্যাকাÐ। যেখানে কেবলমাত্র জাতির জনকই নিহত হননি, তাঁর পরিবারের সব সদস্যই নিহত হয়েছিলেন। এমনকি তার শিশুপুত্র রাসেলকেও হত্যা করা হয়েছিলো। কিন্তু এখানে এই হত্যাযজ্ঞের সমাপ্তি ঘটেনি। ১৫ আগস্টের ঘটনাকে আমরা ধরে নিয়েছিলোাম কিছু অপশক্তি ও অশুভশক্তির কাজ। তারাই এই নির্মম হত্যাকাÐটি ঘটিয়েছে। কিন্তু ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাকে মনো হলো, রাষ্ট্রশক্তিই এই হত্যাচেষ্টা করেছে। বিরোধীদলকে ধ্বংস করার জন্যই রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করা হয়েছিলো। ২১ আগস্টের ঘটনাকে যেভাবে রাষ্ট্রশক্তি বিপথে পরিচালনার চেষ্টা করেছিলো, জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়েছিলো, এর ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা বড় পরিবর্তন এলো। দেখা গেলো, আন্দোলনের মধ্যদিয়ে নয়, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গোপনে ব্যবহার ও প্রয়োগ করে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করে দেওয়ার প্রচেষ্টা লক্ষ্যণীয় ছিলো।
ভারতে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার পেছনে জওহরলাল নেহেরুর অবদান অনেক। নেহেরু ভারতের গণতন্ত্রকে নানান ভাবে রক্ষা করেছেন। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে লালন করেছেন। শেখ হাসিনাও তাই করছেন। আমাদের বিচারব্যবস্থা এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন। শেখ হাসিনা ২১ আগস্টের বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা মামলাটিকে স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়েই নিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলাকেও স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে নিয়ে গেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনকেও এখন স্বাধীন ও শক্তিশালী বলে মনে হচ্ছে। সংসদের স্থায়ী কমিটি, সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনাই। এভাবেই শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের একটি ভিত্তি তৈরি করছেন। তাকে আরও অন্তত দুই টার্ম বা দশ বছরের মতো রাষ্ট্রক্ষমতায় রাখতে পারলে গণতন্ত্র একটি দৃঢ়ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে।
আওয়ামী লীগ যেহেতু একটা বড় প্ল্যাটফরম, সেখানে জামায়াত, প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধগোষ্ঠী অনেকসময় সতর্কতা সত্তে¡ও তার মধ্যে ঢুকে পড়ে। বাংলাদেশে যা হয়, যারাই সরকারে আসে, সেই দলে ঢোকার চেষ্টা করে অপশক্তিগুলো। অনেকসময় তারা ঢুকেও যায়। আমাদের কিছু রাজনৈতিক নেতাও ক্ষুদ্র স্বার্থে এসব প্রশ্রয় দেন। প্রশ্রয় দেওয়ার ফলে তারা ধীরে ধীরে দলে কোনো না কোনোভাবে ঢুকে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হয়, দলকে বিব্রত করার চেষ্টা করে।
বঙ্গবন্ধুর সময়ও এরকম কিছুটা হয়েছিলো। খন্দকার মোশতাক আহমেদ তার বড় উদাহরণ। এদের সম্পর্কে আওয়ামী লীগকে সবসময় সজাগ-সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের যারা পক্ষশক্তি তাদের সবসময়ই আওয়ামী লীগকে কীটমুক্ত, পরিষ্কার রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোকেও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, পরিশুদ্ধ করতে হবে। শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে, তা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সবাইকে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে হবে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলো। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর তো ব্যাপক পদক্ষেপ নিলো। ৪ কোটি শিক্ষার্থীকে ৩৫ কোটি বই বিনামূল্যে বই বিতরণ তো বিশ্ব ইতিহাস। এমন নজির বিশে^র আর কোথাও নেই। শিক্ষা ব্যবস্থায় অবকাঠামো, উপবৃত্তি, উপকরণ বাড়ানো যেতে পারে, স্কুল-কলেজ সংখ্যা বাড়াতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও তো অনেক বাড়লো। কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থায় পর্যাপ্ত ও প্রশিক্ষিত লোকের অভাব আছে। কারণ যখন এসব হয়েছে খুব দ্রæত হয়েছিলো। মানসম্মত ও ভালো শিক্ষকের অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। যার ক্ষতিকর প্রভাব আমরা বিভিন্ন সময় দেখতে পাই।
আমাদের এখানে এখন অনেকেই বিশাল বিত্তের মালিক হয়েছেন। যাদের অতি সামান্য অবস্থা ছিলো, তারা নানান সুযোগ-সুবিধা পেয়ে অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন। উচ্চবিত্ত বা তাদের ছেলেমেয়েরাই এখন কর্তৃত্ব করছে। মানুষের প্রতি তাদের কোনো শ্রদ্ধাবোধ নেই। কারণ তারা মনে করেন, টাকাটাই আসল। টাকার জোরে মানুষকে তারা খুবই অশ্রদ্ধা করেন। যদি বিত্তের ক্ষেত্রে কেউ ক্ষমতাবান হন, তাহলে অনেকসময় রাজনৈতিক ক্ষমতা চলে আসে। রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকলে বিত্তের মালিক হয়ে যাচ্ছে। এর ফলেই সমাজ বা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অবক্ষয় লক্ষ্য করা যায়। এসব সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে সুচিন্তিত পরিকল্পনার মাধ্যমে এগোতে হবে। পরিচিতি : শিক্ষাবিদ ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামÐলীর সদস্য