![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)
শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও বাংলাদেশের আগামীর উন্নয়ন
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/uploads/2023/10/Mamtazuddin-Patwary111-340x400.jpg)
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
জনগণ ইতিহাস সৃষ্টি করে। কিন্তু নিজে নিজে তা পারে না। সে কারণে বলা হয়ে থাকেÑ নেতৃত্ব ব্যতীত জনগণ সুসংগঠিত হয় না, ইতিহাসও সৃষ্টি করা জনগণের পক্ষে একা একা সম্ভব হয় না। ইতিহাসে তাই জনগণ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব অঙ্গাঙ্গী শর্ত। একটিকে ছাড়া অন্যটি পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। দুইয়ের মিলনেই ইতিহাস সৃষ্টি হয়। নেতৃত্ব জনগণকে সংগঠিত করে, পথ দেখায় ও নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়। আবার ভুল, অদক্ষ, অযোগ্য ও প্রতিক্রিয়াশীল নেতৃত্বের খপ্পরে পড়লে জনগণ বিভ্রান্ত হয়। পশ্চাৎপদ মানসিকতা কখনো কখনো ইতিহাসকে উল্টোদিকে ধাবিত করে। সেটাকে আমরা বলি পশ্চাৎপসারণ। অনেক জাতির পিছিয়ে পড়ার পেছনে থাকে ভবিষ্যতকে না দেখার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন তথাকথিত নেতৃত্বের খপ্পরে পড়ার অভিজ্ঞতা। পৃথিবীর ইতিহাসে তেমন অভিজ্ঞতা মোটেও কম নয়, বরং অনেক বেশি। আবার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মেধাবী নেতৃত্বের সুচিন্তিত উদ্যোগের ফলে কোনো জাতিগোষ্ঠী তার জাতীয় জীবনের ইতিহাসে অনেক বড় ধরনের পরিবর্তন, বিপ্লব এবং উল্লম্ফন ঘটিয়ে কম সময়ে অনেক অগ্রগতি সাধন করতে পারে।
আজকের দুনিয়ায় যেসব দেশ অনেক বেশি এগিয়ে গেছে, তাদের মূলেই ছিলো ইতিহাসকে বদলে দেওয়ার মতো রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভ‚মিকা। তবে স্বীকার করতেই হবে উন্নত সব রাষ্ট্রেরও ইতিহাসে পরম্পরা, যোগ্য ও অধিকতর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা সবসময় অক্ষুণœ থাকেনি। যদি থাকতো তাহলে সেসব দেশের উন্নতি সামগ্রিকভাবে আরও অনেক উচ্চতায় আসীন হতো, এতে কোনো সন্দেহ নেই। আবার পৃথিবীতে বহুদেশ কীভাবে পিছিয়ে পড়ে আছে, সেটি তো সকলেরই জানার কথা। যুগকে পরিবর্তন করে দেওয়ার মতো নেতৃত্বের অভাব পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করতেই হবে। এছাড়া পরাধীনতা, উপনিবেশবাদ, পশ্চাৎপদ নানা অনুষঙ্গ জড়িয়ে থাকার কারণে অনেক দেশই পশ্চাৎপদতার বেড়াজাল ছিন্ন করতে পারেনি। ইতিহাসের এই অভিজ্ঞতাকে মোটেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
আমরা ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করতে না পারার অন্যতম প্রধান কারণই ছিলো, একটি জাতি-রাষ্ট্র গঠনের মতো যোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব, আর্থ-সামাজিক পশ্চাৎপদতা এবং আধুনিক স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তোলার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারা। সে কারণেই ব্রিটিশদের তাড়িয়ে আমাদেরকে পাকিস্তানের গোলামিত্ব বরণ করতে হয়েছিলো। এরপর ২৩ বছর নানা সংগ্রাম, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্বকে রাজনৈতিকভাবে চিনতে পারা এবং বঙ্গবন্ধুর মতো আপোসহীন, নির্ভীক, লড়াকু এবং স্বাধীন রাষ্ট্র চিন্তার স্বপ্নদ্রষ্টাকে পাওয়ার কারণেই ২৩ বছরের মাথায় আমরা মুক্তিযুদ্ধের মতো কঠিন জনযুদ্ধকে বরণ করে নিতে পেরেছিলাম। সেখানে বঙ্গবন্ধু নেতা হিসেবে স্বাধীনতার আস্থা তৈরি করতে পেরেছিলেন। বঙ্গবন্ধু এবং তার সুযোগ্য সহকর্মীদের মতো একঝাঁক নেতৃত্ব তৈরি না হলে বাংলাদেশ সত্যিকারের স্বাধীনতা ১৯৭১ সালে অর্জন করতে পারতো কিনা সন্দেহ রয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব আমাদের ছিলো।
বঙ্গবন্ধু ও তার সৃজনশীল রাজনীতি একটি আধুনিক অসাম্প্রদায়িক, উন্নত সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে অবশ্যই সক্ষম হতেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র নির্মাণের পথচলাকে বুঝতে পেরেছিলো। সে কারণেই তারা পঁচাত্তরের হত্যাকাÐ সংগঠিত করে বাংলাদেশকে উল্টো পথে পেছনের দিকে ধাবিত করতেই ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিলো। সে কারণেই দীর্ঘদিন বাংলাদেশ অর্থনৈতিকাভাবে যেমন উন্নতি লাভ করতে পারেনি, সামাজিকভাবেও তেমন কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা নির্বাচিত হয়ে আসার পর বাংলাদেশ নতুনভাবে সম্মুখের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিকল্পনা খুঁজে পেয়েছিলো। বাংলাদেশ পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পরিকল্পনায় পরিচালিত হওয়ার সুযোগ লাভ করেছিলো। সে কারণে ৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যার ক্ষতি কাটিয়েও বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েনি। অনেকগুলো সংস্কার ও ভবিষ্যতমুখী কর্মপরিকল্পনা শেখ হাসিনা শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেগুলো পরিত্যাজ্য হয়েছিলো ২০০১ সালের নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলো তাদের দ্বারা। এরপর ২০০৯ সাল থেকে গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ একটি বদলে যাওয়া দেশে পরিণত হয়েছে।
রূপকল্প-২০২১ ছিলো তার গাইডলাইন। গত ১৫ বছরে কৃষি, শিল্প, ব্যবসাবাণিজ্য, গ্রামীণ অর্থনীতি, খাদ্য উৎপাদন, বিদ্যুতায়ন, ডিজিটালাইজেশন ইত্যাদি খাতে যেসব পরিবর্তন এসেছে, তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশকে বদলে দেওয়ার সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও তার পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করার সক্ষমতাকেই স্বীকার করতে নিতে হবে। এটিই হচ্ছে রাজনৈতিক নেতৃত্বের রাষ্ট্র, সমাজ ও জাতিকে সম্মুখের দিকে এগিয়ে নেওয়ার দূরদর্শী নেতার ঐতিহাসিক ভ‚মিকার সাক্ষাৎ প্রমাণ। শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশটাকে অনেকভাবেই বদলে দিতে পেরেছেন। কিন্তু বলা যাবে না যে এটাই শেষ কিংবা এটাই যথেষ্ট। বরং অনেক পশ্চাৎপদতা এখনো আমাদের জাতীয় জীবনের পিছু ছাড়ছে না। সে কারণেই গোটা সমাজকে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিকভাবে ব্যাপকভাবে পরিবর্তনের ধারায় উন্নীত করার কোনো বিকল্প আমাদের সম্মুখে থাকা উচিত নয়। এখন প্রশ্ন এসেছে যে অগ্রগতি গত ১৫ বছরে আমাদের অর্জিত হয়েছে, সেখান থেকে সামনের দিকে চলার জন্য আমাদের সম্মুখে করণীয় কী? অবশ্যই উত্তর হবে এর ধারাবাহিক পরিবর্তন, উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে একের পর এক নির্ধারণ করা। সেটিকে অর্জন ব্যতীত আমাদের অর্জিত অর্থনৈতিক উন্নতিও ধরে রাখা সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ গত ১৫ বছরের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এখনো অনেক ক্ষেত্রেই টেকসই ভিত্তির ওপর পুরোপুরি দাঁড়াতে পারেনি। আরও অনেক আর্থ-সামাজিক সমস্যার সমাধান ব্যতীত বর্তমান অর্থনৈতিক অগ্রগতি বড় ধরনের বাঁধার মুখে পড়বে যে সেটির বেশকিছু আলামত আমরা এখনই লক্ষ্য করতে পারছি। বিশেষত করোনার দুই বছরের অতিমারি ও ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্কটে আমরা বড় ধরনের চাপে পড়েছি। যে কারণে আমাদের বাজার অস্থিরতায় ভুগছে।
আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ার কারণেই আমাদের পড়তে হয়েছে ডলার সঙ্কটে। তাছাড়া দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, দক্ষতার ব্যাপক ঘাটতি, শিক্ষার মানের সঙ্কট, সাম্প্রদায়িকতা, রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে অনৈক্য ইত্যাদি নানা কারণে আমরা যা কিছু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ পর্যন্ত অর্জন করতে পেরেছি তা এখনো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এক্ষেত্রে আরও অনেক দূর আমাদের যেতে হবে। এর জন্য চাই শেখ হাসিনার ভিশনারি ও মিশনারি নেতৃত্বের সর্বোচ্চ ব্যবহার। তিনি এখনো বেঁচে আছেন এবং যথেষ্ট সক্রিয়ও আছেন। যতোদিন তার কাছ থেকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশের আর্থ-সামাজিক, শিক্ষা-সাংস্কৃতিক এবং বৈশি^ক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার দৃঢ়তা ও ক‚টনৈতিক প্রয়োগগত কৌশল লাভ করা সম্ভব, ততোদিন তাকেই আমাদের ধরেই রাখতে হবে। আগামী দিনের বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অতীতের চাইতে অনেক কঠিন ও জটিল। সেই জটিলতা মোকাবেলা করার মতো নেতৃত্ব ছাড়া কোনোভাবেই বাংলাদেশের মতো দেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশে উত্তরণে সফল হতে পারবে না। কারণ পৃথিবী এখন বড় ধরনের মেরুকরণের জটিলতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে অতি অবশ্যই নেতৃত্বের ভ‚মিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকবে। আগামী দিনের বাংলাদেশও শেখ হাসিনার বিকল্প এখনো কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। এখানেই আমাদের ভয়ের কারণ।
মাঠে অনেকেই রাজনীতি করেন। কিন্তু ভিশনারি-মিশনারি গুণাবলী ছাড়া রাষ্ট্রের সম্মুখে যে হাজারো চ্যালেঞ্জ তা মোকাবেলা করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হবে না। আমাদের ভয়ের কারণটি হচ্ছে যোগ্য নেতৃত্বের অভাব। আমরা প্রত্যাশা করবো তিনি যেন ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে নিশ্চিত উন্নয়নের গতিধারায় বসিয়ে দেওয়ার মতো দেশপ্রেমিক, যোগ্য ও মেধাবী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে দল ও রাষ্ট্রের সর্বত্র অবস্থান নেওয়ার মতো বাস্তবতা তৈরি করতে পারে, একইসঙ্গে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য দক্ষ ইন্সটিটিউশন গড়ে তুলতে পারেন। সেই চ্যালেঞ্জটি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতিকে অবহিত করার মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশটাকে উন্নয়নের মহাসড়কের গতিপথে তিনি যেন বসিয়ে দেওয়ার মতো পরিকল্পনা নিয়ে আরেকটি দিন বদলের সনদের কথা জাতিকে শোনান। শিক্ষা, প্রযুক্তি, গণতন্ত্র, সুশাসন, দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধ, মানবাধিকার, বৈষম্যহীন অর্থনৈতিক উন্নয়ন ইত্যাদি শর্তগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেই আগামীর বাংলাদেশ নিশ্চিত নির্মাণের পথেই হাঁটবে, নতুবা থমকে দেওয়ার অপশক্তি পেছন থেকে টেনে ধরার রয়েছে। আমাদের ভবিষ্যৎ অনেকটাই এখনই দিব্যজ্ঞানে দেখতে হবে ও সুস্পষ্ট করণীয় নিয়ে গত ১৫ বছরের মতো আগামী দিনের বাংলাদেশকে বদলে দিতেই হবে। এটি কেবল শেখ হাসিনার কাছেই আমাদের চাওয়া এবং পাওয়ার আশা করা যেতে পারে।
লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট
![](https://amaderorthoneeti.com/new/wp-content/themes/amader-orthoneeti/img/sky.jpg)