স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কার্গো আমদানির প্রস্তাব ওঠছে ক্রয় কমিটিতে
সোহেল রহমান : [১] বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো লিকুইডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। পেট্রোবাংলা এটি আমদানি করবে। কার্গোটিতে এলএনজির পরিমাণ ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ। সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড এই কার্গো সরবরাহ করবে। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৭ দশমিক ৫৫ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ৭৬২ কোটি ৩৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। বুধবার অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
[২] জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ,শিল্প ও সার কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ বাড়াতে ২০২৩ সালের ফেব্রæয়ারি মাস থেকে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয় করা হচ্ছে। স্পট মার্কেট থেকে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ কার্গোর অতিরিক্ত ৩ কার্গো এলএনজি ক্রয়ের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী (প্রধানমন্ত্রী) নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন।
[৩] সূত্র জানায়, এলএনজি আমদানির জন্য ‘রাস লাফ্ফান লিকুইডিফাইড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি’ (কাতার গ্যাস) এবং ‘ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল’ (বর্তমান নাম ওকিউটি)-এর সঙ্গে দুটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করা হয়েছে। এছাড়া অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র অনুমোদনক্রমে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ২১টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ‘মাস্টার সেল অ্যান্ড পারচেজ’ (এমএসপিএ) চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
[৪] সূত্র জানায়, এক কার্গো এলএনজি আমদানির জন্য পেট্রোবাংলা কর্তৃক দরপ্রস্তাব আহŸান করা হলে ৩টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে এবং ৩টিই রেসপন্সিভ হয়। এরমধ্যে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ১৭ দশমিক ৫৫ ডলার প্রস্তাব করে সর্বনি¤œ দরদাতা হয়। অপর দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেলারেট এনার্জি এলপি কর্তৃক প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির প্রস্তাবিত দর ছিল ১৯ দশমিক ৬৩৫ ডলার এবং সিঙ্গাপুরের পেট্রোচায়না ইন্টারন্যাশনাল (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট লিমিটেড কর্তৃক প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির প্রস্তাবিত দর ছিল ২০ দশমিক ৬৫ ডলার।
[৫] প্রসঙ্গত: গত মাসে (০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩) ক্রয় কমিটিতে অনুমোদিত একই কোম্পানি (ভিটল এশিয়া) থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ৬৪৭ কোটি ৩৫ লাখ ৭ হাজার টাকা। প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দর ছিল ১৪ দশমিক ৯৭ মার্কিন ডলার।
[৬] জানা যায়, স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি’র মূল্য স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে বহুগুনে বেড়ে যাওয়ায় ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ ছিল। চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতির ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতে স্বাভাবিক গ্যাস সরবরাহে বিঘœ ঘটে। গ্যাসের ঘাটতির ফলে শিল্প খাতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্যাস সরবরাহ নির্বিঘœ করতে এবং গ্যাসের উর্ধ্বমূল্য বিবেচনায় প্রয়োজনে বর্ধিত মূল্যে হলেও গ্যাস সরবরাহের জন্য অনুরোধ করা হয়।
[৭] এ অবস্থায় স্পট মার্কেট থেকে উচ্চ মূল্যে এলএনজি আমদানির বর্ধিত ব্যয় নির্দিষ্ট শ্রেণীর ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে আদায়ের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জারিকৃত এসআরও অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ১৪ টাকা ঘনমিটার, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ও শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকা ঘনমিটার এবং বাণিজ্যিক (হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য) ক্ষেত্রে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকা ৫০ পয়সা ঘনমিটার নির্ধারণ করা হয়, যা ২০২৩ সালের ফেব্রæয়ারি থেকে কার্যকর করা হয়েছে।