টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করতে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের মূল্য কমানোর চিন্তা-ভাবনা দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটকের বিনিয়োগে ঘাটতি
সোহেল রহমান : [১] আন্তর্জাতিক মানের টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করতে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের মূল্য কমানোর চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। এ লক্ষ্যে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের মূল্য বর্তমান মূল্যের চেয়ে ১৫ শতাংশ কমানোর একটি পরিকল্পনা করেছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ইন্টারনেটভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সম্প্রসারণ করা হবে।
[২] মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, যত দ্রæত সম্ভব বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপন; আগামী ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে তৃতীয় সাবমেরিন ক্যাবল বাণিজ্যিক ব্যান্ডউইথ বিপণন ও আগামী বছরের (২০২৪ সাল) মধ্যে ৫-জি সেবা চালু করা হবে।
[৩] সূত্র জানায়, দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড-এর বিনিয়োগে ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে রাস্তা খননের কারণে প্রায়-ই বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)-এর অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক সার্ভিস ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। [৪] জানা যায়, বর্তমানে দেশে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯৭ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্ক রয়েছে। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে মোট ব্যান্ডউইথ সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪২০ জিবিপিএস।
[৫] সূত্র জানায়, এছাড়া চলতি বছর থেকে বিভাগীয় শহরগুলোকে পর্যায়ক্রমে স্মার্ট সিটি-তে রূপান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় টেলিযোগাযোগ ও আইটি অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া টেলিকমিউনিকেশন্স কনফরমেন্স টেস্টিং সেন্টার অ্যান্ড টেস্টিং রিজাইম এবং এনএএটিআরটি স্থাপনের জন্য চলমান সম্ভাব্যতা সমীক্ষার আলোকে উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। মন্ত্রণালয়ের ভবিষ্যত পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছেÑ আগামী ২০২৬ সাল নাগাদ প্রযুক্তি নির্ভর মেইল প্রসেসিং ও ই-কমার্স হাব নির্মাণ।
[৬] সূত্র জানায়, প্রযুক্তিগত সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ, সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর মধ্যে প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ফলে আইন, নীতিমালা ও গাইডলাইন যুগোপযোগীকরণ এবং যথাসময়ে নতুন প্রযুক্তির অভিযোজন একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
[৭] অন্যদিকে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভব ডাক অধিদপ্তরকে প্রতিনিয়ত সেবা বহুমুখীকরণের প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ ও আইসিটি সামগ্রীর স্বল্পতা রয়েছে। ডাক বিভাগের উন্নয়নের জন্য ডিজিটাইজেশন, কৃষিভিত্তিক ও পচনশীল পণ্য সরবরাহে ব্যবসায়িক মডেল, চিঠি ও পার্সেল পরিবহনে ব্যবসায়িক মডেল এবং স্বয়ংক্রিয় ডাক প্রক্রিয়াকরণ বিষয়ে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
[৮] সূত্র জানায়, টেলিযোগাযোগ ও ডাক সেবা নিশ্চিতকরণে বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু কার্যক্রম ও প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সম্পাদনের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ জিপিওএন সংযোগ ৮২ হাজার ৮০০ (ক্রমপুঞ্জিভূত)-তে উন্নীত করা এবং ৬৯০ জিবিপিএস (ক্রমপুঞ্জিভূত) টান্সমিশন ব্যাক হোল সেবা প্রদান; ১ হাজার ৫০০টি ল্যাপটপ উৎপাদন/সংযোজন; ১০ হাজার কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল এবং ২ হাজার কিলোমিটার এইচডিপিই ডাক্ট উৎপাদন-পূর্বক সরবরাহ; সাবমেরিন ক্যাবলের ব্যান্ডউইথ-এর বিক্রয় বাড়ানো; ৪-জি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং নতুন গ্রাহক বাড়ানোর জন্য ৮৫০টি ই-নোড-বি স্থাপন করা; অভ্যন্তরীণ ডাকের ট্রাকিং এবং ট্রেসিং সুবিধা সম্বলিত ডাকঘরের সংখ্যা বাড়িয়ে ২ হাজার ১০-এ উন্নীত করা ইত্যাদি।