৩ মাসে সবুজ ও টেকসই খাতে ঋণ বিতরণ ৪০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা
এস.ইসলাম জয় : [১] চলতি বছরের এপ্রিল-জুন মাসে সবুজ ও টেকসই খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে মোট ৪০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। গত বছর হয়েছিল ৩৪ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। এ বছর জুন প্রান্তিকে এখাতে বিতরণ বেড়েছে ৬ হাজার ১৩২ কোটি টাকা।
[২] ২০২২ সালের তুলনায় চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে সবুজ ও টেকসই আর্থিক খাতে ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ বিতরণ ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
[৩] এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ এর মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় জুন প্রান্তিকে এই দুই খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১১৬ কোটি টাকা। এই বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। যদিও ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম ধীর হওয়ায় আগামী প্রান্তিকে ঋণ বিতরণ কমে আসবে।
[৪] টিবিএস এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় শিল্প কারখানাগুলোর মেশিনারিজ আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে ওই প্রান্তিকে। এখন দেশে নির্বাচনকালীন বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা ও ডলার সংকটে আমদানি ব্যাপক কমেছে। যা আগামী সময়ে এসব খাতের ঋণের প্রবাহ অনেক কমাবে। চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যের অর্ডারও প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। যার ফলে নতুন করে শিল্প কারখানা ও ক্যাপিট্যাল মেশিনারিজ আমদানি অনেকটা কমে গেছে। সামনের এই খাতে বিনিয়োগ আরও কমবে।
[৫] ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের ৫ শতাংশ গ্রিন ফাইন্যান্স ও ২০২০ শতাংশ সাসটেইনেবল ফাইন্যান্সিং করার নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বলছে, গ্রিন ফাইন্যান্সিংয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিতরণ করেছে ৩ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা এবং সাসটেইনেবলে হয়েছে ৩৬ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার যথাক্রমে ৬.১৬ এবং ১৩.১৬ শতাংশ।
[৬] গেল আগষ্টের তথ্য অনুযায়ী, পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে মার্চ প্রান্তিকে তার আগের প্রান্তিকের চেয়ে অর্থায়ন কমেছে এক হাজার ৬২ কোটি টাকা। একই সময়ে টেকসই খাতে ৪ হাজার ৪০৯ কোটি টাকার অর্থায়ন কমেছে।
[৭] অনিয়ন্ত্রিত কার্বন নিঃসরণে বাড়ছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি। বাড়ছে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, নদীভাঙন, জলাবদ্ধতা ও পানি বৃদ্ধি এবং মাটির লবণাক্ততা। ঝুঁকিগুলোকে শনাক্ত করে তা বন্ধে শুরু হয়েছে নানামুখী কার্যক্রম। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছিলো বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেই (জানুয়ারি-মার্চ) হঠাৎ করে এই খাত দুটিতে বিনিয়োগ কমিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
[৮] ঝুঁকি কমাতে এই দুই খাতে অর্থায়নের লক্ষ্য বেঁধে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ২০২২ সালেও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব খাতে অর্থায়নে নজর বাড়িয়েছিল। এ বছরের মার্চ শেষের হিসাবে বিনিয়োগ কমেছে এসব খাতে। তবে বর্তমানে এখন দেশের অনেক ব্যাংকের শাখা ও এটিএম বুথে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে।
[৯] কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে ৩৬ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকগুলো অর্থায়ন করেছে ৩৫ হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। একই সময়ে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে ব্যাংকগুলো দুই হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে, যা ব্যাংকগুলোর মোট মেয়াদি ঋণের চার দশমিক ১৬ শতাংশ।
[১০] এদিকে মার্চ প্রান্তিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে এক হাজার ৩০৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এছাড়া পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে আট হাজার ৩৯ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে, যা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট মেয়াদি ঋণের ১৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
[১১] বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফিন্যান্স পলিসি অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো সাসটেইনেবল ফিন্যান্সের ১১টি ক্যাটাগরিতে মোট ৬৮টি পণ্যের বিপরীতে ঋণ দিতে পারে। এসব পণ্যের অধিকাংশই সবুজ অর্থায়নের অন্তর্ভুক্ত।
[১২] টেকসই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কৃষি, সিএমএসএমই, পরিবেশবান্ধব কারখানা, সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল প্রকল্পে অর্থায়ন। যদিও চলমান ঋণের ২০ শতাংশ টেকসই প্রকল্পে দেওয়ার নির্দেশ আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। এদিকে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন, বর্জ্য পরিশোধনাগার বা ইটিপি নির্মাণ, পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদন অন্যতম। এই খাতে মোট মেয়াদি ঋণের পাঁচ শতাংশ ঋণ দেওয়ার শর্ত রয়েছে।