সার-সংক্ষেপে গাড়ির মূল্য উল্লেখ করা হয়নি ক্রয় কমিটির সুপারিশকৃত ২৬১টি জীপ কেনার প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর ছয় প্রশ্ন
সোহেল রহমান : [১] সম্প্রতি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশকৃত/অনুমোদিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২৬১টি জীপ (অনুর্ধ্ব ২৭০০ সিসি) ক্রয়ের প্রস্তাবে কয়েকটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চেয়ে একটি ‘নোট’-ও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
[২] উল্লেখ্য, গত ১১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ২৬১টি জীপ কেনার একটি প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবটি প্রথমে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে অনুমোদিত হয় এবং এর পরপরই সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটি উপস্থাপন ও অনুমোদন দেয়া হয়।
[৩] জানা যায়, সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে এসব জীপ কেনা হবে। প্রতিটি গাড়ির দাম পড়বে ১ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। সে হিসাবে ২৬১টি জীপ ক্রয়ে মোট (ট্যাক্স, ভ্যাট ও রেজিস্ট্রেশনসহ) ব্যয় হবে ৩৮১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
[৪] সূত্র মতে, মন্ত্রিসভা কমিটি-তে সুপারিশকৃত/অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। এমতাবস্থায় প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হলে ক্রয় প্রস্তাবের সার-সংক্ষেপে তিনি বেশ কয়েকটা বিষয় পরিস্কার করার নির্দেশ দেন। এ-সংক্রান্ত একটি নোটে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেনÑ ২৬১টি গাড়ী কিনতে কী পরিমাণ অর্থ প্রয়োজন? জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ে কি কোন গাড়ি নেই? কোথায় ও কয়টা গাড়ি আছে? সমাপ্ত প্রকল্পে ব্যবহার করা গাড়িগুলো কি আছে এবং সেগুলো কী কী কাজে ব্যবহার করা হচ্ছেÑ জানতে চাই। গাড়ী ক্রয়ের প্রস্তাবে মূল্য উল্লেখ করা হয় নাই কেন?
[৫] মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ক্রয় ও অর্থনৈতিক অধিশাখা থেকে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন সম্বলিত এ নোট ইতোমধ্যেই জনপ্রশাসন বিভাগ-এর সিনিয়র সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
[৬] জানা যায়, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি চলমান থাকাকালীন সময়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২৬১টি জীপ কেনার প্রস্তাবটি বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে।
[৭] চলতি অর্থবছরের ২ জুলাই অর্থ বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত ‘২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের কতিপয় ব্যয় স্থগিত/হ্রাসকরণ ও বিদেশ ভ্রমণ সীমিতকরণ’ শীর্ষক পরিপত্রে বলা হয়েছে, পরিচালন বাজেটের আওতায় মোটরযান (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১১২১০১), জলযান (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১১২১০২) ও আকাশযান (অর্থনৈতিক কোড নং ৪১১২১০৩) খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে ১০ বছরের অধিক পুরোনো মোটরযান প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। অন্যদিকে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সকল প্রকার যানবাহন (মোটরযান, জলযান ও আকাশযান) ক্রয় বন্ধ থাকবে।
[৮] গাড়ি কেনার প্রস্তাবের সপক্ষে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা; মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাসহ সরকারি কাজের গতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে রাষ্ট্রীয় জরুরী প্রয়োজনে এসব গাড়ি কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকারি কাজের গতিশীলতা বজায় রাখাতে যেসব গাড়ির আয়ুস্কাল ১৪ বছর বা তদুর্ধ্ব এবং ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে; তার প্রতিস্থাপক হিসেবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ব্যবহারের জন্য ২৬১টি জীপ গাড়ি ক্রয় করা হবে।
[৯] জীপ ক্রয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতির কথা জানিয়ে প্রশাসন মন্ত্রণালয় আরও জানায়, এ জন্য বাজেট থেকে ৩৮০ কোটি ৬৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।