কারখানা চালু রাখতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা চাইলেন বিজিএমইএ’র সভাপতি
মো. আখতারুজ্জামান : [১] তৈরি পোশাক শিল্প কারখানায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে সরকারের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ, এ শিল্পকে নিয়ে যারা চক্রান্ত করছে, তাদেরকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিন। সেই সঙ্গে শিল্প-কারখানা চালানোর জন্য আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিন। [২] রোববার পোশাক শিল্পে নূন্যতম মজুরি ও বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
[৩] তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত ২৫টি ফ্যাক্টরিতে ভাঙচুরের ঘটনা এবং ১৩০টি ফ্যাক্টরি বন্ধ আছে। নবায়নকৃত ২ হাজার ৩৩৯টি কারখানার মধ্যে মাত্র ১৬০০টি কারখানা ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি অর্ডার এনে কাজ করছে। বাকি ৭৩৯ কারখানা দেনা ও দায়ের কারণে সরাসরি ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খুলতে পারছে না। তারা সাব-কন্টাক্টে কাজ করে।
[৪] ফারুক হাসান বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বলা হচ্ছে, ইপিলিয়ন কারখানায় ৩ জন মারা গেছে; যা মোটেও সত্য নয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সরকারের প্রতি আমাদের একান্ত অনুরোধ, যারা এ ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ, এ শিল্পকে নিয়ে যারা চক্রান্ত করছে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিন। সেইসঙ্গে শিল্প-কারখানা চালানোর জন্য আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিন।
[৪] রাজনীতি ও অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী বলেন, আমরা যখন বৈশ্বিক ও আর্থিক- এই দ্বিমূখী চাপের মধ্যে থেকেই টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছি, ঠিক তখন শিল্পকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা অপতৎপরতা। বিশেষ করে আমাদের শান্ত শ্রমিক গোষ্ঠীকে উসকানি দিয়ে অশান্ত করা হচ্ছে।
[৫] মজুরি বাড়ানোর পরও আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় কারখানা ভাঙচুর করা হচ্ছে অভিযোগ করে ফারুক বলেন, মজুরি ঘোষণার পর থেকে বেশ কিছু কারখানায় অজ্ঞাতনামা কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক অযৌক্তিক দাবিতে বেআইনিভাবে কর্মবিরতি পালন করে কর্মকর্তাদের মারধর করেছে। কারখানার ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
[৬] তিনি জানান, ২০১০ সালে নূন্যতম মজুরি ৩ হাজার টাকা করেছিলাম। ২০১০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত পোশাক শিল্পে মজুরি বৃদ্ধির হার হচ্ছে ৩১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সরকার গঠিত নূন্যতম মজুরি বোর্ড নূন্যতম মজুরি পর্যালোচনা করে ৭ নভেম্বর নূন্যতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা ঘোষণা করেছে। নতুন মজুরি কাঠামো অনুযায়ী মজুরি ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়েছে।
[৭] ফারুক হাসান বলেন, কিছুদিন ধরে পোশাক শিল্প অধ্যুষিত কিছু কিছু এলাকার স্বাভাবিক শ্রম পরিস্থিতি নেই। এ শিল্প বর্তমানে এক সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে না দাঁড়াতে শুরু হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এরই মধ্যে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে আবারও ঘোরতর অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়ে আমাদের দেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে পোশাক শিল্পের জন্য নতুন আরেকটি শঙ্কার সৃষ্টি করেছে।
[৮] তিনি বলেন, চলতি ২০২৩ (পঞ্জিকা বছর) এর প্রথম ৯ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক পোশাক আমদানি ভ্যাল্যুতে কমেছে ২২ দশমিক ৮১ শতাংশ, যেখানে বাংলাদেশ থেকে তাদের আমদানি কমেছে প্রায় ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। একই সময়ে সারা পৃথিবী থেকে পরিমানে আমদানি কমেছে ২৫ দশমিক ১৬ শতাংশ, আর বাংলাদেশ থেকে কমেছে ২৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। শুধুমাত্র আগস্টেই বাংলাদেশ থেকে ভ্যালুতে কমেছে ৩৩ দশমিক ৭১ শতাংশ,ও সেপ্টেম্বরে ৩৪ দশমিক ৭২ শতাংশ ।
[৯] চলতি ২০২৩ সালের প্রথম ৮ মাসে ইউরোপের বৈশ্বিক আমদানি কমেছে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং বাংলাদেশ থেকে কমেছে ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ, শুধু আগস্ট মাসেই কমেছে ২৬ দশমিক ০৬ শতাংশ।
[১০] তিনি বলেন, ২০২৩ সালের অক্টোবরে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি অক্টোবর ২০২২ এর তুলনায় ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে পোশাক রফতানির কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রকৃত রপ্তানি পারফরমেন্স ২৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ নিচে নেমে এসেছে।
[১১] এই নেতা জানান, স¤প্রতি বৈশ্বিক বিভিন্ন কারণের জেরে পোশাক শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে। বিগত ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সময়ে গ্যাসের মূল্য বেড়েছে ২৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বিদ্যুতের মূল্য বেড়েছে ২১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত ৫ বছরে পোশাক শিল্পে উৎপাদন ব্যয় প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। শুধু তাই নয়, উন্নত দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাংক সুদের হার বাড়ানো হয়েছে, এর ফলে আমাদের ক্রেতাদেরও কস্ট অব ফান্ড বেড়ে গেছে, যার চাপ বহন করতে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। ২০১৩ সাল থেকে প্রতিবছরই নিয়মিতভাবে ন্যূনতম ৫ শতাংশ হারে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে কেন্দ্রীয় তহবিল কার্যকর করা হচ্ছে, যা শ্রমিকদের নানামুখি কল্যাণে ব্যয় করা হয়। এই তহবিলের অর্থ শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় হচ্ছে।