
সৌদি আরব থেকে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ তুলে নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা

অর্থনীতি ডেস্ক : [১] সৌদি আরব থেকে বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। সৌদি আরবের যে ব্যবসাবান্ধব ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছিল, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে সংঘাত শুরু হওয়ার পর তাতে চিড় ধরেছে। সে কারণেই এই বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার হিড়িক। [২] রয়টার্সের খবরে জানানো হয়, সৌদি আরবের স্টক মার্কেটের খোঁজখবর রাখে এমএসসিআই সৌদি অ্যারাবিয়া ইটিএফ। তাদের তথ্যানুসারে, সৌদি আরব থেকে গত অক্টোবর মাসে রেকর্ড পরিমাণ ২০০ মিলিয়ন বা ২০৯ কোটি ডলার বেরিয়ে গেছে। [৩] শুধু সৌদি আরব নয়, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের মতো দেশ থেকেও বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। অর্থাৎ হামাস-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে বিনিয়োগকারীরা পুরো অঞ্চল সম্পর্কেই সন্দিহান। সে জন্য বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন তারা। [৪] তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিনিয়োগ প্রত্যাহার অনেক ক্ষেত্রেই নিছক অর্থনীতির মৌলভিত্তি অনুসারে করা হয় না। এখন একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে এ অঞ্চলে ঝুঁকি বাড়ছে, যে কারণে তার নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। [৫] কাতারের আইশেয়ার্স এমএসসিআই ইটিএফ থেকে অক্টোবর মাসে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৭ দশমিক ৭ মিলিয়ন বা ৭৭ লাখ ডলার তুলে নিয়েছেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে তুলে নিয়েছেন ২০ লাখ ৭৪৫ হাজার ডলার। এ ছাড়া হামাসের হামলার পর ইসরায়েলের আইশেয়ার্স এমএসসিআই ইটিএফ থেকে বিনিয়োগকারীরা ২৫ লাখ থেকে ৯৩ লাখ ডলার তুলে নিয়েছেন।
[৬] অক্টোবর মাসে ইসরায়েল ও উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে যে পরিমাণ বিনিয়োগ চলে গেছে, তা উদীয়মান অন্যান্য অঞ্চলের গড়ের চেয়ে বেশি। চলতি বছর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ইসরায়েলের বাজার সংকটের মধ্যে পড়ল। এর আগে দেশটির বিচার বিভাগের সংস্কারের কারণেও বাজার সংকটে পড়েছিল। [৭] বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইসরায়েল একসময় প্রযুক্তি বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে পরিচিত ছিল, দেশটির এই ভাবমূর্তি বড় ধাক্কা খেয়েছে। বিনিয়োগকারীদের এই উদ্বেগ শিগগিরই দূর হচ্ছে না। তবে ইসরায়েলে হামলার পরপরই যে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, সেখান থেকে কিছুটা উত্তরণ হয়েছে। [৮] রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, ইটিএফ থেকে বিনিয়োগ চলে যাওয়ার অর্থ হলো, বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেছে। যদিও মধ্যপ্রাচ্য বিস্ময়করভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা রাখে। এদিকে ইসরায়েলের মুদ্রা শেকেল ও দেশটির বন্ড বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। উপসাগরের অন্যান্য দেশের বন্ডে ইসরায়েল-হামাস সংকটের তেমন প্রভাব পড়েনি। [৯] ইউনিয়ন ইনভেস্টমেন্টের পোর্টফোলিও ব্যবস্থাপক সের্গেই দের্গাচেভ বলেছেন, সংকটের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন বন্ড ছাড়ার হার কমেনি। উদাহরণ হিসেবে সৌদি আরবের সুকুক বন্ডের কথা বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কৌতুহলোদ্দীপক বিষয় হলো, এখানে ঝুঁকি ছড়িয়ে পড়ার ভীতি তেমন একটা নেই। [১০] বিনিয়োগকারীরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশ কিছু বিশৃঙ্খলা সহ্য করার মতো জায়গায় আছে, অর্থাৎ তাদের সেই শক্তি আছে। তেলের দাম স¤প্রতি কমলেও হামাসের হামলার পর বেড়েছিল। তবে সামগ্রিকভাবেই তেলের দাম কিছুটা বাড়তি, সেই সঙ্গে ইসরায়েলের ২০০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে।
[১১] কিন্তু ইকুইটি বিনিয়োগকারীদের এভাবে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার ঘটনায় বোঝা যায়, নতুন করে সংঘাত শুরু হওয়ার ঝুঁকি কিছুটা হলেও আছে এবং তাদের অর্থনীতির বহুমুখীকরণ নিয়েও ঝুঁকি থেকে যায়।
[১২] বিশ্লেষকেরা বলছেন, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর যে চেষ্টা করছিল, সংঘাত দীর্ঘায়িত হলে সেই প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। তবে ইসরায়েলের জন্য বড় প্রশ্ন হচ্ছে, তারা যে যুদ্ধংদেহী অবস্থান নিয়েছে, এরপর কী হবে। সূত্র : রয়টার্স
