শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে রয়েছে বাড়ি ভাড়া চিকিৎসা যাতায়াত খাদ্য ভাতা
মো. আখতারুজ্জামান : [১] দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বমূখীতায় গার্মেন্টস শ্রমিকরা তাদের বেতন ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে দীর্ঘ দিন থেকে আন্দোলন করে আসছে। এই আন্দোলনে তিনজন শ্রমিক পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
[২] শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা সরকার ও শ্রেমিক নেতাদের সঙ্গে বসে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ১২ হাজার ৫০০ এবং সর্বোচ্চ মজুরি ১৪ হাজার ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা এবং খাদ্য ভাতা রয়েছে। বছরে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট থাকবে। পাশাপাশি প্রতিটি পরিবার পাবে একটি করে ফ্যামিলি কার্ড। মোট বেতনের ৬৩ শতাংশ পাবেন বেসিক হিসেবে। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে কারখানা ভেদে এই সুযোগ সুবিধা বেশি হয়ে থাকে।
[৪] গত রোববার নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা স্বাক্ষরিত এ গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে। শ্রেণির শ্রমিক-কর্মচারীর নিম্নতম মজুরি হারের খসড়া সুপারিশের ওপর যদি কারো কোনো আপত্তি বা সুপারিশ থাকে তাহলে সেটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৪ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে নি¤œতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠাতে হবে। সময়সীমার মধ্যে কারো আপত্তি বা সুপারিশ থাকলে সেটি বিবেচনার পর বোর্ড সরকারের কাছে এটি কার্যকর করার জন্য সুপারিশ করবে। পরবর্তিতে নির্বাহী ক্ষমতা বলে সরকার প্রধান এতে স্বাক্ষর করবেন।
[৫] বিজিএমইএর পরিচালক ও ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জানান, ১২ হাজার ৫০০ টাকা যে বেতন সেটা সর্বোনিম্ন। কারখানা ভেদে শ্রমিকরা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পেয়ে থেকেন।
[৬] অন্যদিকে অ্যাডিডাস, হুগো বস ও পুমার মতো আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি সম্পর্কে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যে চিঠি দিয়েছিল। সে ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে পোশাকশিল্প মালিকদের সমিতি বিজিএমইএ। এসব ব্র্যান্ডের প্রতিনিধি হিসেবে আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনকে (এএএফএ) লেখা চিঠিতে বিজিএমইএ মজুরিবৃদ্ধির বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করেছেন।
[৭] চিঠিতে ফারুক হাসান বলেন, দেশের পোশাকশিল্প মালিকেরা নতুন মজুরি বাস্তবায়ন করবেন। সে জন্য ক্রেতাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে যেসব পণ্য জাহাজীকরণ করা হবে, নতুন মজুরির আলোকে তার মূল্য সমন্বয় করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া এখন থেকে যত ব্যবসায়িক চুক্তি করা হবে, তা এই নতুন ন্যূনতম মজুরির সাপেক্ষে করতে হবে বলে উল্লেখ করেন বিজিএমইএ সভাপতি।
[৮] চিঠিতে নেইট হারমানকে জানানো হয়, পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ টাকা বা ১১৩ দশমিক ৬৩ মার্কিন ডলার। শ্রমিকদের মোট মজুরি বেড়েছে ৫৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। এবার শ্রমিকদের মূল মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে মোট মজুরির ৬৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। এর ফলে শ্রমিকদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়বে।
[৯] প্রকাশিত গেজেটের তথ্য অনুযায়ী, গ্রেড-১-এর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ১৪ হাজার ৭৫০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৮ হাজার ২০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৪ হাজার ১০০, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০, যাতায়াত ভাতা ৪৫০ এবং খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা।
[১০] গ্রেড-২-এর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ১৪ হাজার ১৫০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৭ হাজার ৮০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৩ হাজার ৯০০, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০, যাতায়াত ভাতা ৪৫০ এবং খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা।
[১১] গ্রেড-৩-এর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ১৩ হাজার ৫৫০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৭ হাজার ৪০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৩ হাজার ৭০০, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০, যাতায়াত ভাতা ৪৫০ এবং খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা।
[১২] গ্রেড-৪-এর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ১৩ হাজার ২৫ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৭ হাজার ৫০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৩ হাজার ৫২৫, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০, যাতায়াত ভাতা ৪৫০ এবং খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা।
[১৩] একইভাবে গ্রেড-৫-এর শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি হবে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি ৬ হাজার ৭০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৩ হাজার ৩৫০, চিকিৎসা ভাতা ৭৫০, যাতায়াত ভাতা ৪৫০ এবং খাদ্য ভাতা ১ হাজার ২৫০ টাকা।