আকাশপথে যাত্রী পরিবহনে রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে
অর্থনীতি ডেস্ক : [১] বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মৌসুমের কারণে বছরের নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলে পর্যটন মৌসুম। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই সময়ে বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে তাই ভীড়ও থাকে বেশি।
[২] তবে, মৌসুম শুরু হলেও এ বছর আকাশপথে যাত্রী পরিবহনে অন্য বছরের তুলনায় ভাটা পড়েছে। মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতা তথা হরতাল অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণেই এ পরিস্থিতি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল মঙ্গলবার দেশীয় এয়ারলাইনসগুলোর দায়িত্বশীল প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। দেশি এয়ারলাইনসগুলো বলছে, অবরোধের মধ্যে আকাশপথে যাত্রী কমেছে গড়ে ১৫-২০ ভাগ। হরতাল-অবরোধ আতংকে অনেকেই এখন বেড়াতে বের হচ্ছেন না। যার প্রভাব পড়েছে এয়ারলাইনসগুলোর যাত্রী পরিবহনে।
[৩] দেশের অন্যতম বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস-বাংলা বলছে, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় তাদের যাত্রীসংখ্যা কমেছে অন্তত ১০ থেকে ১৫ ভাগ।
[৪] ইউএস-বাংলার জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, অবরোধের প্রভাব থাকা সত্তে¡ও আমরা কোনো রুটেই ফ্লাইট কমাইনি। তবে, আগে এই সময়ে আমাদের লোড ফ্যাক্টর ৭০ থেকে ৭৫ থাকলেও এ বছর অবরোধের প্রভাবে আমাদের যাত্রী সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ ভাগের মতো কমে গেছে।
[৫] তিনি বলেন, এই সময়ে স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এরপর সাধারণত মানুষ পরিবার নিয়ে বেড়াতে যায়। অন্যান্য বছর এই সময়ে অগ্রিম টিকেট বিক্রি হতো যেভাবে, এ বছর সেভাবে হচ্ছে না। একটি এয়ারপোর্ট থেকে অন্য এয়ারপোর্ট ট্রাভেল করা যাচ্ছে। কিন্তু ঘর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত আসা বা এয়ারপোর্ট থেকে গন্তব্যে যাওয়ার ক্ষেত্রে যাত্রীদের মধ্যে শঙ্কা আছে।
[৬] দেশের নবীনতম বেসরকারি এয়ারলাইনস এয়ার অ্যাস্ট্রা বলছে, গত দুই সপ্তাহে তাদের যাত্রীসংখ্যা কমেছে ২০ থেকে ৩০ ভাগ।
[৭] এয়ারলাইনসটির জনসংযোগ বিভাগের উপব্যবস্থাপক সাকিব হাসান শুভ বলেন, নভেম্বর থেকে পর্যটকদের একটি স্বাভাবিক চাপ আকাশপথে থাকে। এটা এবার নেই। গত দুই সপ্তাহে আমাদের যাত্রী কমেছে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ ভাগ। যেমন অন্যান্য বছর কক্সবাজার রুটে এই সময়ে টিকিট পাওয়াই দায় হয়ে যায়, সেখানে এবছর যাত্রী অনেক কম। যার ফলে সৈয়দপুর, কক্সবাজারের মতো রূটে আমাদের ফ্লাইটগুলো খালি যাচ্ছে, আমাদের ফ্লাইট মার্জ (একত্রীকরণ) করতে হচ্ছে।
[৮] জানতে চাইলে দেশের আরেক বেসরকারি এয়ারলাইন্স নভোএয়ারের বাজারজাতকরণ ও বিপণন বিভাগের প্রধান মেসবাহ উল ইসলাম বলেন, অবরোধের প্রভাবে আমাদের যাত্রী অনেক কমেছে। পর্যটন মৌসুম হলেও আমাদের অন্তত ২০-২৫ ভাগ যাত্রী কমেছে।
[৯] প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবর তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা ও সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ ডাকে বিএনপি। এতে যোগ দেয় সমমনা দলগুলোও। এদিন সমাবেশ শুরুর আগেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় দলটির নেতা-কর্মীরা। পÐ হয় সমাবেশ।
[১০] এরই জের ধরে পর দিন সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। পরে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিনদিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি। এরপর থেকে ১/২ দিন বিরতি দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। সর্বশেষ, গতকাল রাতে পঞ্চম দফায় বুধবার সকাল ছয়টা থেকে শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত মোট ৪৮ ঘণ্টা দেশব্যাপী রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। সূত্র : বাংলানিউজ