সবজি মুরগি ও ডিমের দাম কমলেও বেড়েছে চালের দাম
মাসুদ মিয়া: [১]রাজধানীসহ সারাদেশে সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। শীতকালীন সবজির সরবরাহ যথেষ্ট পরিমাণ থাকায় কমেছে দাম। গত কয়েক মাস ধরেই নিত্যপণ্যের বাজারে কোনো স্বস্তির খবর আসছিল না। সবকিছুর দামই শুধু বেড়েই চলছিল। [২] গত সপ্তাহে এসে ডিম, মুরগির ও সবজির বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। ডিমের হালি যেখানে ৫৫-৬০ টাকায় ঠেকেছিল, এখন হালি নেমেছে ৪৫ টাকায়। মূলত আমদানিকৃত ডিম দেশে আসায় দাম কমেছে। এছাড়া সরবরাহ বাড়ায় মুরগি ও সব ধরণের সবজির দাম কমেছে। তবে নতুন করে বেড়েছে চালের দাম। পাইকারি বাজারে বস্তা প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা এবং খুচরা বাজারে কেজিতে ২-৩ টাকা দাম বেড়েছে চালের। [৩]গতকাল বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
ডিম সরবরাহ বড়েছে। তার প্রভাবেই দাম কেমেছে। ১৩ টাকা পিসের ডিম এখন ১১ টাকায়, ৫৫ টাকা হালি, এখন ৪৫ টাকা হয়েছে এবং ১৬০ টাকা ডজন এখন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় নেমেছে। এদিকে মাস খানেক আগেও যেখানে ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকায় ঠেকেছিল, এখন ব্রয়লার মুরগি নেমেছে ১৭০-১৮০ টাকায়। এছাড়া কক বা সোনালি মুরগি ২৭০-২৮০, লেয়ার মুরগি ২৮০, দেশি মুরগি ৫৫০, গরুর মাংস ৬৫০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
[৪]খামার মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, মুরগির সরবরাহ বেড়েছে অন্যদিকে, অবরোধের কারণে কমেছে চাহিদা। এখন সামাজিক অনুষ্ঠান কমে যাওয়ায় মুরগির চাহিদা কমেছে। সে জন্য দাম নিম্নমুখী।
মতিঝিল বাজারের মুরগি বিক্রেতারা বলেন, অবরোধে কোনো অনুষ্ঠান নেই, মানুষ নেই। বিক্রি অনেক কমে গেছে। যে কারণে দাম কমছে।
[৫]অন্যদিকে, টিসিবি বলছে, বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৬৫ থেকে ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের থেকে প্রতিকেজি ১০ টাকা কম। আর মাসের ব্যবধানে ২৫ টাকা কমেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজির বাজারে শিম ৫০-৬০, শালগম ৫০-৬০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৯০-১০০, টমেটো ১২০, পেঁয়াজ পাতা ১০০-১২০, মুলা ৪০-৫০, গাজর ১২০, লম্বা বেগুন ৫০, সাদা গোল বেগুন ৬০, কালো গোল বেগুন ৬০, শসা ৫০- ৬০, করল্লা ৬০, পেপে ৩০-৪০, পটল ৫০-৬০, মিষ্টি কুমড়া ৫০ , ঢেঁড়স ৫০, চিচিঙ্গা ৫০-৬০, ধুন্দল ৫০, বরবটি ৬০, কচুর লতি ৬০, কচুরমুখী ৬০, কাঁচা মরিচ ১৬০, ধনেপাতা ১২০-১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিটি লাউ ৫০-৭০ টাকা, ফুলকপি ৩০-৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৫০ টাকা ও চাল কুমড়া ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
কলতা বাজারের সবজি বিক্রেতা সাদ্দাম বলেন, বাজারে সবজির সরবরাহ ভালো আছে। প্রতি কেজির সবজির দাম গত ২-১ সপ্তাহের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। ক্রেতারাও স্বস্তিতে ব্যাগ ভর্তি করে খুশি মনে বাজার করে নিয়ে যাচ্ছেন। সামনে এক মাসের মধ্যে আরও কমবে।
এদিকে আমদানির খবরে কিছুটা কমেছে আলুর দাম। এখনো বাড়তি দামে রয়েছে পেঁয়াজ। একশ’ টাকার নিচে কোনও পেঁয়াজ নেই। বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ১২০-১৩০, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০, লাল ও সাদা আলু ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিকেজি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। আলু কেজিতে ভোক্তা পর্যায়ে ৩৫-৩৬ টাকা ও কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৬-২৭ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু আলু-পেঁয়াজ আমদানির পরও সরকার এই দামে দিতে পারেনি ভোক্তাদের। এছাড়া ভারতীয় আদা ২২০ টাকা, দেশি রসুন ২০০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতারা বলেন, আলুর দাম কিছুটা কমেছে। তবে সামনে আরও কমবে। নতুন পেঁয়াজ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাজাওে আসবে তখন দামও কমবে। মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৫০০-১৬০০ টাকা, রুই মাছ ৩০০-৪৫০, কাতল মাছ ৩০০-৪৫০, কালিবাউশ ৪০০-৬০০, চিংড়ি মাছ ৬০০-১২০০, কাঁচকি মাছ ৫০০-৬০০, পাবদা মাছ ৫০০-৬০০, শিং মাছ ৪০০-৫০০, বেলে মাছ ৫০০-৮০০ টেংরা মাছ ৬০০-৮০০, বোয়াল মাছ ৫০০- ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মসুর ডাল ১৩০-১৪০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১০০-১০০ টাকা, মুগ ডাল ১৪০ টাকা, খেসারি ডাল ৯৫ টাকা, বুটের ডাল ৯০ টাকা, ছোলা ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে আগের মতোই। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, চিনি ১৪০-১৪৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে গত কয়েক মাস চালের দাম স্থিতিশীল থাকলেও গত সপ্তাহে এসে দাম বেড়েছে সব ধরণের চালে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর পাইকারি বাজারে চিকন ও মোটা চালের দাম বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। একই সময়ে মোটা চালের দাম খুচরা বাজারে কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের পছন্দের মোটা চাল ব্রি-২৮ মানভেদে দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে কেজিপ্রতি ৫৭ থেকে ৫৮ টাকা। বাজারে মিনিকেট বলে পরিচিত চিকন চাল মানভেদে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭২ টাকা এবং নাজিরশাইল মানভেদে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এবিষয়ে মতিঝিল এজিবি কোলনী বাজারের ক্রেতা খালেদা আক্তার বলেন , কয়েক মাস চড়া দামে থাকার পর সবজির দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তিনি বলেন, গত এক মাস আগে এক কেজি বেগুন ১২০ টাকা হয়েছিল এখন সেখানে ৫০ টাকা কেজি বেগুন পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি অধিকাংশ সবজির দাম কমেছে এটা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য ভালো খবর। সামনে সবজির দাম আরও কমবে আশা করি। তবে পেঁয়াজের দাম এখনো ক্রেতাদের হাতের নাগালে আসেনি।এখনো বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মনে করেন এই ক্রেতা।